ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাধীনতা নিয়ে সিকৃবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশনার সময়: ২৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:৩৯ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:৪৪
ছবি- নয়া শতাব্দী

২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে এই কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে স্বাধীনতা নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ভাবনার কথাগুলো নয়া শতাব্দীর অনলাইনে তুলে ধরছেন প্রতিবেদক জসিম উদ্দীন।

‘স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীন চিন্তার সূচক’

সোয়াইব খান, কৃষি অর্থনীতি অনুষদ: স্বাধীনতা একটি গভীর এবং মূল্যবান ধারণা। এটি মানব সমাজের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীন চিন্তার সূচক। স্বাধীনতা হলো মানবিক উদ্দিপনা, এটি প্রতিবন্ধী ও নিবন্ধিত নয়। স্বাধীনতা মানে নিরাপত্তা, অধিকার এবং মুক্তি। আমাদের সমাজে স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের প্রতি সচেতনতা জাগানো গুরুত্বপূর্ণ। সকলের জন্য সমান অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। স্বাধীনতা একটি ব্যক্তিগত সংঠনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি আমাদের ক্ষমতার প্রতি সচেতনতা ও জড়োত্তর অংশ। স্বাধীনতা মানে বিশ্বাস, সাহায্য এবং সহানুভূতি। স্বাধীনতা আর্থিক স্বাধীনতা ছাড়াও মানবিক এবং মরাল স্বাধীনতাও অন্যত্র। এটি মানুষের প্রজন্মের সমান সম্মান এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। স্বাধীনতা একটি অবশ্যই আবশ্যক শর্ত যা আমাদের সমাজের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এটি আমাদের সকলের জন্য উন্নতি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

‘স্বাধীনতা আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে’

ইসরাত আফরিন উর্মি, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ: স্বাধীনতা মানে নিজের জন্যে বাঁচতে পারা। আমার জীবন আমি কীভাবে চালিয়ে নিয়ে যাব সেটা একান্ত আমার সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার অপব্যাবহার করবো। স্বাধীনতা আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। কারো ক্ষতি না করে নিজের জীবনে সফল হওয়াটাই আমার কাছে স্বাধীনতার মানে। স্বাধীনতা শব্দটা একেকজনের কাছে আবার একেক রকমের। কেও চাই অর্থের স্বাধীনতা, কেউ বা ধর্ম স্বাধীনতা। আসলে স্বাধীনতা শব্দটা আপেক্ষিক। পুরোপুরি স্বাধীন কেও কখনোই হতে পারে না। যেমন. বিশাল জঙ্গল বা বনের মাঝে যে পশুরা থাকে আমরা ভাবি তারা কত্ত স্বাধীন নিজেদের মতো ঘুরে বেড়ায়। আসলে কিন্তু তা না, ঐ বন্যপ্রাণিগুলো নিজেদের ওই গণ্ডিটার মাঝেই স্বাধীন, তার বাইরে সম্পূর্ণ অপরিচিত। এককথায় কেও কখনোই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তার জীবনে পাই না।

‘স্বাধীনতা মানে নিজের বিবেক ও দায়িত্বজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ’

তাসনিম সায়েম সাকিব, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ: আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা মায়ের কড়া শাসন আর ভালোবাসায় ঘেরা ছিল ছেলেবেলা। সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরা, নিয়ম করে হারিকেন মুছে তার আলোয় পড়াশোনা করা যেন প্রতিদিনের রুটিন কাজ। খুব রাগ হতো বাবা মায়ের প্রতি। কি হয় একটু সন্ধ্যায় বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে! কি হয় হুটহাট প্ল্যানে সারাটা দিন ট্যুর দিলে! এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। চাইলেই রাতের পর রাত আড্ডা দিতে পারি। মন যা চায় সবই করতে পারি। সে স্বাধীনতা আমার আছে। কিন্তু মন সায় দেয় না। এখন বুঝি, ছেলেবেলায় তা স্বাধীনতা ভাবতাম বাবা মা সেটার দায়িত্বে ছিলেন। আর বড়বেলায় সেই দায়িত্ব এসেছে আমার নিজেরই কাছে। আমার কাছে, স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব; নিজের পরিবারের প্রতি, নিজের ভবিষ্যতের প্রতি সর্বোপরি নিজের প্রতি। স্বাধীনতা মানে নিজের বিবেক ও দায়িত্বজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ।

‘স্বাধীনতা সামাজিক দৃষ্টিকোণের পরিবর্তন আনতে অনেকটা ট্রাম্প কার্ডের মত কাজ করে’

জেনিয়া জাফরিন নিঝুম, কৃষি অর্থনীতি অনুষদ: স্বাধীনতা মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিকও। এটি সমাজের অধিকার এবং স্বাধীনতা বিষয়ক সাংবিধানিক বা আইনি পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনের অবস্থান এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিটি স্তরে প্রতিবিম্বিত। এটি এমন একটি বিষয় যা আত্মবিশ্বাস স্থাপনে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতা প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত, যা প্রতিটি ব্যক্তির স্বাধীনতা, অধিকার এবং দায়িত্ব নিয়ে বিচার করে। এটি একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত, যা সামাজিক সংস্কৃতি, শাসন এবং সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি থেকে আসে। আমি মনে করি স্বাধীনতা সামাজিক দৃষ্টিকোণের পরিবর্তন আনতে অনেকটা ট্রাম্প কার্ডের মত কাজ করে। এটি আমাদেরকে নিজেদের এবং আমাদের আশেপাশের সকলের অধিকার এবং দায়িত্ব নিয়ে চিন্তাভাবনার সুযোগ করে দেয়। এটি সমাজের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হয়, কেননা সমাজের স্বাভাবিক পরিচালনার জন্য প্রত্যেকের তার নিজ নিজ অধিকার, দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত।

‘স্বাধীনতা হলো স্বয়ংসম্পন্ন হওয়া, পরাধীনতার শিকলে বন্দী থাকা নয়’

ইকরাম হোসাইন, কৃষি অর্থনীতি অনুষদ: স্বাধীনতা হলো একটি জাতি, দেশ বা রাষ্ট্রের একটি শর্ত, যেখানে রাষ্ট্র স্ব-সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়, রাষ্ট্র এবং জনগণ সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। শান্তি ও সম্প্রীতি, সুষ্ঠু ন্যায়বিচার, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রতিটি দেশের জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন।স্বাধীনতা হলো স্বয়ংসম্পন্ন হওয়া, পরাধীনতার শিকলে বন্দী থাকা নয়। স্বাধীনতার মাধ্যমে একটি দেশ বিশ্ব দরবারে নিজেদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐক্যের বার্তা তুলে ধরার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি লাভ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বে ওপরের দিকে অবস্থান করছে। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথেও কৃষিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে এবং ধান, মাছ, আলু সহ আরো অনেক কৃষিপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছে। একটি দেশকে অন্যের শোষণ থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদেরকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিটি পর্যায়ে শীর্ষে পদার্পণ করাতে স্বাধীনতা মুখ্য বিষয়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ