ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে ইউএনওর দিন-রাত অভিযান

প্রকাশনার সময়: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩০

প্রতিবছরের মতো এবারও গাইবান্ধার সাত উপজেলায় রেললাইন, নদী, শহর রক্ষা বাঁধ থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে বিক্রি করছিল বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মহল। আর এই অপরাধে এ পর্যন্ত ১২টি অবৈধ ট্রাক্টর (কাঁকড়া) জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

সম্প্রতি সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসান যোগদান করে নদী ও মাটির পরিবেশ রক্ষায় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেল ৩টা। ইউএনওর কাছে খবর আসে সদর উপজেলার ২নং মালিবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বড়ুয়া টারি গ্রামের মানস নদী থেকে মাটি তুলে বিক্রি করছেন ওই গ্রামের মৃত খুজিয়া মিয়ার ছেলে ঝড়ু ও গউড়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিন-রাত নদীর কোলঘেঁষা আবাদি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন তারা। নিষেধ করলে তারা সবকিছু ম্যানেজ করে মাটি কাটার কথা বলেন’।

অভিযোগ পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় আনসার পুলিশের মাধ্যমে মাইকিং করে শতাধিক গ্রামবাসী ও মাটি কাটার লেবারদের প্রথমে তিনি মাটি কাটা আইন ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে অবগত করেন। এসময় ট্রাক্টর ড্রাইভার এবং জমির মালিক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও মাটি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত তিনটি অবৈধ ট্রাক্টর জব্দ করেন। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ট্রাক্টর মালিকদের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেও সতর্ক করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাত ১টা। সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত শরীর যখন বিছানায়, ঠিক তখন (রাত সাড়ে ১২টা) খবর আসে, শহরের ঘাঘট নদীর তীর থেকে সারারাত স্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে শতশত ট্রাক্টর মাটি অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে কতিপয় ব্যক্তি। তড়িৎ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪টি ট্রাক্টর জব্দ করেন ইউএনও মাহমুদ আল হাসান। এসময় স্কেভেটর ও ট্রাক্টরের চালক ও লেবাররা পালিয়ে যায়।

অভিযান চলাকালেই আবার খবর আসে, পাশেই খোলাহাটি ইউনিয়নের চকমামরোজপুর রেললাইনের ধারের মাটি কাটা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাক্টর জব্দ করেন ইউএনও।

তখন রাত ২টা। খোলাহাটির চকমামরোজ গ্রাম থেকে ছুটে যাবেন ইউএনও, ৩০ মিনিটের পথ উপজেলার সেই শেষ সীমানা, কামারজানি ইউনিয়নের কামারজানি ঘাটের বাঁধ এলাকা। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ বাঁধের মাটি কেটে প্রতি রাতে শতশত ড্রাম ট্রাক মাটি ভরে বিক্রি করে আসছে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে শুধু রানা নামে একজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা হয়। এতে কয়েকদিন বন্ধ থাকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন। তারপর আবারও শুরু হয় মাটি ও বালু উত্তোলনের মহা উৎসব। সেই খবর পেয়ে রাতেই কামারজানি বাজারে অভিযান চালিয়ে দুটি ড্রাম ট্রাক ও দুটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়। এ নিয়ে গত ৫ দিনের অভিযানে ১২টি ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসান বলেন, ‘ঘাঘট নদীদহ বিভিন্ন নদীর তীর, বাঁধের গোড়া ও নদীবেষ্টিত কামারজানি এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছিল বেশ কয়েকটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আগে গত শনিবার ৪টি ট্রাক্টর জব্দ করা হয় এবং মালিকদের সতর্ক করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাত থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত ঘাঘট নদীর তীর ও কামারজানি এলাকা থেকে মোট ৭টি ট্রাক্টর ও ২টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

নদী ও কৃষি জমির পরিবেশ রক্ষায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ