ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্কুলছাত্র নয়নের বানানো লঞ্চ ভাসছে পানিতে

প্রকাশনার সময়: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৭

বরিশালের কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্কুলছাত্র মো. নয়ন (১৫)। ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এই লঞ্চটি এরমধ্যে পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে এ স্কুলছাত্র। যা নিয়ে এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। লঞ্চটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

নয়ন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে। এবং চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ও মা কুলছুম বেগম গৃহিনী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বড় নয়ন।

রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করতে নয়নের সময় লেগেছে প্রায় ১০ মাস। এতে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। লঞ্চটি তৈরি করে এরমধ্যে পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে এই স্কুলছাত্র।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে নয়নের বানানো লঞ্চটি পানিতে চালাতে একটি রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছে দুইটি মোটর। মোটর দুইটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোটরসাইকেলের ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুইটি পাখা যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। তিন তলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রঙয়ের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। এবং লঞ্চের নিচ তলায় ডেক ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন, এবং তিনতলার উপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা এবং সামনে হেড লাইটও রয়েছে। বাস্তবে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মতো দেখতে।

লঞ্চ বানানো স্কুলছাত্র নয়ন বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, সেজন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। যখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি তখন থেকেই স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নিতাম, তা জমিয়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়। সেই টাকা দিয়ে ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার ও পাখা সংগ্রহ করি। এরপর প্রায় ১০ মাসের চেষ্টায় কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে একটি লঞ্চটি বানাই। যার দৈর্ঘ্য ৭ ফুট, এবং ৩ ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোল এবং হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ১০ মিনিটের মধ্যে আদা কিলোমিটার দূরে যাতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ আমার এই লঞ্চটি পানিতে ভাসাই। লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ কোম্পানির মালিককে উপহার হিসেবে দিতে চাই। তাহলে আমার মনের আশা কিছুটা পূরণ হবে।

নয়নের বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি জানান, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেয়া হয়। তার স্বপ্ন পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে।

চরমানিকা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে রীতিমতো কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি লঞ্চ তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেরা অনেক কিছুই করতে পারে। তার মেধার যদি মূল্যায়ন করা হয় এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সে নতুন নতুন আবিষ্কার দেখাতে পারবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ