ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

মরা গরুর গোস্ত বিক্রির অভিযোগে যুবক আটক, মুচলেকায় মুক্ত

প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৪৯ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫৩

মরা গরুর গোস্ত বিক্রির অভিযোগ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) হাতে আটক হওয়া সোহেল নামে এক দোকান কর্মচারী মুচলেকায় ছাড়া পেয়েছেন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের কমলপুর গাছতলাঘাট বাজারের ভৈরব গোস্ত হাউজে এ ঘটনা ঘটে।

আটকের ঘণ্টাখানেক পর অভিযুক্ত সোহেলকে উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আতাউর রহমানের মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় ক্যাম্প থেকে।

স্থানীয়রা জানান, ভৈরব গোস্ত হাউজের মালিক খোকন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে শহরের গাছতলা ঘাট বাজারে মরাগরু ও চোরাইকৃত গরুর গোস্ত বিক্রি করলেও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বুধবার সকালে র‍্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা গোস্ত কিনতে এসে মরাগরুর গোস্ত বিক্রির সন্দেহে ভৈরব গোস্ত হাউজের কর্মচারী সোহেলকে আটক করে নিয়ে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঘটনার খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত গোস্তের দোকানটি বন্ধ। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে র‍্যাব সদস্যরা ভৈরব গোস্ত হাউজের কর্মচারীকে আটক করে নিয়ে যায়। মালিকসহ অন্য কর্মচারীরা কৌশলে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা আরও জানান, অভিযুক্ত খোকন মিয়া গরু চোর চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। ফেরিঘাট বাজারে আগে তিনি মাংসের ব্যবসা করতেন। গত দুই বছর ধরে গাছতলাঘাট বাজারে এসে ব্যবসা শুরু করেন। আনুমানিক তিন/চারমাস আগে গাছতলা ঘাটে মরাগরুর গোস্ত বিক্রি করায় সাধারণ ক্রেতা ও স্থানীয়রা খোকন মিয়াকে আটক করেন। আটকের পর স্থানীয় যুবক ও এক প্রভাবশালী নেতাকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাকে শেল্টার দেওয়ার কারণে এসব অপকর্ম করেও তিনি বীরদর্পে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, গাছতলা বাজারের ৮/১০টি মাংসের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে ভৈরব গোস্ত হাউসসহ আরও কয়েকটি গোস্তের দোকান এসব অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মরাগরু ও চোরাইকৃত গরুর গোস্ত বিক্রি বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ ক্রেতা ও স্থানীয় লোকজন।

ভৈরব গোস্ত হাউজের মালিক খোকন মিয়া জানান, তার কর্মচারী সোহেল ও ছেলে রুবেল দোকানে ছিল। এ সময় র‍্যাব সদস্যরা মাংস কিনতে আসলে কর্মচারী সোহেলের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। এ ঘটনায় তার কর্মচারীকে র‍্যাব ধরে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানে পর তার কর্মচারীকে র‍্যাব ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান।

তার দোকানে মরাগরু ও চোরাইকৃত গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসাতে হয়ত এসব অভিযোগ কেউ কেউ সামনে আনছে।

এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আতাউর রহমান জানান, তিনি ৮ বছর আগে অবসর নেন। এ ঘটনায় আটককৃত ব্যক্তিকে মুচলেকার মাধ্যমে তিনি ছাড়িয়ে নেন বলে স্বীকার করেন।

ঘটনার পর র‍্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের ডিএডি মো. ইকবাল হোসেনের সাথে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ভৈরব গোস্ত হাউজের নাম বলেন এবং একজন আটকের কথা স্বীকার করেন।

ভৈরব পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নাছিমা বেগম জানান, ভৈরবে স্লট হাউস না থাকায় যত্রতত্রভাবে গরু জবাই করে বিক্রি করছে। প্রাণিসম্পদ অফিস পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানালে তিনি সীল দিয়ে ক্লিয়ারেন্স দেবেন। তারপরও মাংস সতেজ ও ভালো কিনা সপ্তাহে দুইদিন বাজার তদারকি করেন তিনি।

ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, বিভিন্ন সময় মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। মাংস অব্যবস্থাপনার অভিযোগে র‍্যাব একজনকে আটক করেছে বলে শুনেছেন। তিনি বলেন, ভৈরবে কোনো স্লটার হাউজ নেই। তারপরও উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে র‍্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট মো. ফাহিম ফয়সালের মুঠোফোন নম্বরে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ