ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

নোবিপ্রবির আশা জাগানো ভবনই শিক্ষার্থীদের হতাশার কারণ!

প্রকাশনার সময়: ০৭ মে ২০২৪, ১১:০০

ক্লাসরুম এবং ল্যাব সংকট দূর করবে এমনটা আশা জাগিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এশিয়ার বৃহত্তম একাডেমিক ভবন খ্যাত নোবিপ্রবির একাডেমিক ভবন-৩। সময়ের ব্যবধানে সেই উন্নয়ন প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ শেষ না করেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবিএল ও বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। কাজ বন্ধ হওয়ার ৩ বছর পরও নতুন করে কাজ শুরু করতে না পারায় ক্লাসরুম এবং ল্যাবরুমের তীব্র সংকটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ওয়ার্কস অফিসের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিলে ১১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার উন্নয়ন বাজেটে কাজ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ তলা একাডেমিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের। প্রকল্পটির কাজ যৌথভাবে গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরপে জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবিএল ও বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং পায়। কাজ শুরু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। কাজ বন্ধ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানদুটি ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ দেখায়।

কাজ বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে জিকেবিএলের স্বত্বাধিকারী জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে তার সকল ব্যাংক হিসেব জব্দ করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যৈষ্ঠ জজ আদালত। এর ফলে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এবং ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটির সাথে অফিশিয়াল চুক্তি বাতিল করেন।

২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২২ সালে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যায় বাড়বে প্রায় ১২৮ শতাংশ।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, পুরো কাজ শেষ না হয়ে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নতুন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রস্তাবনা প্রকল্প) পাঠানো হয়েছে। যার সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ২৬৩ কোটি টাকা। এর মাঝে নতুন করে ৪৮ টি ল্যাব, আধুনিক কনফারেন্স রুম এবং সকল ধরনের ফার্নিচার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা গত প্রকল্পের বাজেটে ছিলো না। যার কারণে বাজেটের আকার গতবারের চেয়েও প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ক্লাসরুম এবং ল্যাব সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। ক্লাসরুম সংকটে থাকা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ক্লাসরুম কম থাকায় প্রতিনিয়ত ক্লাস করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা ক্লাসরুম সংকটের কারণে পাঁচটি ব্যাচ ক্লাস করি মাত্র দুটি রুমে। অন্য কোথাও রুম ফাঁকা না থাকায় নির্মাণাধীন ভবনেই ক্লাস করছি। এতে ডিজিটাল ক্লাসরুমের সুবিধাতো পাচ্ছিই না বরং একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে রুম ভরে যায় এবং বাতাস হলেই ধুলাবালি তৈরি হয়। এমন পরিবেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা না থাকায় গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছি আমরা। আমরা ক্লাস করি এক ভবনে আর ল্যাব করতে যাই অন্য ভবনে। এভাবে ক্লাসরুম এবং ল্যাব সংকট আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করতে পারলে এই ভোগান্তি দূর হবে বলে আশাকরি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম।

ঠিক কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ শুরু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির সাথে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। বাজেট পাশ হওয়ার জন্য যে সকল পদ্ধতি আছে আমরা সর্বশেষ পর্যায়ে আছি। তবে কবে কাজ শুরু হবে এমন নিশ্চয়তা কেউ আমাদের দিচ্ছে না।

প্রকল্প ব্যয় ১২৮ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি একাডেমিক ভবনটিতে আধুনিকমানের ল্যাব এবং কনফারেন্সরুমসহ নতুন অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার কারণে বাজেটের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মোহম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো প্রজেক্টকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কোনো কারণে যদি কাজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রজেক্টে যদি বাজেট বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয় তাহলে আবার বিল পাশ করে নতুন করে টেন্ডার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ শুরু করতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ