ঢাকা, শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জৌলুস হা‌রি‌য়ে‌ছে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা

প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২৮ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৩৪

মেলা এক গ্রামীণ সংস্কৃ‌তি, যার প্রচলন শুরু হ‌য়ে‌ছে বহু বছর আগে থে‌কেই। তেম‌নি এক‌টি মেলার নাম বারুহাস মেলা। যা শুরু হ‌য়ে‌ছে প্রায় দেড়শত বছর আগে আর জমিদার আমলে থে‌কেই গড়ে উঠে‌ছে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী এই বারুহাস মেলা।

সেই মোতাবেক এ বছরের মেলা মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) শুরু হয়েছে। য‌দিও গতকাল বিকেল থে‌কেই শুরু হ‌য়ে‌ছে মেলা।

মেলার আয়োজক সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর চৈত্র চন্দ্রিমার ১৩ তারিখে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদর থেকে ১৬ কি: পশ্চিমে জমিদার খ্যাত বারুহাস বাজার চত্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ত‌বে মূল মেলার পরের দিন বুধবার অনুষ্ঠিত হয় বউ মেলা। যে মেলা‌তে গ্রা‌মে ও আশপা‌শের গ্রা‌মের বউ'রা তা‌দের প্রয়োজনীয় জি‌সিন পত্র কেনাকাটা ক‌রে। মেলা উপল‌ক্ষ্যে ঝি জামাই বা‌ড়ি‌তে আন‌তেই হ‌বে এমন রেওয়াজ বহু‌দিন থে‌কে চ‌লে আস‌ছে এই এলাকার মানু‌ষের ম‌ধ্যে। স্থানীয়রা বারুহাস মেলার উৎসবকে সম্প্রতির মি‌লোন মেলা হিসা‌বেই ম‌নে ক‌রে।

স্থানীয় নিহার চৌধুরী, নুর মোহাম্মদ, মাসুদসহ একা‌ধিক ব‌্যক্তির সঙ্গে কথা ব‌লে জানা যায়, ৭০ দশক থেকে ৯০ দশক সময়েও এ মেলার সুনাম ছিল উত্তরবঙ্গজুড়ে। বগুড়া, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা সহ দূর-দুরান্তের জেলা থেকে শৌখিন দর্শনার্থীরা মহিষ ও গরুর গাড়ির বহর নিয়ে মেলায় আসতেন। মেলার এক পাশে তাবু টানিয়ে করতেন মেলার কেনাকাটা। সে সময় মূলত বারুহাস মেলা ছিল ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব। মেলার ১ মাস আগে থেকেই চলতো নানা প্রস্তুতি। বাড়িতে লোক কুটুমকে দাওয়াত করা ঝি জামাই আনা, বাড়ি লেপা, মুড়ি ভাজা সহ যাবতীয় কাজ করার জন‌্য প্রায় ১ মাস আগে থেকেই বা‌ড়ির লোকজন বি‌শেষ ক‌রে মে‌য়েরা ব্যস্ত হয়ে প‌ড়ে।

মেলা উপল‌ক্ষ্যে জামাইদের উপঢোকন বা পরবি দেওয়ার রেওয়াজ চ‌লে আস‌ছে সেই প্রথম থে‌কেই। জামাইরাও তা‌দের সাধ‌্যম‌ত বড় মাছ, মাংস ও মিষ্টি কিনে শ্বশুর বাড়িতে ফিরতেন।

বর্তমা‌নে এই মেলার জৌলুস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখন মেলার জৌলুস একেবারেই কমে গেছে। এক সময় বারুহাস মেলা ছিল ২০ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব। এখন সেই মেলার উৎসব বল‌তে গে‌লে শুধু মাত্র বারুহাস গ্রাম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মেলার জৌলুস ক‌মে যাওয়ার কার‌ণের ম‌ধ্যে র‌য়ে‌ছে, মেলার নির্ধারিত জায়গা সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মানুষের মানু‌ষিকতার প‌রিবর্তন সহ সহজলভ‌্য বাজার ব‌্যবস্থা। এখন হা‌তের নাগা‌লেই বড় বড় বাজার শ‌পিংমল। যেখা‌নে দেশ বি‌দে‌শের আকর্ষণীয় পণ্য সাম‌গ্রী সা‌জি‌য়ে রাখা হয় ক্রেতা‌দের জন‌্য। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামীণ জীবনের এই লোকজ সংস্কৃতি যা আমাদের দেশের নিজস্ব সম্পদ, একসময় হা‌রিয়ে যা‌বে। যেম‌নিভা‌বে হারি‌য়ে যা‌চ্ছে দেড়শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বারুহাস মেলা। এভা‌বে চল‌তে থাক‌লে গ্রামীণ ঐতিহ্য মেলার স্থান হ‌বে যাদুঘ‌রে। তাই এটাকে টিকিয়ে রাখা সম‌য়ের দাবি।

নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ