ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ জিলকদ ১৪৪৫

তিস্তার সংস্কারের নামে কাটা হচ্ছে ৪ লাখ গাছ!

প্রকাশনার সময়: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:০৩

স্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান ক্যানেলসহ টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণের নামে পুরো বিভাগে অন্তত চার লাখ গাছ কাটছে বন বিভাগ। সংস্কারের নামে এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন সমাজকর্মী, পরিবেশবিদসহ সাধারণ মানুষ। জানা যায়, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ ক্যানেল সংস্কার ও সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সংস্কারের নামে দরপত্র দিয়ে সেচ ক্যানেলের দুই ধারসহ পুরো বিভাগের প্রায় ৪ লাখ গাছ কাটছে বন বিভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যখন বিপর্যস্ত রংপুর বিভাগ তখন আত্মঘাতী এমন পদক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে গাছ রক্ষায় অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি পরিবেশবাদীদের।

নীলফামারী বন বিভাগ ও সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, তার দায়িত্বে থাকা নীলফামারী সদর উপজেলা ও ডিমলা উপজেলার প্রকল্প এলাকায় এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ গাছ কাটা হয়ে গেছে। সরেজমিন রংপুরের তারাগঞ্জে দেখা যায়, গাছ গাছালিতে ভরে থাকা তিস্তা শেষ ক্যানাল এখন পরিণত হচ্ছে মরুভূমিতে। ক্যানেল ঘেঁষা দৌলতপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, রক্ষই যখন ভক্ষক তখন আর কী করা যাবে। বন বিভাগের উচিত গাছপালা লাগানো। আমাদের পুরো ক্যানেলটা এখন গাছ শূন্য হয়ে গেল। সামাজিক বনায়ন প্রকল্প অনুসারে, গাছ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার পর কাটার কথা। আর নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে ৫৫ শতাংশ অর্থ পাওয়ার কথা পরিচর্যাকারীদের, ২০ শতাংশ পাবে পাউবো, বাকি ২৫ শতাংশ যাবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও খাতে।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য গাছ কাটা হলেও যারা পরিচর্যা করেছেন, তাদের কিছু জানানো হয়নি। রাশেদা বেগম নামে একজন পরিচর্যাকারী বলেন, গাছগুলো পরিচর্যা করে বড় করেছি আমরা, কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতনের কোনো টাকা পাইনি। গাছ বিক্রির টাকা পাব কি না জানি না। তবে সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলছেন, উপকারভোগীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে তাদের ন্যায্য অর্থ পরিশোধ করা হবে। গাছ কাটা সম্পর্কে ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা বলেন, প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণের স্বার্থে গাছ কাটা হচ্ছে। ক্যানেলের কাজ শেষ হলে নতুন করে আবারও গাছ লাগানো হবে এবং নতুন করে বন বিভাগের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে।

পরিবেশসচেতন বিশেষজ্ঞরা একবারে এত বেশি গাছ কাটার বিরোধিতা করেছেন। রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সারা দেশের তাপ প্রবাহ এ বছর ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ পরিস্থিতিতে এত গাছ একসঙ্গে কাটা অন্যায়। সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার সেচ খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণের নামে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার যে প্রজেক্ট নিয়েছে সরকার, তার কোনো দরকার নেই। অপ্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। এটা কোনো কাজেই আসবে না। এজন্য আবার গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছগুলো না কাটলে অর্থের অপচয় করতে পারত না। বিষয়টি জানতে রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ