বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথা?

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫১

বাংলাদেশ টেস্ট দলের দশা এখন ঠিক এমনটাই হয়ে গেছে- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথা?’ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- এমনকি রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রেও টাইগারদের অসহায় চিত্র ফুটে উঠছে টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৪ বছর পরেও টেস্ট ক্রিকেটে এমন করুণ দশা বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজে চিত্রটা ফুটে উঠেছে বেশ ভালোভাবেই।

শ্রীলঙ্কা সিরিজে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং। ক্যাচ মিসের সেই পুরোনো রোগ আবারও দেখা গেছে মাঠে। টাইগার ফিল্ডারদের তেলতেলে হাত থেকে ক্যাচ পড়েছে একের পর এক। আর সেই সুযোগে লঙ্কানরা চেপে বসেছে, গড়ে তুলেছে রানের পাহাড়। যে রান পাহাড় আর পরে টপকাতে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা।

ব্যাটিংয়ে সমস্যা সবসময়েই ছিল বাংলাদেশের, যা আরও একবার সামনে এসেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপট দেখানো ব্যাটাররা আন্তর্জাতিক মঞ্চে এসে চোখে দেখছেন সর্ষে ফুল! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ম্যাচের চাপ বা চ্যালেঞ্জ সামাল দেওয়ার মতো দক্ষতা হাতে গোণা ২-৩ জন বাদে তেমন কেউ দেখাতে পারেননি। ফলে ব্যাটিং ধস হয়ে গেছে নিত্যদিনের ঘটনা। শেষ ৬ টেস্ট ইনিংসের মধ্যে কেবল একবারই ২০০ পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। কতটা পীড়াদায়ক টাইগারদের টেস্ট ব্যাটিং বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা না।

ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন সবসময়ই ছিল। এবারের সিরিজে সেই বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনেই বলেছেন মোমিনুল হক এবং টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসাইন শান্ত।

চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে মোমিনুল জানান, ‘আমি আজকেসহ ৬১টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। আমি অনেক খেলার কারণে হয়তো বুঝি, কখন কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। কখনো হয়ত কাজে লাগাতে পারি, কখনো পারি না। আমার কাছে মনে হয়, শুনতেও খারাপ লাগতে পারে যে, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা এবং আন্তর্জাতিকের খেলা অনেক ভিন্ন। আকাশ পাতাল তফাত। আপনারাও জানেন, আমিও জানি, সবাই জানে। আমি নিজেও তো জাতীয় লিগ খেলি, আমি নিজেও কখনো চ্যালেঞ্জ ফেস করি না। এখানে আন্তর্জাতিকে যেমন চাপ মোকাবেলা করতে হয়। আমি সততার সঙ্গে কথাগুলো বলতেসি।’

শান্তর কণ্ঠেও শোনা গেছে একই সুর। অধিনায়ক জানান, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেটটা যদি আরেকটু বেটার হয়, যেরকম কন্ডিশনে আমরা খেলবো, চ্যালেঞ্জগুলা যদি ফেস করতে পারি, তাহলে ভালো। আমার কাছে স্টিল মনে হয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা যেরকম চ্যালেঞ্জ এখানে ফেস করি, ওইরকম কোয়ালিটি ম্যাচ সেখানে আমরা খেলতে পারি না। আমাদের প্লেয়ারদের জন্য যদি আরও ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করতে পারি যা আন্তর্জাতিকের সাথে মেলে, তাহলে অবশ্যই ভালো হবে। যত বেশি ম্যাচ খেলবো কিছু না কিছু তো উন্নতির জায়গা থাকেই।’

ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বাভাবিকভাবেই খাবি খেতে থাকেন। ব্যাটে থাকে না রানের খোঁজ, দলও পড়ে বিপদে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন দশা থাকলে টেস্টে ভালো করা বেশ কঠিনই বটে।

তবে একটি জায়গা কিছুটা আশা জাগানিয়া, আর সেটা বোলিং। বাকি দুই বিভাগের চেয়ে এখানে হতাশার পরিমাণ কিছুটা কম। আশা আছে অনেক। সিলেট টেস্টে নাহিদ রানার পর চট্টগ্রামে অভিষেক হয়েছে হাসান মাহমুদের। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নিজেদের শুরুর সময়ে ঝলক দেখিয়েছেন দুজনেই। তবুও লঙ্কান ব্যাটাররা দাপট দেখিয়েছেন তাদের চেয়েও বেশি। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির জায়গা থাকছে বোলিংয়েও। এখানে দায়িত্ব নিতে হবে হাসান, রানাদের মতো তরুণদেরও।

তবে টেস্টে লম্বা সময় ধরে ভালো বোলিং করে যাওয়ার দক্ষতার ঘাটতিও বড্ড চোখে লেগেছে লঙ্কা সিরিজে। সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কা গড়েছে বড় বড় জুটি। ফলে উন্নতির জায়গা আছে অনেক।

এছাড়া রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ক্রিকেটারদের নির্বুদ্ধিতা আরও একবার সামনে এসেছে। সোজা ব্যাটে লাগা বলেও রিভিউ নেওয়ার বিলাসিতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রযুক্তির এই যুগে ঠিকঠাক রিভিউ নেওয়াটাও বেশ জরুরি, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। উন্নতি দরকার এখানেও।

এতো এতো অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ঘাটতি, অসুবিধা পাশ কাটিয়ে মাঝে মাঝে টেস্ট ক্রিকেটে যে কিছু বিচ্ছিন্ন জয় বাংলাদেশ পায়, তা-ই হয়তো অনেক বেশি। ক্রিকেটের বনেদী ও প্রধানতম এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের নমুনাটা যেন এখন এরকমই- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথা?’

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ