ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিকতার ছোঁয়া

প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৪৫ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫০

স্বাস্থ্যসেবার মনোন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং সেবাপ্রার্থীদের সন্তুষ্টিসহ নানা দিক বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলার দুই কর্মকর্তাকে প্রশংসাপত্র দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

তারা হলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের।

তিন বছর আগেও সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ছিল জরাজীর্ণ। শৃঙ্খলা ও তদারকির অভাবে সেবার মান নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন। সব বদনাম ঘুচিয়ে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া আর স্বাস্থ্যসেবার আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন তরুণ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের। তার গতিশীল নেতৃত্ব এবং কর্মদক্ষতায় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের অভিনন্দন বার্তাও পেয়েছেন।

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এখন স্থানীয় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মানুষ সহজেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং এতে সেবাপ্রার্থীরাও সন্তুষ্ট। অন্যদিকে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত হওয়ায় এখন প্রসূতি মায়েদের নির্ভরশীলতার প্রতীক।

এরআগে, নিয়মিত রুটিন কাজ করেও প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা ও প্রসূতি মায়েরা অন্যান্য রোগীদের মতো সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যেতেন। কিন্তু ২০২১ সালের ৭ মার্চ বর্তমান পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউল কাদের যোগদানের পর এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবার মান বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অংশীজন সমাবেশ, গণশুনানি এবং নৈতিকতা কমিটির সভা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়।

এসব কেন্দ্র এখন প্রসূতি সেবার অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। গর্ভবতী মহিলা এবং মায়েদের জন্য নিরাপদ প্রসবের ঠিকানা। ইতোমধ্যে এসব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ইউনিয়নের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি শুরু হয়েছে। এরআগে, কোনো গর্ভবতী মা নিরাপদ প্রসবের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেননি।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত তিন বছরে ৪৩০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে এবং তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারি পুনরায় চালু হয়েছে।

প্রথমবারের মতো অংশীজন সমাবেশ, গণশুনানি ও নৈতিকতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি সেবা নিয়ে যারা হতাশ কিংবা যাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তারা এবার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে আশাবাদী হচ্ছেন।

এরই মধ্যে সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবারমান বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় স্বীকৃতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদেরকে প্রশংসাপত্র পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক এই দুই কর্মকর্তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের (২৫ জানুয়ারি) উপজেলার সবগুলো স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন করায় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মন্ত্রণালয়ের সচিব এই প্রশংসাপত্র পাঠান। প্রশংসাপত্রে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এটি স্মার্ট বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ডেলিভারি রুমসহ প্রতিটি কক্ষ সংস্কার ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।

স্থানীয় সেবা প্রার্থীরা জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবার মান বহুগুণ বেড়েছে এবং বিনা খরচে সহজে স্বাভাবিক প্রসব সেবার সু্বিধাও পাচ্ছি। সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় আস্থা ফিরেছে বলে জানান তারা।

এদিকে, এরআগে গত বছরের (৩০ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব সীতাকুণ্ড আসলে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর আধুনিকীকরণ কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আজিজুর রহমান।

ইউএনওকে দেওয়া অভিনন্দন বার্তায় (ডিও লেটার) উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ জাতীয় জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং মা, শিশু স্বাস্থ্য ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পৃক্ত করেছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্দ প্রদানের জন্য তাদের উৎসাহিত করেছেন। এছাড়া নেতৃত্ব এবং সার্বিক সহযোগিতায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রগুলোকে আধুনিক ও উন্নত করা হয়েছে।

সুবিধাভোগীদের জন্য পরিষেবার পথ প্রসারিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান।

পৃথক (ডিও লেটার) সচিব পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রদত্ত অভিনন্দনপত্রে উল্লেখ করেন, আপনি মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসসহ জাতীয় জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছেন। মা-শিশু স্বাস্থ্য ও কিশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি নিয়মিত সংস্কার কাজের তদারকি করেন এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ ও সৌন্দর্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পক্ষ থেকে, স্বাস্থ্য পরিষেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনার সামগ্রিক কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের বলেন, সীতাকুণ্ডে যোগদানের পর ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি সেবা বৃদ্ধি করে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব এবং একই সঙ্গে কৈশোরবান্ধব পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজের সাথে সমন্বয় করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা নিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২০২১ সালে ১৬৮ জন মায়ের মৃত্যু হতো। ২০২২ সালে মাতৃমৃত্যুর হার কমে হয়েছে ১৫৬। কমলেও এই হার অনেক বেশি। এছাড়া দেশে ৪২ শতাংশ প্রসব এখন বাড়িতে হয়। বাড়িতে প্রসব হলে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা কম পাওয়া যায়। এতে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। হাসপাতালে ও ক্লিনিকে প্রসব হলে এই ঝুঁকি কমা সম্ভব।

এই ধারণা থেকেই সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উন্নত সেবার ব্যবস্থা গড় তোলার নিমিত্তে প্রতিটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র সংস্কারের উদ্যোগ নিই। উন্নত ট্রেনিং এর পাশাপাশি কর্মপরিবেশ এবং ডেলিভারি রুম সংস্কার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সেবা উন্নীত করে মাতৃ মৃত্যু হ্রাস করার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার সাথে জড়িত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদেরসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ