ঢাকা, বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
বসন্ত এসেছে দুয়ারে

ভালোবাসায় দূর হোক সব দূরত্ব

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৬

বছর ঘুরে আবার এসেছে বসন্ত। প্রকৃতি সেজেছে আপন সাজে। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে একরাশ ভালোবাসা। বসন্তের সৌরভে আজ ভালোবাসাময় হয়ে উঠুক প্রকৃতি এবং প্রকৃতির অংশ মানুষ। ভালোবাসা এমন একটি শব্দ যার জন্য শুধু প্রাণিকুল নয় সৃষ্টির সবকিছু মুখিয়ে থাকে। তবে ভালোবাসা প্রকাশে মানুষই খুব বেশি এগিয়ে। লক্ষ করলেই বোঝা যায়, পোষা পশুটিকে ভালোবাসলে সে কেমন উদ্বেলিত হয়, আবার একটি গাছ বা বাগানের যত্ন নিলে তারা কেমন খলবলিয়ে হেসে ওঠে। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, সারা বছর জুড়ে প্রতিদিন হোক ভালোবাসাময়। বিশ্বজুড়ে এ যে অশান্তি, মারামারি, হানাহানি-ভালোবাসতে পারলে এসব শুরুই হতো না।

বাঙালিরা আবেগপ্রবণ এক জাতি। তারা ভালোবেসে পারেন না এমন কোনো কাজ নেই। তাদের ভালোবাসা দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সব প্রাণিজগতের জন্য। ভালোবাসা প্রকাশে তারা কোনো দিবসের অপেক্ষা করে না। বিশ্বের যেখানেই মানবতা লুণ্ঠিত হয়, মুখ থুবড়ে পড়ে সুশিক্ষা, নীতি, আদর্শ যোজন যোজন দূর থেকে তখন তারা ব্যথিত হয়। আমরা দেখেছি ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে যখন প্রাণ হারাল অসংখ্য মানুষ, তখন তাদের চোখে ছিল ব্যথার অশ্রু। যখন স্থায়ী আবাসের খোঁজে বেরিয়ে একজন আয়নাল কুর্দি সমুদ্র সৈকতে লাশ হয়ে পড়ে ছিল তখনো এ জাতি ডুকড়ে কেঁদে উঠেছে। যখন তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের আঘাতে লাশ হয় হাজার হাজার মানুষ তখনো এদেশের মানুষ হাহাকার করেছে।

বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনের অসহায় মানুষের জন্য তাদের সীমাহীন যন্ত্রণা। বাঙালি এমনই। তারা প্রাণ দেয় ভাষার জন্য, প্রাণ দেয় দেশের জন্য, প্রাণ দেয় সত্য ও কঠিনের জন্য। সেই বাঙালির সামনে যখন বসন্ত এসে দাঁড়ায় তখন প্রেম এবং আবেগে তারা ভেসে যাবে এটা তো খুবই স্বাভাবিক। আজ বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন। আজ ভালোবাসা দিবসও। যদিও প্রিয়জনকে ভালোবাসতে কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত— এমন ভিন্ন ঋতু অন্য কোনো দেশে নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ছয়টি ঋতুকে আলাদা করা এখন অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আমরা যারা বিভাগীয় শহরগুলোতে বসবাস করি তারা ঋতু পরিবর্তনের নির্মমতার শিকার হই প্রতিনিয়ত। রাজধানী ঢাকা যখন দূষিত শহরের তালিকায় স্থান পায় তখন আমরা মালিন হতে থাকি। কারণ এ শহরটির প্রতিও আমাদের রয়েছে অশেষ ভালোবাসা। তবুও আমাদের মননে প্রকৃতির প্রভাব আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা সহজেই ক্ষমা করতে পারি, স্বল্প সময়ের পরিচয়েও কাউকে আপন করে নিতে পারি। আতিথেয়তায় বাঙালির বিকল্প নেই আবার গ্রীষ্মের রুক্ষতাও এদেশের মানুষের ব্যক্তি চরিত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর প্রমাণও আমরা নানা পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। তবে অধিকাংশ মানুষ সহজ, সরল, বন্ধু মনোভাবাপন্ন।

আজ বসন্তের রঙে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রঙিন হয়ে উঠবে। তবে দিবসটি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। কারণ ভ্যালেন্টাইন দিবসটি ভ্যালেন্টাইন নামের একজন প্রেমিকের করুণ পরিণতির দিন। এ দিনে তাকে স্মরণ করে সম্মান জানান যেতে পারে। কিন্তু বর্তমান সমাজে দিনটিকে যেভাবে পালন করা হয় তাতে শুধু এ মানুষটিকে অপমান করা হচ্ছে তা নয়, প্রেম-ভালোবাসার মতো একটি প্রাকৃতিক এবং মানবীয় অনুভূতিকেই বিতর্কিত করে তোলা হচ্ছে, দিনে দিনে দিবসটি বাণিজ্যিক রূপ পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতি বছর এদেশের মানুষ মহাসমারোহে বসন্ত উদযাপন করে। কারণ প্রকৃতির মতো তারাও চান মনের যত জরা আছে তা বসন্ত বাতাসে দূরীভূত হয়ে যাক। মানুষে মানুষে কমে যাক দূরত্ব, পারস্পরিক হিংসা, জিঘাংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা। তৈরি হোক আত্মিক বন্ধন। ভালোবাসাময় শুভ বসন্ত!

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ