ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

তাড়া‌শে ধান কাটার শুরুতেই শ্রমিক সংকট, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

প্রকাশনার সময়: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৫৪

খাদ্য শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ যেন সোনালি বিছানা। এরম‌ধ্যে শুরু হয়েছে পুরো দমে নতুন বোরো ধান কাটা। তবে শুরুতেই ধান কাটা শ্রমিক সংকটের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলী মাঠে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। জমিতে ধান পেঁকে উঠায় দ্রুত তা কাটার জন্য শুরুতেই উপজেলার কৃষকেরা শ্রমিক সংকটের মুখে পড়েছেন। আর শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় অনেক কৃষকেরা ধানকাটা শ্রমিকের খোঁজে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে রংপুর, চাপাইনবগঞ্জ, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সাথিয়া, নাকালিয়া বেড়া, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, শাহাজাদপুর এলাকাসহ যেসব এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যায়। সেখানে খোঁজ খবর নিয়ে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের সাথে অগ্রিম বায়না করছেন।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৯, ব্রি-২৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯০, ব্রি- কাটারীভোগ, সুবললতা, রড মিনিকেট, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি সহ বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হওয়ায় এ বছর নির্বিঘ্নে বোরো ধানের আবাদ করতে পেরেছেন কৃষ‌কেরা।

উপজেলার রানী‌দিঘী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এ বছর ধানের বাম্পার ফলনও মিলছে। পাশাপাশি হাট বাজারে উঠা নতুন ধানের দামও ‌বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বিঘাতে ব্রি-৯০, কাটারীভোগ, রড মিনিকেটসহ বর্তমানে যে সকল জাতের ধান কাটা হচ্ছে তা প্রকার ভেদে প্রতি বিঘায় ২২-২৪ মণ হারে ফলন হচ্ছে। বাজারে কাটারীভোগ ১৩০০ টাকা মণ, সুবললতা ১১৫০ টাকা মণ, রড মিনিকেট ১২৬০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বর্তমানে কৃষকের বাড়ি থেকে জমির দূরত্ব ভেদে মণ প্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি ধান পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে ধানকাটা শুরু করেছে। আর টাকায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা বিঘায় ধান কাটাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলায় হারভেস্টার মেশিন দিয়েও বিঘায় ২ হাজার টাকা খরচে ধান কাটা গেলেও বেশিরভাগ খড় নষ্ট হওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্যের কথা চিন্তা করে অনেকেই কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। তাই কৃষি শ্রমিকের চাহিদাও বেশি।

তবে গরমের কারণে শ্রমিকের সংকটও রয়েছে বলে জানিয়ে উপজেলার লালুয়া মা‌ঝিড়া গ্রামের আরেক কৃষক আফসার আলী বলেন, জমিতে পাঁকা ধান পড়ে আছে শ্রমিকের অভাবে কাটতে পাচ্ছি না। গরমের যে পরিস্থিতি কখন যে কি হয় আল্লাহ জানে। কয়েক দিন ধরে শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে ও চুক্তি ছাড়া ধান কাটবে না। ছুটা শ্রমিক পাওয়াও যাচ্ছে না। তাই ধান নিয়ে কি যে বিপদে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের আসতে দেরি হলেও তিন চার দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাবে। তবুও শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ধান কাটার হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। মেশিনগুলো দিয়ে মাঠে ধান কাটালে শ্রমিক সংকট থাকবে না।

তিনি আরও জানান, আমরা কৃষককে দ্রুত পাঁকা ধান কাটার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি এবং এখন পর্যন্ত যে সকল জমিতে বোরো ধান কাটা চলছে সেখানে কৃষক বোরো ধানের বাম্পার ফলনও পাচ্ছেন। আশা করছি চলতি বোরো মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হবে এই উপজেলায়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ