ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মিশরে রমজানের ঐতিহ্য‌ জমকালো ‘ফানুস’

প্রকাশনার সময়: ১১ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫৩

পৃথিবীর শত আঁধারের মাঝে আলোর সঞ্চারণের প্রতীকী মাধ্যম হলো ফানুস। প্রাচীনকালে সাইরিয়াস নামক নক্ষত্রের উদয় উদযাপনের জন্য ফারাওরা (শাসক) যে উৎসব পালন করত, সেই উৎসবে ব্যবহৃত মশাল থেকেই প্রকৃত পক্ষে ফানুসের উদ্ভব হয়।

প্রাচীন মিশরীয়রা ফারাও সম্রাটদের জন্মদিন পালন করার সময় রাস্তা গুলোকে আলোকিত করতো ফানুস দিয়ে। তাছাড়াও নেপোলিয়ান মিশর আক্রমণ করার পর, তার দখলদারিত্বের প্রতিবাদে পুরো মিশরবাসী আকাশে ফানুস ছেড়ে প্রতিবাদ জানায়।

আধুনিক মিশরেও রমজানে ফানুসের প্রচলন নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মিশরে নয়া শতাব্দী প্রতিনিধি আফছার হোসাইন।

মিশরে রমজানের সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে ফানুসের প্রথাগত ব্যবহারের সূচনা ধরা হয় ফাতিমীয় খিলাফতের সময়‌ থেকে। ফাতিমীয় খিলাফত মূলত ছিল মিশর কেন্দ্রিক। ৯৫২ খৃস্টাব্দে ফাতেমি খলিফা মুইজ ঈল-দ্বীনিল্লাহ আবু তামিম মা'আদ বিন মানসুর আল-উবাইদি পবিত্র রমজান মাসে তৎকালীন মিশরের রাজধানী ফুসতাতে আগমন করেন।‌ তখন তার সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফুসতাত শহর ফানুস দিয়ে সজ্জিত করা হয়। সেই থেকে রমজানে ফানুসের ব্যবহার করে আসছে মিশরীয়রা।

প্রতি বছর শাবানের ১৫ তারিখের পরেই‌ বিশ্বের প্রাচীন কৃষ্টি সভ্যতা সমৃদ্ধ মুসলিম দেশটির রাজধানী ইসলামিক কায়রোসহ সারাদেশের বিভিন্ন দোকানে বাহারী নামের রঙ-বেরঙের ফানুসের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। রমজান শুরু হওয়ার‌ ১৫ দিন‌ আগে থেকেই রাস্তায় বের হলেই কানে‌ ভেসে আসে দেশটির ঐতিহ্যবাহী রমজানের গান‌ ‘ওহাওয়ী-ওয়া-ওহাওয়ী, ইউয়োয়া-উয়াহা....’।

এদেশে রমজানে সন্ধ্যা থেকে সকাল‌ পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ি, রাস্তা ও দোকানে ফানুস জ্বালানো ও আলোকসজ্জা করা রমজানের সংস্কৃতি। দেশটির রাজধানী কায়রো‌সহ বিভিন্ন শহর ও গ্রামের অলি-গলির দোকানগুলো এখন বাহারী রঙের ফানুসে সয়লাব। রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই দোকানিরা হরেক রকম ফানুস এনে সাজিয়েছেন নিজ নিজ দোকান। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙ-বেরঙের ফানুসেরও রয়েছে অদ্ভুত ধরনের যতসব বাহারি নাম। যেমন- আল-খামাসি, আবু শামা, আবু লাদ, আল-দালিয়াইয়া, আল-খুম্মাস, আল-বুর্জ, শামামা ইত্যাদি।

মিশরীয়দের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফানুসটির নাম খামাসি। লোহা ও তামার কাঠামোতে তৈরি রঙিন কাঁচ দিয়ে বানানো ফানুসটি খুবই শক্ত ও টেকসই। ত্রিশের দশকে মিশরের সংসদ ভবনে এই ফানুসটি ঝোলানো হয় বলেই এর এতো জনপ্রিয়তা।

ইসলামিক কায়রোর মুইজ-ঈল-স্ট্রিটে গিয়ে‌ দেখা যায়, ছোট বড় বিভিন্ন আকার এবং মাপের ফানুসে দোকানগুলো‌ সয়লাব।‌ প্রকারভেদে একেকটি ফানুসের দাম ৪০ গিনি (১০০ টাকা) থেকে ৫ হাজার গিনি (১২ হাজার ৫০০ টাকা) পর্যন্ত।

এর মধ্যে ছোট সাইজের ফানুসই বিক্রি হচ্ছে বেশি। যার মূল্য ১০০ থেকে ৩০০ গিনি বা ২৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মেট্রোরেল, পাবলিক বাসে ফেরি করে এবং রাস্তায় বসেও চিনের‌ তৈরি ছোট ছোট ফানুস বিক্রি করছেন ফেরিওয়ালারা।

মিশরে রমজানে ফানুসের অধিক ব্যবহারের জন্যই তা একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। প্রতি বছর নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে ফানুস বাজারে আনার চেষ্টা করে ফানুস ব্যবসায়ীরা। মিশর প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানে ফানুস রপ্তানি করে থাকে। ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে বেসরকারি খাতে স্থানীয়ভাবে ফানুস তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে মিশর।

তবে কায়রোর কুটনীতিক পাড়ার নাইন স্ট্রিট, ইসলামিক কায়রোর আল-আজহার, সাঈদা হোসাইন, খান‌-ঈল খলিলি ও সাঈদা জয়নব এলাকার দোকানিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে ফানুসের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কারণ, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফানুসের দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

তারা বলেন, এ বছর মিশরীয় পাউন্ডের বিপরীতে অপ্রত্যাশিতভাবে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে ফানুসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কারণ, ফানুস তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হয় অন্য দেশ থেকে।‌

নয়াশতাব্দী/এএইচ/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ