ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

গবাদিপশু পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষেরা

প্রকাশনার সময়: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৩২ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৩৬

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্ন। তা ছাড়া প্রতি বছর বন্যা, খরা ও নদী ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এসব চরের বাসিন্দাদের কৃষির পাশাপাশি আয়ের অন্যতম উৎস গবাদিপশু পালন। গরু-ছাগল পালনে বাড়তি আয় করছেন তারা। দূর হচ্ছে পরিবারের অভাব-অনটন।

জগন্নাথপুর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা ১২টি উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ১২ উপজেলায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৫২টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে দেশি জাতের গাভি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৬টি, সংকর জাতের গাভি ৫০ হাজার ১২৪টি, দেশি জাতের বকনা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯৮টি, সংকর জাতের বকনা ৩৯ হাজার ৮৫৭টি, দেশি জাতের ষাঁড় ও বলদ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩২টি, সংকর জাতের ষাঁড় ও বলদ ৫৫ হাজার ৩৯৬টি, দেশি জাতের বাছুর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬টি, সংকর জাতের বাছুর ৩৫ হাজার ৭২৩টি। এ ছাড়া মহিষ রয়েছে ৯ হাজার ৫২৭টি, ছাগল ৬ লাখ ১২ হাজার ৬২টি এবং ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩১টি।

জানা গেছে, নলুয়ার হাওর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহত্তম হাওড়। উপজেলাবাসীর ধান চাষের সব চেয়ে বড় উৎস এর নলুরায় হাওড়। এ ছাড়া ও বর্ষাকালে নলুয়ার হাওড় এর মাধ্যমে নদীপথে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়। উপজেলা মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত একটি স্থান। দেশী হরেক রকমের মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নলুয়ার হাওড় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে আসছে। এই হাওড় জগন্নাথপুর উপজেলা ছাড়াও দিরাই, ছাতক উপজেলায় বিস্তৃত।

জেলার ছোট বড় ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল। এসব চরাঞ্চলে বসবাস করছেন প্রায় ১৫ লক্ষাধিক মানুষ। চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের একমাত্র পেশা কৃষি।

চরে বসবাসরত মানুষের বৃহৎ অংশই অতিদরিদ্র। তাদের মধ্যে বড় অংশই খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত। সংবিধানে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষাসহ যেসব চাহিদা অনুসৃত রয়েছে, তার কোনোটিই পায় না চরবাসী। তাই নিরন্তর দুঃখ-কষ্টের এক বঞ্চনাময় জীবন অতিবাহিত করতে হয় তাদের। অবশ্য এই বঞ্চনা এক দিনের নয়, দীর্ঘদিনের। ফসল উৎপাদনের সুযোগ কম থাকা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি সব ধরনের মৌলিক সেবার অপর্যাপ্ততা, কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকা, খাদ্যাভাব, নদী ভাঙনসহ বহুমুখী দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার কারণেই চরে বসবাসরত মানুষকে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। নদী ও জীবন প্রকল্পের গবেষণামতে, এখনো চরের ৬৫ শতাংশ মানুষ বছরের বিভিন্ন সময়ে কমবেশি খাদ্যকষ্টে ভুগে থাকে।

তা ছাড়া প্রতি বছর নদ-নদীর ভাঙনে ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। এই পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলের জমিতে ধান, কাউন, বাদাম, চিনাসহ শুধু মৌসুমি ফসল চাষ করে সংসার চলছে না তাদের। তাই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে গবাদিপশু পালনই ভরসা হয়ে উঠেছে এখানকার বাসিন্দাদের।

সদরের জগন্নাথপুর নলুয়া হাওরের বাসিন্দা মানিক মতি বলেন, আমরা চরে থাকি। আমাদের চারদিকে নদী ও ভাঙন। এখানে আবাদ বসত হয় না। যেটুকু আবাদ হয় তা তো বন্যায় শেষ করে দেয়। আমরা অন্য এলাকা থেকে গরু (আদি) বর্গা আনি। পালন করার পর একটা বাছুর হলে সেটা কিছু দিন লালন পালন করে বিক্রি করে ভাগ করে নিই। বর্তমানে আমার বাড়িতে চারটি গরু আছে। বছরে দেখা যায় ২০-২৫ হাজার টাকা আসে গরু বিক্রি থেকে।

ওই এলাকার রহিম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো কাজ-কর্ম নেই। গরু বর্গা এনে এখানকার খোলা মাঠে পালন করি। গরু পালন করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। আমাদের এখানে কম-বেশি প্রতি বাড়িতে গরু আছে। সবাই গরু পালন করে।

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমাদের নলুয়ার হাওরের চরে কৃষি আবাদের পাশাপাশি গরু পালন করি। গরু দিয়ে যে লাভ হয় তা দিয়ে জীবনযাপন করি। আমরা চরের লোক দুর্যোগের সঙ্গে সব সময় মোকাবিলা করেই বেঁচে থাকি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক। বাইরে গিয়ে টুকটাক কাজ করে আনি, আর গরু পালন করে ভালোই চলি।

উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার চিলাউরা ইউনিয়নে কুশিয়ারা, নলজুরসহ দুইটি টি নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীর অববাহিকায় চর দ্বীপসহ প্রায় জনসংখ্যা মোটট ৩৪,৫০৮। এখানে প্রায় ৩৪,৫০৮ পরিবারের বসবাস। দেখা যায় তাদের স্বামী-সন্তান বাইরে কাজ করে আর বাড়িতে নারীরা গরু পালন করে অনেক লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে তাদের আয়ের উৎস হচ্ছে গরু পালন।

জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. খালেদ সাইফুল উল্লাহ বলেন, সুনামগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্নমানের। জীবনযাত্রারমান উন্নয়নে তারা গবাদিপশু পালনের ওপর নির্ভর করে। চরাঞ্চলের কাছে ঘাসের অভাব হয় না। গরু-ছাগল মাঠে ছেড়ে দিয়ে লালন-পালন করেন তারা। এতে তাদের খাদ্য খরচ লাগে না, আবার গবাদিপশু সুস্থ থাকে। আমাদের বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ