ঢাকা, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

‘কারিগরি, ধর্মীয় ও বাস্তবসম্মত শিক্ষানীতি প্রণয়ন জরুরি’

প্রকাশনার সময়: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১৮:২৯

বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তব সম্মত নয়। ফলে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও আমাদের দেশের বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হচ্ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠি বেকার থাকার পরও বিদেশিদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন দরকার। কারিগরি, ধর্মীয় ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা জরুরি।

শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ও ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিজাম উদ্দিন আল আদনানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ আশিকুর রহমান জাকারিয়ার সঞ্চালনায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ‘বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিল ও জাতীয় শিক্ষানীতি সংস্কার’ বিষয়ে আলোচনা হয়।

সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের এই সেমিনারে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা মানুষকে মানবতা ও নৈতিকতাবোধ এবং মানুষত্ব্যের বিকাশ ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আর সুশিক্ষাই আলোকিত মানুষের জন্মদাতা হিসেবে কাজ করে বলে মত দিয়েছেন বক্তারা।

এসময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, লেখক ও গবেষক কবি মূসা আল হাফিজ, আর্মি ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিলেটের সাবেক প্রভাষক সৈয়দ তালহা আলম।

সেমিনারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ বলেন, যারা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করছে তারা ভুলে গেছেন যে, পশ্চিমারা যেভাবে তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজিয়েছে, তারা ১৩শ বছর আগের মুসলিমদের বায়তুল হিকমা তৈরি না করলে হয়তো আজকের এ অবস্থান পেতো না। দুনিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার যে উন্নতি, তা মূলত মুসলমান সমাজ থেকেই এসেছে। যারা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে, তারা আমাদের বোঝাতে চায় যে, হিন্দুত্ববাদ থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সৃষ্টি। আসলে তা মোটেই সঠিক নয়।

শিক্ষা ব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূলত বিশেষ কোনো কাজ বা গবেষণার কারণে গর্ববোধ করে- তা নয়। মূলত বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা ক্রান্তিকালে ছাত্র সমাজের ভূমিকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসিত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের অবনতির মূল কারণ দলীয়করণ করা। এর ফলে তাদের জবাবদিহিতা বিলীন হয়েছে। ফলে বিশাল অঙ্কের রিসার্চ ফান্ড থাকার পরও কোনো ফলাফল নেই। গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পিছিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, এ দেশের মানুষ আযান শুনে ঘুমাতে যায়, আযান শুনে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের জন্য একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন, তাদের মতামত নেবেন না? তাদের সঙ্গে বসবেন না? এই দেশটা তো কারো একার না। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের আগে দেশের ছাত্র-শিক্ষক, সুশিল সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বসা দরকার ছিল। কিন্তু আপনারা তা না করে বসলেন দিল্লির সাথে। এদেশের সাধারণ ছাত্রদের বাদ দিয়ে এমন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কারণেই প্রতিটি ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম শুরু হয়েছে। যার জন্য শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত, গোটা জাতি লজ্জিত। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সাধারণ ছাত্র তো দূরের কথা, নিজ দলের কর্মীরাও তাদের কাছে নিরাপদ নয়।

বেকারত্বের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে বেকারত্ব হার ৪৭ শতাংশ। এর সঙ্গে তরুণ বেকারত্ব বেড়েছে ১১ শতাংশ। দিনে দিনে দেশের বেকাত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে বিদেশিরা এ দেশে কাজ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই, সম্ভব নয়।

সেমিনারে যৌথভাবে প্রবন্ধ পাঠ করেন ছাত্র আন্দোলন এনডিএম-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসউদ রানা জুয়েল ও জাগপা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী।

এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, জাতীয় গনতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও অবিভাবক পরিষদের অন্যতম সদস্য মাওলানা জাকির হুসাইন।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ খালেদ সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি এহতেশামুল হক সাখী, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ মিলন, জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ আহমদ, জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নেওয়াজ খান বাপ্পি, ছাত্র ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সানজিদুর রহমান শুভ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আহমদ ইসহাক, ছাত্র জমিয়তের সাহিত্য সম্পাদক সাদ আমীরসহ আরও অনেকে।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ