ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১ জিলকদ ১৪৪৫

সেশনজটে বিসিএসের স্বপ্নভঙ্গ নোবিপ্রবির হাজারো শিক্ষার্থীর

প্রকাশনার সময়: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪১

সেশনজটের কারণে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন অনুষদের ১৭ বিভাগের প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী ৪৬তম বিসিএসে অংশগ্রহন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। চার বছরের স্নাতক পাঁচ বছর পার হয়েও শেষ না করতে পারায় এবারের বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা দিতে সক্ষম হয়নি শিক্ষার্থীরা।

পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষার আবেদনের সর্বশেষ তারিখ ছিলো গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এই বছর মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো ৩৩৭৯৮৬ জন। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২৫৪৫৬১ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৬তম বিসিএস ছিলো প্রথম সুযোগ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পরও স্নাতক শেষ না হওয়ায় আবেদন করারও সুযোগ পাননি নোবিপ্রবির ১৭ বিভাগের প্রায় হাজার শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় সেশনজটের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিসিএস, সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য সকল চাকরির বাজার থেকেও পিছিয়ে পড়ছেন তারা।

জানা যায়, ২০১৯ সালের শুরুতে স্নাতক শুরু করেন নোবিপ্রবি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৩০টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের স্নাতক শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাসহ নানা কারণে পিছিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। ৩০টি বিভাগের মধ্যে ১৭ বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাঁচ বছরের স্নাতক শেষ করেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

পিছিয়ে পড়া বিভাগগুলো হলো- ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের সিএসটিই বিভাগ ও এসিসিই বিভাগ। বিজ্ঞান অনুষদের ফিমস বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, এপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স বিভাগ, এফটিএনএস বিভাগ, ইএসডিএম বিভাগ, বিজিই বিভাগ, কৃষি বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, ওশানোগ্রাফী বিভাগ, বিএমবি বিভাগ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। সমাজ বিজ্ঞান এবং মানবিক অনুষদের ইংরেজি বিভাগ, বিএমএস বিভাগ ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ।

এছাড়াও আইন অনুষদের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ৪৬তম বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন- শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, পরীক্ষার তারিখ পেছানো, প্রশাসনিক জটিলতা, নির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ নানা কারণে এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। যা দূর করার চেষ্টা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুফিয়ান জানান, ইচ্ছে ছিলো ৪৬তম বিএসএসে অংশগ্রহণ করবো। কিন্তু বিভাগের পিছুটানের কারণে ইচ্ছেটা এবার পূরন হলো না। এত লম্বা সময় ধরে অনার্স করার পরও যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না পারি, তাহলে অনেক খারাপ লাগে।

২০১৮-১৯ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, এত বছর পরও স্নাতক শেষ না করতে পারা আমাদের জন্য হতাশার। যেখানে একই সেশনের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকরিতে আমাদের থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু বিসিএস নয়, একই ঘটনা ঘটে ১৭ তম জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রেও। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক চাকুরীর বাজারে এমন পিছিয়ে পড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সেশনজটের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার সিডিউল আশার পর থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়। এর আগে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব। বিভাগ এবং অনুষদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশেষভাবে পরীক্ষার সিডিউল করতে বলে, তাহলেও আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। এছাড়া পরীক্ষা হওয়ার পর রেজাল্ট দিতে দেরি হলেও আমরা নোটিশ দিয়ে থাকি যাতে করে জট না লাগে।

সেশনজটের বিষয়ে কথা বলতে গেলে সমাজ বিজ্ঞান এবং মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানান, করোনাসহ নানা কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর সেশনজট কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এছাড়া শিক্ষক সংকটের কারণে কয়েকটি বিভাগ বেশি পিছিয়ে গেছে।

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান ভুইঁয়া জানান, করোনাসহ অনেক কারণেই বিজ্ঞান অনুষদের অনেক বিভাগ পিছিয়ে গেছে। তবে তিনি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ