ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
জুমার বয়ান থেকে

জুমাবার: মুসলিম উম্মাহর স্বাতন্ত্র্য সংহতি ও সৌন্দর্য তুলে ধরার দিন

প্রকাশনার সময়: ১০ মে ২০২৪, ১০:২১ | আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ১০:২৪

অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বলতে পারি, কোনো ব্যক্তি যদি যে কোনো মসজিদে জুমার সুন্নতগুলো আদায়সহ একমাস লাগাতার তথা চার/পাঁচটি জুমার বয়ান শুরু থেকে শোনেন, তার ভিতরে পরিবর্তন আসবেই। আফসোস, এই জুমার দিনগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে এক বছর সময়ের মধ্যে একেকটি মহল্লা নেককার মুসলমানে ভরে উঠত। মুসলিমরা সব প্রকৃত মুসলিম হয়ে উঠত।

চলুন জুমাবারের সুন্নতগুলো আলোচনা করা যাক—

পূর্ণ প্রস্তুতিসহ জুমার নামাজে তাড়াতাড়ি উপস্থিত হওয়া

জুমার নামাজের এত গুরুত্ব যে, আজান হয়ে গেলে সব কাজকর্ম বন্ধ করে নামাজে শামিল হতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)

জুমার নামাজের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল; তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল এবং সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি)

জুমার দিনের সুন্নতগুলো পালনের সবচেয়ে বড় অতুলনীয় ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

ইমাম নববি (রহ.) বলেছেন, মানুষ কত রকমের নফল ফজিলতের পেছনে ছোটে। অথচ সবগুলো ফজিলতের মধ্যে এই হাদিসটি সবচেয়ে ফজিলতের। জুমার উদ্দেশে আপনার বাসা থেকে মসজিদ পর্যন্ত যতগুলো কদম বা স্টেপে আসবেন, প্রতিটির বিনিময়ে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের নফল সালাতে নেকি দান করা হবে। এই অ্যামাউন্ট তো অকল্পনীয় এবং অপরিমেয়। এটা আমরা আমল করি না, অথচ ২০ লাখ নেকির বানোয়াট আমল নিয়ে কত আগ্রহ।

বেশি বেশি দরুদ পাঠ

জুমার দিনে জুমার নামাজের আয়োজনের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল নবী (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পেশ করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক জুমার দিনে তোমরা আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ কর। কারণ আমার উম্মতের দরুদ প্রতি জুমার দিন আমার কাছে পেশ করা হয়। আর তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচে বেশি দরুদ পাঠ করে সে অন্যদের তুলনায় আমার বেশি নিকটবর্তী।’ (সুনানে বায়হাকি)

রাসুলের প্রতি দরুদ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ১০বার রহমত বর্ষণ করেন, তার ১০টি পাপ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য মর্যাদার ১০টি স্তর বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।’ (নাসাঈ)

জুমার দিন হলো দিনগুলোর শ্রেষ্ঠ আর নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন আমাদের নবী (সা.)। তাই শ্রেষ্ঠ দিনে শ্রেষ্ঠ নবীর ওপর দরুদ পাঠ একটি শ্রেষ্ঠ আমল।

বেশির চেয়ে বেশি দোয়া করা

জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল বেশি বেশি দোয়া করা। কারণ, এইদিন একটি সময় আসে, যখন বান্দা যা চায়, তাই পায়। কিন্তু ওই সময়টি বলে দেয়া হয়নি। তাই পুরো জুমাবার বেশি বেশি দোয়া করা, যাতে সুযোগটি লুফে নেয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কল্যাণকর কিছু কামনা করলে অবশ্যই তাকে তা দেয়া হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ যাদুল মাআ’দ-এ বর্ণিত আছে, জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।

তাই আমাদের কর্তব্য হবে, এদিনের বহুবিধ মর্যাদা অনুধাবন করা এবং এসব সুন্নত পালন করা। পাশাপাশি মুসলিম জাতি ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে আমাদের জুমাবারের ঐতিহ্য, মর্যাদা ও মাহাত্ম্যও অন্তরে ধারণ করতে হবে। সচেতন থাকতে হবে কোনো অপশক্তি যেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রেখে যাওয়া মুসলিম উম্মাহর চলমান ঐতিহ্য জুমাবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারে।

৩ মে ২০২৪ টঙ্গীর আন-নূর জামে মসজিদে কৃত জুমাপূর্ব আলোচনা থেকে অনুলিখন—

মুহা. আব্দুল খালিক আশিক

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ