ঢাকা, বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
রাজধানীজুড়ে বাজার

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৬ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪, ১১:২২

প্রতিটি শহর গড়ে ওঠার আগে একটি সুচারু ছক করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা থাকে কোন এলাকার কোথায় কোন ধরনের স্থাপনা থাকবে, কোথায় বাজার বসবে। কোথায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, শপিং মল এবং দোকানপাট হবে। রাজধানীর কোনো এলাকায় গেলে দেখে বোঝার উপায় নেই এ শহরে কোনো নগরপিতা আছেন কিনা বা এ শহর গড়ে ওঠার পেছনে কোনো পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিনা। কারণ শহরের সর্বত্র ভাসমান বাজার। এসব বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যা পাওয়া যায় না। ক্রেতাও কম নয়।

ফুটপাত কিংবা ফুটওভারব্রিজ মূলত পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য তৈরি হলেও ভাসমান পসরা সাজিয়ে বসে হকাররা পথ সংকীর্ণ করে রাখেন। আবার সেখানে ক্রেতার ভিড়ে চলাচল করা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। এ ভিড়বাট্টায় পকেটমার হয়, নারী পথচারীরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কবলে পড়েন। অথচ প্রতিটি এলাকায় হকার বা নিত্যপণ্য কেনাবেচার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার কথা। অভিযোগ আছে, এসব ভাসমান বাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা উঠান স্থানীয় প্রভাবশালীরা। স্থানীয় থানার ওসিকেও ম্যানেজ করে এরা ব্যবসা করে। ওসি বদল হলে কিছুদিন ঝামেলা হয়, তাকেও আবার নিয়মিত চাঁদা দিয়ে পক্ষে নিয়ে নেয়া হয়।

শুধু তা-ই নয়। এসব ভাসমান বাজারে দেয়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে আসায় পথচারীরা ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তাতে মূল রাস্তা ছোট হয়ে আসে। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট, জনজট। এসব দেখার কেউ যেন নেই। কারণ যারা দেখবেন তারাই তো চোখ বন্ধ করে রাখেন নিজের হিসেব বুঝে নিয়ে।

রাজধানী শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানেই মানুষের সমাগম, সেখানেই গড়ে উঠেছে বাজার। ঢাকা এখন মসজিদের শহরের পাশাপাশি নাম ধারণ করছে বাজারের শহর হিসাবে। আর এসব বাজার চলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। কোনো কোনো এলাকা আবার রাত যত গভীর হয় বাজার তত জমজমাট হয়। শহরের কোনো জায়গা খোলা থাকলেই সেখানে বসে পড়ে দোকানপাট।

একটা দোকান বসার পর থেকে তার দেখাদেখি বসতে শুরু করে শতশত দোকান। এরপর থেকে ওই এলাকাই একটি বাজারে পরিণত করে। আর এ অস্থায়ী বাজার এক পর্যায়ে স্থায়ী রূপ নেয়। এসব বাজার শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এসব বাজার ঘিরে গড়ে ওঠে বিশাল অঙ্কের সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকেন সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা। ফুটপাত থেকে ফুট ওভারব্রিজ, শপিংমল থেকে মহল্লার অলিগলি রাজধানী ঢাকার প্রায় সব সড়কে ভাসমান বাজারের দেখা মেলে। মূল সড়কের দুই পাশের সড়কজুড়েও প্রতিনিয়ত বসছে ভাসমান বাজার। আর এসব বাজারের বে-আইনি দোকানগুলোতে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ। আছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। এর জন্য হচ্ছে তীব্র যানজট। ফলে পথচারীসহ যানবাহনকে হরহামেশা নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগও কম নয়।

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন। রাজধানী ঢাকাকে একটি গোছানো নগরী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সিটি করপোরেশনকে দুটি ভাগ করা হয়েছিল। যাতে এত বৃহৎ এলাকার কেউ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি না হয়। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে, বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন আরও বেশি বিশৃঙ্খলায় ঠেলে দিচ্ছে জনগণকে। ঈদকে সামনে রেখে ভাসমান বাজারের এ বিস্তার আরও বাড়ছে। সেইসঙ্গে যানজট। সংশ্লিষ্টরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমালেও হয়রানিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এর প্রতিকার হওয়া জরুরি।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ