ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈদ সালামি: পাল্টায়নি রীতি, পরিবর্তন এসেছে প্রথায়

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৩৩

বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। শান্তি, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে মুসলিমদের বড় এই উৎসব। ঈদ হচ্ছে সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। ধনী-দারিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব মুসলমান মিলেমিশে ঈদের আনন্দ সমান ভাবে ভাগ করে নেন। পারিবারিক হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ভুলে খুশি মনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেন। রোজা ও ঈদে ধর্মীয় অনুভূতি ও উৎসবের আমেজ দু’য়ে মিলে আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে সবার।

ঈদে আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ জুড়ে আছে সালামি বা ঈদি। ঈদকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই চলে এই সালামি দেয়া নেয়ার পালা।

ঈদ বা বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছোটরা তাদের বড়দের সালাম করে। এসময় বড়রা ছোটদের কিছু টাকা উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। এটাই সালামি।

অধিকাংশই ঈদের আনন্দ বলতে গেলে শুরু করেন ছোটবেলার ঈদের স্মৃতিকাতরতা দিয়ে। ছোটবেলার ঈদের আনন্দ ছিল অন্যরকম। সবচেয়ে বেশি আনন্দ ছিল ঈদের দিন সকালে নতুন জামা-কাপড় পড়ে ঈদের সালামি কিংবা ঈদি সংগ্রহ করা।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈদ আনন্দের ধরনে পরিবর্তন এলেও পাল্টায়নি ঈদ সালামির রীতি। শুধু পরিবর্তন হয়েছে দেওয়া-নেওয়ার প্রথায়।

ছোটবেলায় সালামি পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকলেও, বড় হতে হতে সালামি দেওয়ার হার বাড়ে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সালামি পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার অঙ্কটাও বাড়তে থাকে।

যুগ বদলালেও চিরাচরিত এই চিত্র চলছেই। এখনো ছোটরা বড়দের কাছ থেকে আশা করেন চকচকে নতুন নোটের ঈদ সালামি। বয়স যাই হোক, সম্পর্কে বড় হলেই ঈদ সালামি দেওয়া যেন অলিখিত নিয়ম।

নব্বইয়ের দশকের তরুণ-তরুণীরাও মনে করতে পারবেন স্মার্টফোন এতোটা সহজলভ্য হওয়ার আগের ঈদ সালামি কথা। কে কত টাকা ঈদ সালামি পেল, তা নিয়ে সহপাঠী ও ভাইবোনদের মাঝে চলত নীরব প্রতিযোগিতা। জামানো টাকা দিয়ে দোকানে গিয়ে পছন্দের খাবার কিনে খাওয়ার এক অকৃত্রিম আনন্দ ছিল।

এখন হয়তো সালামির আর্থিক প্রয়োজন না থাকলেও রয়েছে সালামি পাওয়ার সেই প্রশান্তি।

ঈদ সালামি মানেই নতুন টাকা। ব্যাংক থেকে আগেই সংগ্রহ করে রাখা হয় নতুন নোট। ছোট-বড় অঙ্কের কয়েক ধরনের নোট বান্ডল করে পকেটে রাখেন বড়রা। সেখান থেকেই সালামি দেন ছোটদের।

ছোটরাও নতুন নোট পেয়ে খুশি হয়। সালামি পাওয়া নতুন টাকার নোটগুলো যত্নে রাখে ব্যাগে বা পকেটে।

আগে দুই বা পাঁচ টাকার সালামিই ছিল সাধারণ বিষয়। এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে সালামির অঙ্কটা। এখন সর্বনিম্ন ১০ টাকার চকচকে নোটে শুরু সালামির অঙ্ক। আর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় টাকার অঙ্ক বেড়ে পাঁচশ, হাজার বা আরও বেশি হয়। তবে, সালামির অঙ্ক যাই হোক, এতেই লুকিয়ে থাকে ঈদের আনন্দ।

বর্তমানের ডিজিটাল যুগে সালামি দেওয়াতেও এসেছে নতুনত্ব। এখন অনলাইনের মাধ্যমেও ঈদ সালামি আদান-প্রদান হয়। ঈদ সালামির আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে সুযোগ দিচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। তাই দূরে থাকলেও এখন সালামি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, মোবাইলের মাধ্যমেই ঈদ সালামি পৌঁছে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে।

এছাড়া সালামি দেওয়া-নেওয়ার পরিধিও এখন বেড়েছে বহুগুণে। আগে পরিবার আর স্বজনদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ থাকলেও, এখন বন্ধুমহল, কর্মস্থলেও চলে সালামি আদান-প্রদান। ঈদের আগে, পরে কিংবা ঈদের দিনই দেখা হলে সালামি দেওয়া-নেওয়ার ধুম পড়ে। অফিসের বস কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঈদ সালামি দেন বয়সে ছোট সহকর্মীদের। ঈদ উৎসবে যা একইসঙ্গে আনন্দের এবং আন্তরিকতার।

অন্তত ঈদকে কেন্দ্র করে হলেও সালামির এই প্রথা জানান দেয় ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং সম্পর্ক।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ