ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

‘বেতন আটকে রেখেছি, যেভাবে খুশি নিউজ করেন’

প্রকাশনার সময়: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৪ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি ও অফিস সহকারী মোয়াজ্জেম হোসেন সুমনের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। একে অপরকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করেছেন। সেই ক্ষোভ থেকে অফিস সহায়ক সুমনের বেতন-ভাতা আটকে দেন। তার বেতন আটকে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন তিনি।

বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি বলেন, অফিসের নিয়ম কানুন না মানায় এবং অফিসে অনুপস্থিতির কারণেই আমি তার বেতন শিটে স্বাক্ষর করিনি। এ ঘটনায় যদি আমার কোনো শাস্তি হয় হবে। আপনি যেভাবে খুশি নিউজ করুন।

এ দ্বন্দ্বের কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব জলি অফিস সহকারীর বেতন পত্রে স্বাক্ষর করেননি বলে অকপটে স্বীকার করেন। দুজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও এ দ্বন্দের কারণে পরিষদের অন্য ৩ অফিস সহকারীর বেতন আটকে আছে।

তারা জানান, গত দুই মাসের বেতন না পেয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অভ্যান্তরীণ ঝামেলার কারণে আমাদের বেতন আটকে আছে।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের অধীনে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরে বেতন পরিশোধ করা হয়। এদিকে বেতনপত্রে অফিস সহায়ক সুমনের নাম বেতন শিটে না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম তিনজনের বেতন শিটে স্বাক্ষর করেননি। ফলে চার কর্মচারীর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

অফিস সহকারী মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করেন। তাই তিনি বেতনপত্রে স্বাক্ষর করছেন না, যাতে আমি বেতন তুলতে না পারি। এমনকি আগের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপির আমলে পাস হওয়া আমার তিন মাসের ভ্রমণ বিলও তিনি আটকে দেন। আমার দুমাসের ছুটির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন বলে জানান তিনি। আরেক অফিস সহকারী আজিম উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের দুই মাসের বেতন না পাওয়ায় সংসারের খরচ মেটাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর অঞ্জনা দত্ত জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন ছাড়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানুয়ারি মাসের বেতন শিট তৈরি করতে বলেছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিটে স্বাক্ষর না করায় সবার বেতন আটকে দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, বেতন আটকে রাখার এখতিয়ার কারো নেই। কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাকে বকশিশ দেওয়া হয়। আমি পরিষদের কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন শিটে স্বাক্ষর করেছি কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন তা আটকে রেখেছেন তা বুঝতে পারছি না। তবে একজন কর্মচারী ছাড়া বাকি তিনজনের জানুয়ারির বেতনপত্র আমার কাছে আনা হলে আমি নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে তাতে স্বাক্ষর করিনি।

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি বলেন, অফিস সহকারী মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন নিয়মিত অফিস করেন না। দায়িত্বে অবহেলা এবং অফিসের নিয়মকানুন মানেন না। গত দুমাস অফিসেই আসেননি। তাই তার নাম বাদ দিয়ে বাকি তিনজনের বেতনপত্র প্রস্তুত করতে বলেছি। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেননি, তাইতো সবার বেতন আটকে রাখা হয়েছে। বাকি তিনজনের বেতন কেন আটকে আছে সেটির জন্য প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যাব।

এভাবে বেতন আটকে রাখার কোনো এখতিয়ার আপনার আছে কি না, এটি কতটা আইনসিদ্ধ এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নব বিবি জলি বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো তোয়াক্কা না করে আমাকে বারবার হয়রানি করে আসছেন। এছাড়া অফিসেও আসেন না। তবে শুনেছি দুমাসে ছুটিতে রয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন। তার ছুটি সংক্রান্ত কোনো আদেশ এখনো পাইনি। এ কারণে তার বেতন আটকে রেখেছি। এই ঘটনায় যদি আমার কোনো শাস্তি হয় হবে। আপনারা যেভাবে খুশি নিউজ করতে পারেন। ছুটির আদেশ পেলে তবেই তার বেতন শিটে স্বাক্ষর করব বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২২ নভেম্বর মাসে জয়নব বিবি জলি উপজেলা পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে অফিস সহায়ক সুমনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

এর পরপর অফিস সহায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম আল মামুনের অনুসারী হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন বলে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার কাছে পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ