ঢাকা, শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিপদ কাচের দেয়াল!

প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৭ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৪

আধুনিককালের অবকাঠামো নির্মাণশৈলীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে কাচ (থাই গ্লাস বা আর্কিটেকচারাল গ্লাস)। বসতবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানা— সর্বত্রই কাচ ব্যবহারের ছড়াছড়ি। সৌন্দর্যের দিকটা তো রয়েছেই, আছে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারও।

কিন্তু কাচের দেয়ালে বাড়ছে তাপমাত্রা। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নতুন যেসব বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠেছে, সেসবের অধিকাংশেরই বহিরাবরণে কাচের ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। প্রতি বছরই বাড়ছে গরম। চলতি বছর এ মাত্রা আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে দুই দফা হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত তিন দিনে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অসহনীয় গরমের কারণে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধা, আয়কর আইনজীবী ও সমাজচিন্তক আহমেদ উল্লাহ ভূইয়া বলেন, কাচের দেয়ালে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগকে করে তুলছে উত্তপ্ত। সূর্যের তাপ শোষণ করতে পারছে না ভূ-পৃষ্ঠ। উত্তাপ ফেরত দেয়ায় তেতে উঠছে উপরিভাগ।

স্থপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বললেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গ্লাস বা কাচের দেয়াল দিন দিন বাড়ছে। এসব কাচ সূর্যালোককে শোষণ করতে অক্ষম। এতে প্রতিফলিত তাপ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে চরম অবস্থা ধারণ করে গরম। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের নির্মাণশিল্প নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এসব বিষয় বিবেচনায় না নেয়ায় বিপর্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগের সময় এসব কাচের দেয়াল ব্যাপক প্রাণহানিসহ আরও বিপর্যয় ঘটাবে।

একের পর এক নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। আর দেশজুড়ে এসব ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নির্মাণ করা হচ্ছে কাচের দেয়াল। দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী না হলেও এ কাচঘেরা ভবন যেন ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলছে বহুতল ভবনের এসব দেয়াল। হরহামেশাই এভাবে কাচের দেয়ালগুলোর ব্যবহার তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ানোসহ পরিবেশের এমন ক্ষতি প্রকাশ্যেই ঘটলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই।

বাণিজ্যিক ভবনের বহিরাবরণে কাচের ব্যবহার নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে এলেও এর পরিবেশগত ঝুঁকি ভাবাচ্ছে পরিবেশবিদদের। কাচে (গ্লাস) সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ায় এ ধরনের ভবনের চারপাশে বেশি মাত্রায় তাপ উদ্গীরণ হয়। আবার ভবনের তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে সারা বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা গ্রিন হাউসের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নান্দনিকতার জন্য কাচের ব্যবহারে বড় মাশুল দিতে হবে। গ্রিন হাউসের প্রভাবে বাড়বে রোগবালাই। কাচের ভবনগুলোতে এসি লাগাতে হয়। এসি ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে, আর গ্যাস ছাড়ে। এটা ওজোনস্তরের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। সিএফসি, এইচএফসি গ্যাস বাড়ার কারণে নগরের তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। কাচের ভবনের অনেক খারাপ প্রভাব আছে।

ভবনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর ধুলা-ময়লা আর শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে তারা ভবনে কংক্রিটের দেয়ালের পরিবর্তে কাচ ব্যবহার করেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণ ও কমার্শিয়াল ভ্যালু বাড়াতে কাচের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোতে প্রধানত কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু করা হয়। শীতের সময় তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। আর তাই তখন সেখানকার আবহাওয়া গরম রাখতে এবং ঘরের অভ্যন্তরভাগে সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত রাখতে মূলত সেখানে কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কাচের দেয়াল আমাদের দেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। কারণ আমাদের দেশের আবহাওয়া এমনিতেই নাতিশীতোষ্ণ। এসব দেয়াল পশ্চিমা বিশ্বের আবহাওয়া উপযোগী। এছাড়া গ্রিন হাউস ইফেক্টের জন্যও এসব দেয়াল দায়ী। এসব দেয়ালে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগকে করে তুলছে উত্তপ্ত। তাছাড়া এসব কাচের দেয়াল ভূমিকম্প কিংবা অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বিস্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে আর বিপর্যয় ঘটাবে।

পাশাপাশি উদ্ধার কর্মকাণ্ডেও ব্যাঘাত ঘটাবে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব ভবনের ব্যাপারে সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আর যাতে কোনো ভবন মালিক তার ভবনে কাচের দেয়াল দিতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে কাচের ভবন রাজধানীর তাপমাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল— এ ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া চট্টগ্রামে বেড়েছে ১ দশমিক ৯২ ডিগ্রি, খুলনায় ১ দশমিক ২৭, সিলেটে ১ দশমিক ১, রাজশাহীতে বেড়েছে সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। হিট স্ট্রোক, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগও তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ভবন নির্মাণে কাচের ব্যবহার কমানো গেলে তা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন তারা।

রাজধানীতে এ ধরনের কতগুলো ভবন আছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বাণিজ্যিক ভবনেই কাচের চাহিদা বেশি।

ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠান ডিজাইন কোড স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী আদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে ভবনের বাইরে কাচের ব্যবহার বেড়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার— এসব কারণে ভবন মালিকরা কংক্রিটের দেয়ালের পরিবর্তে কাচ ব্যবহার করতে চান। এ কাচ আসলে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। কাচ ব্যবহারে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন বলা যায় বাণিজ্যিক ভবন মানেই কাচ দিয়ে ঘেরা। বড় কোম্পানিগুলো তো আছেই, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট কোম্পানিগুলো অফিসে কাচের আবরণ করছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ভবনে কংক্রিটের চেয়ে কাচের ব্যবহার করতে আগ্রহী মালিকরা। ভবনে সহজেই সূর্যের আলো পাওয়া যায়, বাইরের সৌন্দর্যটাও দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে। কাচের একটা আলাদা কমার্শিয়াল ভ্যালু তৈরি হয়েছে। এ কাচ আসলে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। কাচ ব্যবহারে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন বলা যায় বাণিজ্যিক ভবন মানেই কাচ দিয়ে ঘেরা। বড় কোম্পানিগুলো তো আছেই, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট কোম্পানিগুলো অফিসে কাচের আবরণ করছে।

স্যাম প্রপার্টিজের ম্যানেজার সাদ মুহাম্মদ বলেন, সৌন্দর্যের দিকটা তো আছেই, সেই সঙ্গে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও আছে। কাচ ব্যবহারের কারণে ভবনে সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে আমরা ভবন বানিয়ে দেই।

কোড স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী আদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, শহরে নতুন যেসব বাড়িঘর বা অফিস ভবন গড়ে উঠেছে, সবগুলোতেই কাচের ব্যবহার হচ্ছে। ভবনের বহিরাবরণে কংক্রিটের জায়গা নিয়েছে কাচ। আবার অনেক অফিসে পার্টিশনে কাচ ব্যবহার করছে। মিটিং রুম বা অফিসার রুম আলাদা করছে এ কাচ। তবে পরিবেশের কথা বিবেচনা করে আমরা অনেক সময়ই কাচ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে চাই। পশ্চিমা বিশ্বের অন্ধ অনুকরণে আমাদের দেশের ভবন মালিকরা সুউচ্চ ভবনগুলোতে শুরু করেছেন কাচের দেয়ালের ব্যবহার। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্য কাচের দেয়াল উপযোগী ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু এসব দেয়াল আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীতে কাচের দেয়াল নির্মাণ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইমারত পরিদর্শক মো. বাদল হোসেন বলেন, রাজধানীতে নির্মিত ভবনগুলো ইটের গাঁথুনি না কাচের দেয়াল হবে তার নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।

ভবন মালিকরা কত তলাবিশিষ্ট ভবন এবং কতটুকু জমির ওপর নির্মাণ হবে এ সংক্রান্ত প্ল্যান করে রাজউক জমা দেয়। এরপর রাজউক থেকে তদন্ত সাপেক্ষে সবকিছু সঠিক থাকলে অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে নীতিমালা না থাকায় ভবন মালিকরা ভবনে ইটের গাঁথুনির দেয়াল না দিয়ে কাচের দেয়াল দিলেও আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ও বাণিজ্যিক এলাকায় বহুতল ভবনগুলোয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সুউচ্চ ভবনগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রঙের কাচের দেয়াল। শুধু নতুনভাবে গড়ে উঠা ভবনই নয় অনেক পুরোনো ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও সেগুলোর গায়ে কাচের দেয়াল লাগানো হচ্ছে। কিন্তু এসব দেয়াল আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য কতটুকু উপযোগী সে দিকে খেয়াল নেই কারোরই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দেয়ালের ব্যবহার আবহাওয়াকে দ্রুত এবং অধিকতরভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে। জানা গেছে, এনিলিড গ্লাস, হিট স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, কেমিক্যালি স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, হিটেবল গ্লাস, ইনসুলেটিং গ্লাস, টাফেন্ড গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এসব ভবন। এমনকি ভূমিকম্পের কম্পন এবং উচ্চমাত্রা কম্পনবিশিষ্ট শব্দতরঙ্গ সহনশীল সাইজমিক গ্লাস দিয়েও ভবন তৈরি হচ্ছে আজকাল।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিলুর রহমান খান বলেন, কাচের ভবনের মূল সমস্যা হচ্ছে এটা প্রচুর তাপ শোষণ করে। আরবান হিট বাড়াচ্ছে এ কাচের ভবন। যেসব দেশে কাচের ব্যবহার বেশি— সেগুলো আসলে শীতের দেশ। আমাদের দেশে ব্যাপারটা এমন নয়। বাইরের দেশ থেকে এটা আমরা কপি করছি। এটা আমাদের পরিবেশের জন্য ভালো নয়। ঢাকাসহ অনেক জায়গায় তাপমাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে, অনেক রোগবালাইও বাড়ছে। আমরা যদি তাপ না কমাতে পারি তাহলে তা জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এজন্য পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ইমারত বিধিমালায় উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর পরিকল্পনাবিদ দিলবাহার আহম্মেদ বলেন, ভবন মালিকগন তাদের ভবনে কাচের দেয়াল দেয়ায় নগরীর আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে নীতিমালা না থাকায় এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বুয়েটের সিভিল বিভাগের প্রফেসর সফিউল বারী বলেন, রাজধানীর ভবনগুলোতে কাচের দেয়াল দেয়ায় নগরীর আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট করছে পরিবশে। আর ভবনগুলোতে কাচের দেয়াল দেয়ার বিষয় নীতিমালা না থাকলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তর ও রাজউককে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

বেসরকারি হাউজিং প্রতিষ্ঠান ক্রিডেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিল্লুল করিমের মতে, ইট, বালি সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল নির্মাণের চেয়ে কাচের দেয়াল নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল। এ ধরনের কাচের দেয়াল পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি। এ ধরনের দেয়ালের স্থায়িত্বও কম। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কাচের দেয়ালের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

তবুও ভবন মালিক অথবা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সৌন্দর্যের কারণে তাদের স্থাপনায় পরিবেশের ক্ষতিকারক এসব কাচের দেয়াল ব্যবহার করে। হয়তোবা কাচের দেয়াল ব্যবহারকারীদের অনেকেরই এতে পরিবেশের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ধারণা নেই। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য ভূমিকম্পের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। আর এ ভূমিকম্পের জন্য কাচের দেয়াল মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

কখনো ভূমিকম্প দেখা দিলে ভবনগুলোতে থাকা কাচের দেয়ালের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। বাংলাদেশের জন্য দেয়াল, খোলা জানালা, বাতাস চলাচলের উপযোগী জানালা, উঁচু সিলিং এগুলোই উপযোগী বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ১৯২৮ সালে বিশ্বে প্রথম কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ সালের দিকে এ ধরনের দেয়ালের ব্যবহার বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কাচের দেয়ালের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবন নির্মাণে প্রথম কাচের দেয়াল ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, মতিঝিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণে কাচের দেয়ালের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কাচের দেয়ালের ব্যবহার এখনো সীমিত পর্যায়ে আছে। যদি এখনই এসব দেয়াল নির্মাণের নীতিমালা তৈরি করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে রাজধানীসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। আর তাই নীতিনির্ধারণী মহলের জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ