ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নিষ্ক্রিয়দের তালিকা লন্ডনে

প্রকাশনার সময়: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৩

আন্দোলনে আশানুরূপ ফল না আসার কারণ ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছে বিএনপি। গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নিষ্ক্রিয় নেতাদের কারণে এমন ফলাফল হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনে জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে সক্রিয় নেতাকর্মীদের আনা হচ্ছে নেতৃত্বে।

তাছাড়া আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের খোঁজ করা হচ্ছে। তাদের তালিকা করতে দলের একটি টিমকে মাঠ জরিপে নামানো হয়েছে। এতে করে পদধারী অনেক নেতা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। মূল ও অঙ্গ দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তার জন্য পদ হারানোর ভয়ে প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এরই মাঝে আংশিক তালিকা লন্ডনে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই তালিকা ধরে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচিতে জনস্রোতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয় বিএনপি। কিন্তু ২৮ অক্টোবর থেকে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কার্যকরী নেতারা আটক হওয়ায় দলটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যাদের আন্দোলন সমন্বয়ের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি।

এমনকি অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনের নামে ছিলেন একেবারেই নিরাপদ স্থানে। সঙ্গত কারণে নির্বাচন ঠেকানোর মতো কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি নেতাকর্মীরা। এমন কি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই দেয়া হয় অসহযোগ আন্দোলন। সমন্বয়হীনতার কারণে শেষ ধাপের আন্দোলনেও সফলতার মুখ দেখেনি দলটি। এ কারণে ওইসব নেতাদের ওপর ক্ষিপ্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বিএনপি নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দলের মধ্যে ত্যাগী এবং নিষ্ক্রিয় নেতারা চিহ্নিত হয়েছেন। বলা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য এটা ছিল একটা পরীক্ষা। যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাজপথে কর্মসূচি পালন করেছে এবং যারা গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তারা কখনো সমান হতে পারে না। যারা ঝুঁকি নিয়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি সফল করেছে তদের মূল্যায়ন করা হবে এবং যারা গা-ঢাকা দিয়েছেন তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের কমিটি ঢেলে সাজাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য তৃণমূল পর্যন্ত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় শিগগিরই অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে দিতে যাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এসব সংগঠনে আগামীতে কাদের নেতৃত্বে আনা যায় এবং কমিটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের কোথায় পদায়ন করা হবে— সেগুলো নিয়ে এখন দলের ভেতরে কাজ চলছে। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কাজ হাতে নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় যারা মাঠে ছিল এবং যারা ছিল না তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এতে করে পদ-পদবির জন্য নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তার জন্য পদ হারানোর ভয়ে প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

এখন পদ পদবির জন্য যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করা হচ্ছে, আন্দোলনের জন্য এর কিছুটা ভূমিকা থাকলেও ব্যর্থ হতে হতো না। সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতি দলের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান। বৈঠকে একদফা আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।

সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সারা দেশের আন্দোলনে সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয়দের খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের আলাদা-আলাদা করে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন, যাতে ভিন্ন রিপোর্টে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগের সাংগঠনিক তথ্যভিত্তিক রিপোর্টে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এছাড়া বাকি সাংগঠনিক বিভাগের তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে নেতারা।

বিএনপির মাঠপর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। হরতাল, অবরোধ সফল করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনেকেই অমান্য করেছেন। পাড়া-মহল্লায় পর্যন্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি এমন অসংখ্য নেতা রয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে। পদে থাকা ও পদে না থাকা দুই ধরনের নেতারা রয়েছেন এর মধ্যে। দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভেতরের একটি অংশ সমালোচনা করার চেষ্টা করছেন তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকায় বিএনপির জেলা-উপজেলার ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন হচ্ছে না। নতুন করে আন্দোলনে নামার আগে এসব কমিটিগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে মাঠ জরিপে উঠে আসা যোগ্য ও ত্যাগীদের নতুন কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। যাতে দল নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শুধু মূল দল নয়, দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে।

আর এখনই যেসব সংগঠন পুনর্গঠন করা যাচ্ছে না সেসব স্থানে বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। জানা গেছে, আন্দোলনে ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে এবার নেতৃত্ব ঠিক করবে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কার্যক্রমের পর্যালোচনা হয়েছে। দলীয় পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, আন্দোলনের সময় সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মী সাধ্যমতো রাজপথে থাকার চেষ্টা করলেও দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকেরই খোঁজ ছিল না।

এ ছাড়া এর আগের নির্বাচনে দলের ছয় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দায়িত্বশীল কিছু নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আন্দোলন অনেকটা চুপসে যায়। দলের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনা হলেও আরও বেশকিছু জটিলতা তৈরি হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আন্দোলনের সময় যেসব নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের তালিকা করার বিষয়টি খুবই ভালো। এতে করে নিষ্ক্রিয়রা চিহ্নিত হবে এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পাবে। এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

আবার যদি নিষ্ক্রিয়দের তালিকায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম চলে আসে তাহলে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যেসব নেতাকর্মী আন্দোলন চলাকালে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন তাদের মূল্যায়নের বিষয়ে দল ভাবছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যারা মামলা হামলা বা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারনে কর্মসূচিতে থাকতে পারেনি সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে রাজপথ এড়িয়ে চলেছে তারা দলেই থাকবেন তবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবে না। সংগঠন পুনর্গঠন করা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

আন্দোলনের জন্য পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি, এখন সময় সুযোগ রয়েছে তাই পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিগত দিনের মূল্যায়ন রিপোর্ট উপস্থাপন করা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ