ঢাকা, রোববার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৃশ্যপটে তারেক কন্যা!

প্রকাশনার সময়: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪১

রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন- এতে কার্যত কোনো ফলাফল আসছে না; এজন্য তার নেতৃত্ব মানতে নারাজ দলের অনেক সিনিয়র নেতা। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরতে রাজনীতিতে আসছেন তারেক কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।

এ ব্যাপারে দলের অনেক সিনিয়র নেতাদের সায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা জিয়া পরিবারের বাইরে অন্য কারও নেতৃত্ব মানতে নারাজ। নেতাকর্মীদের কাছে জিয়া পরিবারের একটি বিশেষ মর্যাদার অবস্থান রয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যদি দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে থাকেন, তাহলে বিএনপির হাল কে ধরবে, তেমন যোগ্য ‘নেতা’কোথায়? বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা থাকলেও তা কোনোভাবেই জিয়া পরিবারের বাইরে নয়! তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে দলে ভেরাতে সিনিয়র নেতারা বারবার চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি।

এমনকি খালেদা জিয়াও চায়নি ঘরের বউ রাজনীতির মাঠে আসুক। শেষপর্যন্ত জাইমা রহমানের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কারণ তারেকের নেতৃত্ব মানতে নারাজ বিএনপির একটি বড় অংশ। তবে জাইমার বিএনপির সবার সুর এক। এমনকি খুব দ্রুতই তিনি দেশে আসছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তাকে মুক্ত করার জন্য কার্যত তেমন কোনো আন্দোলন করতে পারেনি দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সহসাই তার দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশের বাইরে থেকে বিএনপির মতো এত বড় একটি দলের নেতৃত্ব দেয়া কঠিন। এ কারণে তার নেতৃত্ব মানাতে নারাজ দলের বড় একটি অংশ। কিন্তু তা উপলব্ধি করলেও প্রকাশ্যে বলছেন না কোনো নেতা। তবে খালেদা জিয়ার নাতনি তারেক কন্যা জাইমা রহমানের দলে নেতৃত্বের বিষয়ে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

বিএনপির বারবার নির্বাচন বর্জন ও আন্দোলনে ব্যর্থতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা। দলের এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বেগম খালেদা জিয়াকে উপদেষ্টা রেখে নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নেতৃত্বে আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাইমাকে গড়ে তুলতে এখন থেকেই কাজ করার পরামর্শ তাদের। এদিকে, দলের নেতারাও মনে করেন তরুণ নেতৃত্ব এলে সুদিন ফিরবে বিএনপিতে। এজন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের কাউন্সিল জরুরি।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিয়া পরিবারের বাইরে দলের নেতাকর্মীরা অন্য কারও নেতৃত্ব মেনে নেবে না। এজন্য বিএনপির নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের বিকল্প নেই।

জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতার তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে দলের নেতৃত্বে আনার জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া চান না জিয়ার পরিবারের আর কেউ রাজনীতিতে এসে মামলা-হামলার মধ্যে পড়ুন। এ ছাড়া ঘরের বউ রাজনীতির মাঠে আসুক এটাও তিনি পছন্দ করেন না। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর তারেক রহমানের সহসাই দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই এটাও পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে আনার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জাইমার রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে খালেদা জিয়াও অনেকটা নমনীয় বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, দলের জন্য বেগম খালেদা জিয়া যা করেছেন সেই হিসেবে দল তার জন্য কিছুই করতে পারেনি। তিনি বন্দি হওয়ার পর রাজপথে তেমন কোনো ভূমিকা দেখাতে পারেনি দলের নেতাকর্মীরা। আন্দোলন প্রশ্নে বিএনপিতে মত-ভিন্নতা আছে। শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও আছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভাবনার সঙ্গে কেন্দ্রের ভাবনার মিল নেই। ফলে খালেদা জিয়ার সহসা কারামুক্তির সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না। কোনোভাবে তিনি যদি জেল থেকে বাইরেও আসেন, তাহলেও তার পক্ষে দলের নেতৃত্ব দেয়া কতটুকু সম্ভব হবে সে প্রশ্নও আছে।

নেতারা আরও জানায়, বিএনপির নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পুনর্গঠনের কথা বললেও পকেট কমিটি ছাড়া তেমন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। লম্বা সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতৃত্বের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বারবার হতাশা সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে না পারার মূল কারণ নিরপেক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। তবে তারেক কন্যা রাজনীতিতে এলে তা স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করবেন সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন, নানা কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া কঠিন। ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই। এতে দেশে দলের অভ্যন্তরে এক ধরনের নেতৃত্ব সংকট তৈরি হতে পারে। তাই তারেক রহমানের কন্যাকে নেতৃত্বে আনার কোনো বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। যদিও তাকে অপছন্দ করেন এমন লোকের সংখ্যাও বিএনপিতে কম নেই। তবে তারা প্রকাশ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। তারেক রহমানের সমালোচনা বা বিরোধিতা করে কারও পক্ষে বিএনপি করা সম্ভব নয়। লন্ডনে থেকে তারেক যেভাবে দল পরিচালনা করেন, সেটাও অনেকের কাছে অপছন্দ। মুখ ফুটে কেউ কিছু না বললেও তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। দলের নেতাকর্মীদের কাছে এটা পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমানের পক্ষে দেশে ফেরা সম্ভব নয়। তিনি নিজেও সেটা জানেন এবং বোঝেন।

সেজন্য সরকার পতনের একদফার আন্দোলন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। তবে দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই বুঝতে পেরেছেন বিএনপির চলমান নেতৃত্বে সরকার পতন ঘটানো যাবে না। আবার সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলার বাস্তব অবস্থাও দেশে বিরাজ করছে না। খুব দ্রুত অবস্থা বদল হবে বলেও মনে হয় না। জানা গেছে, বারবার নির্বাচন বর্জন ও আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকটাই হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। এতে করে দিন দিন বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এখন নেই মাঠের কোনো আন্দোলন এবং কোনো দিকনির্দেশনা। সব মিলিয়ে বিএনপি একটি নাজুক সময় পার করছে। দলটি কবে, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা কেউ বলতে পারেন না। চরম হতাশা নিয়ে বিএনপি নেতারা এখন সুদিন ফেরার আশায় বসে আছেন। তবে কীভাবে সুদিনের দেখা মিলবে তার কোনো পথনির্দেশনা তাদের সামনে নেই।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। তবে ৯ বছরের মধ্যে একটি কাউন্সিলও হয়নি। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কাউন্সিল করা যায়নি। মূল দলের আগে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় দলটি। মূল দলের পুনর্গঠনের মাধ্যমে জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটি সহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য রয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ