ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫

তীব্র তাপদাহে প্রতিদিনই মরছে মুরগি, বিপাকে খামারিরা

প্রকাশনার সময়: ০৪ মে ২০২৪, ২০:১৯

সম্প্রতি তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ আশপাশের অঞ্চলে শত শত খামারিরা মুরগি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তেম‌নি এক খামারি শা‌মিম হো‌সেন জানান, প্রায় ১০ বছর যাবত মুরগির খামার পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু গত ঈদের পরে থেকে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় খামারের মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছেন। এরকম বিপাকে আর আগে পড়েননি বলে মন্তব্য করেন।

চলমান তাপদাহের কারণের হিটস্টোকে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই তার খামারে প্রায় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের ২-৩টি করে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি মারা যাচ্ছে। আর গত ১১ দিনে তার অন্তত ১২-২০টি মুরগি মারা যাওয়ার পাশাপাশি আরও ৪০-৪৫টি মুরগি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। যদিও মুরগি রক্ষায় খামারের দরজা জানালা খোলা রাখা, ফ‌্যান চালা‌নোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তাতেও তেমন ফল পাওয়া যা‌চ্ছে না। আর এ অবস্থা শুধু খামারি শামিমেরই নয় বরং সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ আশপাশের অঞ্চলে শত শত খামারির।

এই গরমের কারণে অনেক খামারি খামারে নতুন করে আর মুরগির বাচ্চাও তুলছেন না। এ কারণে সব ধরনের মুরগির বাচ্চার দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে গেছে।

তাড়াশের বোয়া‌লিয়া এলাকার খামারি মিলন জানান, তীব্র গরমের কারণে খামারের মুরগি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর ক্ষতির সম্ভবনায় সময়ের আগেই খামারের মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক খামারি। এ কারণে এ অঞ্চলের হাট- বাজারে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম কেজিতে ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় এ অঞ্চলে তাপমাত্রা রেকর্ড করেছেন ৩৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। আর বেলা তিনটার পরিমাপে তাপমাত্রা রেকর্ড করেছেন ৪১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে দুপুরের পর বেলা ৩টার দিকে দেড় সপ্তাহ যাবত তাপমাত্রা বাড়ে। যা দিন রাত মিলে প্রায় ১৮ দিনের গড় তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌর এলাকায় মোট ১৫০টি নানা জাতের মুরগির খামার রয়েছে। এ ছাড়া তাড়াশ এলাকার আশপাশে আরও অন্তত সাড়ে ৩শ খামার চালু আছে। যাতে হাজার হাজার মুরগি লালন পালন করছেন খামারিরা। আর বয়ে যাওয়া প্রবল তাপদাহে লেয়ার, ব্রয়লার, প্যারেল, সোনালি জাতের মুরগির মাংসের উৎপাদনে ছন্দপতন ঘটেছে।

এ দিকে তাড়াশ পৌর বাজারসহ উপজেলার হাট-বাজারে শুক্রবার ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। যা ১৫ দিন পূর্বেও ছিল ২২০। সোনালি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা পূর্বে ছিল ৩৪০। লেয়ার ৩২০ যা পূর্বেও ছিল ৩৪০। প্যারেল ৩১০ টাকা, যা পূর্বেও ছিল ৩৮০। দেশি ৪৫০ টাকা, পূর্বেও ছিল ৫১০ টাকা। আর এভাবেই প্রকার ভেদে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম কমেছে।

খামারিরা বলছে, মুরগির খাবার ওষুধসহ নানা উপকরণে যে খরচে মুরগির মাংস উৎপাদন করেছেন। মুরগি মরার ভয়ে তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অপর দিকে প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা বলছেন, ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কোন কোন মুরগির জাতের জন্য সহনীয়। যদিও এখন চলছে ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. অলিউল ইসলাম খামারে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, খামারে মুরগি ঘন না রাখা, সূর্যের আলো যেন সেডে না ঢোকে সে ব্যবস্থা, মুরগিকে দিনের শীতল সময়ে অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া, টিনের চালে চটের বস্তা ভিজিয়ে দেওয়া এবং সিলিং ফ্যান ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ