ঢাকা, বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করা সেই ব্যবসায়ীর দোকানে তালা

প্রকাশনার সময়: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:১৪

কাপড় ব্যবসার আড়ালে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে অনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সুমন সাহার মালিকানাধীন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর নিউ মার্কেটের ফ্যাশন রুম নামে কাপড়ের দোকানটি ১ মাসের জন্য তালাবদ্ধ করেছে পৌর নিউ মার্কেট কর্তৃপক্ষ।

এসময় সুমন সাহাকে আগামী তিনমাস নিউ মার্কেটে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া তার দোকানের শপিংব্যাগ জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলার সিন্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা।

গত ১৫ এপ্রিল দৈনিক নয়া শতাব্দীতে ‘কাপড় ব্যবসায়ীর টার্গেটই ছিলো প্রবাসীর স্ত্রীরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরই তোলপাড় শুরু হয় মার্কেটে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১২টায় পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি জরুরি সভা বসে। সভার সর্বসম্মতিক্রমে এসব সিন্ধান্ত নেন। পরে সুমন সাহার বড় ভাই বিপ্লব সাহাকে ডেকে এনে তাদের সিদ্ধান্ত জানান এবং বিল্পব সাহার উপস্থিততে দোকানটি তালা দেওয়া হয় এবং অভিযুক্তকে সতর্ক করা হয়।

এ সময় নিউ মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী বিয়ে বাজার কাপড়ের দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী জনি সাহা ও মনে রেখো শাড়ি ঘরের স্বত্ত্বাধিকারী এসএম অন্তর বিশ্বাসকে সতর্ক করা হয়। জনি ও অন্তরসহ আরও অনেকে সুমন সাহার মতো নিজ নামের টাইটেল গোপন ও মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলিম সম্ভান্ত্র পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।

ভৈরব পৌর নিউ মার্কেটের সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভের সার্বিক সঞ্চালনায় জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়রসহ সভাপতি শওকত চিশতী, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক তানভীর আহমেদ, আদিল উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, অর্থ সম্পাদক ইমন মোল্লা, ক্রীড়া সম্পাদক মনির হোসেন, কার্যকরী সদস্য মোবারক হোসেন সহ অন্যান্য সদস্যরা।

উল্লেখ্য, রোববার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে নরসিংদির গাবতলী এলাকায় এক নারী কাস্টোমারের সাথে অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে তার ফ্লাট বাসায় গেলে প্রতারক চক্রের মুলহোতা কাপড় ব্যবসায়ী সুমন সাহাকে স্থানীয় লোকজন আটক করে মারধোর করেন। আটক অবস্থায় ফ্যাশন রুম সুমন নামে তার নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফেসবুক আইডিতে নিজের অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করে লাইভ দেন। ওই পোস্ট মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নেটিজেনসহ ভৈরবের সাধারণ মানুষের মাঝে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা আটক থাকার পর মুচলেকা দিয়ে ভৈরব থেকে লোকজন গিয়ে তাদের জিম্মায় নিয়ে আসে।

অভিযুক্ত সুমন সাহা তার নিজ নামের সাহা টাইটেল ও ধর্মের কথা গোপন ও পাঞ্জাবি-টুপি পরিধানের মাধ্যমে নিজেকে মুসলিম পরিচয়ে দিতেন তার দোকানে আসা নারী ক্রেতাদের। সে দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে এমন অভিযোগ তোলেন খোদ ভৈরব বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, সুমন সাহার নেতৃত্বধীন ভৈরব বাজারের ১২/১৫ জন হিন্দু যুবকের একটি চক্র তাদের দোকানে আসা মহিলা কাস্টমারদের ফোন নম্বর নেওয়ার পর তাদের সাথে সম্পর্ক করতেন। বিপদগামী করতে ওই প্রতারক চক্রটির মূল টার্গেট মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা ও প্রবাসীর স্ত্রীরা। অনেক মহিলা তাদের ফাঁদে পড়ে অর্থ ও ইজ্জত হারিয়েছেন। মানসম্মানের ভয়ে মুখ খোলেন না ভুক্তভোগীরা। হিন্দুধর্মালম্বীর প্রতারক যুবকদের সাথে কতিপয় স্থানীয় মুসলিম যুবকদের যোগসূত্র আছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা ভৈরব বাজারে শপিং করতে আসা নারীদের হিন্দু যুবকদের ওই চক্র থেকে নিরাপদ ও সর্তক থাকার পরামর্শ দেন।

অভিযুক্ত সুমন সাহার নিজ ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে জানা যায়, ওই নারীর নাম নারগিস আক্তার অনু। তিন সন্তানের জননী তিনি। চার বছর আগে ভৈরব নিউ মার্কেটে অভিযুক্ত সুমন সাহার কাপড়ের দোকান কাপড় কিনতে আসার সুবাদে পরিচয় হয় ওই নারীর। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায়ই নরসিংদী গিয়ে রেস্টুরেন্টে দেখা করতেন। ওই ভুক্তভোগী নারী সুমনকে মানা করার পরও তাকে নিয়মিত বিরক্ত করতেন। অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে ওইদিন ভুক্তভোগী নারীর বাসায় গেলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করে মুসলিম লেবাসধারী প্রতারক সুমন সাহা।

এ ঘটনায় ভৈরব বাজারের সাধারণ ব্যাবসায়ী, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত সুমন সাহাসহ প্রতারক চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দোকান বন্ধ ও নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেন পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুমন সাহা বলেন, ওই মহিলার কাছে কাপড়ের টাকা বকেয়া ছিল। টাকা আনতে নরসিংদী গাবতলীতে মহিলার বাসায় গেলে ওই নারীর স্বামী মামুনসহ ১০/১২ জন লোক তাকে আটক করে মারধর করেন। এসময় তাদের কথামতো ফেসবুক লাইভে গিয়ে ঘটনার কথা স্বীকার করেন। আটক অবস্থায় ৫০ হাজার টাকা, খালি চেক ও স্ট্যাম্পে সই রাখেন তার। ওইদিন রাতেই ভৈরব থেকে লোকজন গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে ভৈরব পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, সুমন সাহার বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। নরসিংদীতে নারী কেলেংকারীর ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রচার হলে মার্কেট কমিটির নজরে আসে। সুমন সাহার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হওয়ায় কমিটি জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেয় সুমন সাহার মালিকানাধীন কাপড়ের দোকান ফ্যাশন রুম ১ মাসের জন্য তালাবদ্ধ থাকবে এবং আগামী তিনমাস সুমন সাহা নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেই সাথে নিউ মার্কেটের আরও দুজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে।

ভৈরব ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুমন সাহা তার ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন নারীদের সাথে অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল। নরসিংদীতে নারী কেলেংকারীর ঘটনাটি তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে জরুরি মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেয় সুমন সাহার দোকান ১মাস বন্ধ থাকবে এবং সুমনকে তিন মাস নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন খান জানান, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি এবং ঘটনাটি জানিও না। তবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি হয়, তাহলে তো প্রতিরোধ করতে হবে। যারা ভুক্তভোগী তারা যদি অভিযোগ করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ