ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নির্মাণকাজ শেষ হয় না, রাস্তাও ঠিক হয় না

প্রকাশনার সময়: ০৪ মে ২০২৪, ১৮:২৯

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব, নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার ভারী যানবাহন চলাচলসহ নানা কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অভন্তরীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কের পিচের কার্পেট উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। এছাড়াও ধুলো ময়লা জমে রাস্তাগুলো হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগী। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যাতায়াতে অসুবিধার পাশাপাশি যানবাহনেও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় রাস্তা ঠিক করা যাচ্ছে না। তবে বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ালেও কাজ শেষ হচ্ছে না। কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে রাস্তাও ঠিক করা হচ্ছে না।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভারী মালবাহী ট্রাকগুলো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করায় যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে কয়েকটি সড়ক। তাই রিকশা ও অটোতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া কয়েকটি রাস্তা এখন হাঁটারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে মাত্রারিক্ত ধুলোবালির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। অন্যদিকে বর্ষাকালে পানি জমে কর্দমাক্ত রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে মাদার বখশ হলের সামনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনের রাস্তা দুটির বিভিন্ন স্থানের পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার চারুকলা থেকে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন হয়ে খালেদা জিয়া হলের পাশেও বেহাল রাস্তা। অতিরিক্ত ধুলোর কারণে এই রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও অসুবিধা হচ্ছে।

এছাড়া শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে মাদার বখশ হল পর্যন্ত বেশির ভাগ সড়কের অবস্থাও একই। তাছাড়াও ক্যাম্পাসের ছোট-বড় প্রায় সকল রাস্তারই পিচ উঠে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এএইচএম কামারুজ্জামান হল, ১০তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুল ও অডিটোরিয়াম সংস্কারসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে বড় চারটি ভবনের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর সূত্রে আরও জানা যায়, নির্মাণাধীন এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে করোনা মহামারি, এক শিক্ষার্থী ও দুই শ্রমিকের মৃত্যু এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনও ভবনেরই নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্যাম্পাসে বেশ কিছু ভবন নির্মাণাধীন আছে। এসব ভবনের মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য ভারী ট্রাক চলাচল করতে হয়। রাস্তাগুলো যদি সাময়িক ঠিক করা হয়, তবে ট্রাক চলাচলে তা আবারও খারাপ হয়ে যাবে। যদি নির্মাণাধীন এসব কাজের মেয়াদ আর না বাড়ে, তবে আমরা শীঘ্রই রাস্তা এবং ড্রেনের কাজ শুরু করবো।

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই কেন রাস্তার সংস্কার হয়নি জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এই প্রকল্পগুলো অনেকদিন আগে শুরু হয়েছে। তখন জানা যেত না ক্যাম্পাসের কোথায় কাজটি হবে। তাই আগে থেকে আমরা রাস্তা সংস্কার করে কাজ শুরু করতে পারিনি। পরবর্তীতে যে কাজগুলো হবে, তখন আর এই সমস্যা থাকবে না।

রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে বিনোদনপুর গেট, হাবিবুর রহমান হল ও মাদার বখশ হলের দিকে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কাজের কারণে এইসব রাস্তার সংস্কার বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। প্রশাসনের উচিত অজুহাত না দিয়ে এসকল কাজের পাশাপাশি রাস্তাও সংস্করণের কাজ চালিয়ে যাওয়া। প্রয়োজনে আলাদা সেল গঠন করে বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখার কথাও জানান এই অধ্যাপক।

দুর্ভোগের বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাদিউল ইসলাম হাদি বলেন- রাবির ৫০ বছরের মাস্টারপ্লানের অংশ হিসেবে যে অবকাঠামোগুলো গড়ে উঠছে, তা প্রশংসিত। তবে একে কেন্দ্র করে আশেপাশের রাস্তার যে বেহাল দশা তা আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে বিনোদপুর গেইট থেকে শহীদ হবিবুর রহমান হল পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের একদম অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কতদিন আর এই রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে জানি না। তবে রাস্তাগুলোকে আগে সংস্কার করে ভারী যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তুললে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিম তাসফিয়া হক বলেন, দীর্ঘদিন মেয়েদের হলের রাস্তা খারাপ ছিলো। কয়েকদিন আগে একটা রাস্তা ঠিক করা হয়েছে। তবে খালেদা জিয়া হলের পাশ থেকে চারুকলা যাওয়ার তুত বাগান সংলগ্ন রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচণ্ড ধুলোয় রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। এই রাস্তায় পিচ বা ইট কোনোটাই নেই। রিকশাতে গেলেও অন্য রাস্তার তুলনায় বেশি ভাড়া দিতে হয়। সামনে বর্ষা আসছে, তখন আবার কাদায় চলাফেরা করা কষ্ট হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো দ্রুত যেন ক্যাম্পাসের অভন্তরীণ রাস্তাগুলো ঠিক করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, প্লান অনুযায়ী এক এক করে সব কাজের এস্টিমেট করা হচ্ছে। বাজেট এবং অর্থ সবকিছুই দেখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে। তবে দ্রুতই রাস্তাগুলো ঠিক করার আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপ-উপাচার্য।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ