ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী তারা

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০৭

ফুটবল গোলের খেলা। গোলই এখানে শেষ কথা। তাই যারা গোল দেয়, তারাই বেশির ভাগ সময় হয়ে ওঠে সবার চোখের মণি। তবে অনেক সময় গোল না করেও হয়ে ওঠা যায় ম্যাচের নায়ক। সেই কাজটি গোলরক্ষক ছাড়া আর কে ভালো করতে পারে! আবার একটি ভুল করলে সেই গোলরক্ষকই হয়ে ওঠে খলনায়ক। এসব যদি হয় বিশ্ব মঞ্চে? কাতার বিশ্বকাপে এমন কিছু গোলরক্ষক থাকবেন, যাদের দেয়াল ভাঙা সত্যিই কঠিন হয়ে উঠতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য। তেমন পাঁচজন গোলরক্ষককে নিয়ে এই আয়োজন।

অ্যালিসন বেকার, ব্রাজিল : তিতের ব্রাজিল দলে অ্যালিসন এক নম্বর গোলরক্ষক অনেক দিন ধরেই। এবারের বিশ্বকাপেও গোলপোস্টে দলের বড় ভরসা তিনি। দুই দশকের খরা কাটিয়ে, সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডটা পাঁচ থেকে ছয়ে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি দেখছে, সেখানে নেইমার-ভিনিসিয়াসদের পাশাপাশি সবার চোখ থাকবে অ্যালিসনের দিকেও।

ঘরের মাঠে ব্রাজিলের ২০১৯ কোপা আমেরিকা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন আলিসন। পুরো আসরে ছয় ম্যাচে তিনি গোল হজম করেছিলেন স্রেফ একটি, সেটিও পেনাল্টি থেকে। আসরের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার তার হাতে উঠেছিল অবধারিতভাবে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে খেলবেন ৩০ বছর বয়সি এই গোলরক্ষক। ২০১৮ সালের রাশিয়া আসরে ব্রাজিল বিদায় নিয়েছিল কোয়ার্টার-ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হেরে। দলের পাঁচ ম্যাচের সবগুলো খেলে তিনটিতে ‘ক্লিন শিট’ রেখেছিলেন আলিসন, আসরে পাঁচজনের সঙ্গে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, আর্জেন্টিনা :

কোচ লিওনেল স্কালোনির আগমন ও দল পুনর্গঠনের পর আর্জেন্টিনার চেহারাই বদলে গেছে। কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে ঘুচেছে তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। ক্লাব ফুটবলে প্রায় সবকিছুই জেতা লিওনেল মেসি অবশেষে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক শিরোপার স্বাদ। অপরাজিত আছে তারা টানা ৩৬ ম্যাচ ধরে। আর এত সব সাফল্যে অনেক বড় অবদান গোলরক্ষক মার্টিনেজের। ২০২১ সালের জুনে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে মেসির নেতৃত্বাধীন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। গোলপোস্টে নির্ভরতার প্রতীক। গত বছর ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা উৎসব করে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে দারুণ কয়েকটি সেভ করে ভূমিকা রাখেন মার্টিনেজ। তার আগে সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে দলকে ফাইনালে তোলার নায়কও তিনিই। পরে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ইউরোর চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় ফিনালিস্সিমা ট্রফি। মার্টিনেজ যথারীতি আরও একবার অক্ষত রাখেন জাল। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যাচটি জিতেছিল ৩-০ গোলে।

ম্যানুয়েল নয়ার, জার্মানি :

এক দশকের বেশি সময় জার্মানির প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক নয়ার। সুইপার কিপার হলো তারাই, যারা সাধারণ গোলরক্ষকের মতো প্রতিপক্ষের শট আটকানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত একজন ডিফেন্ডারের কাজ করে থাকেন, আবার প্রয়োজনে ডি-বক্স থেকে বেরিয়ে এসে ভেস্তে দেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ। এই কাজের জন্য নয়ারের আলাদা পরিচিতি আছে অনেক দিন ধরেই।

এই নিয়ে টানা চতুর্থ বিশ্বকাপে খেলবেন ৩৬ বছর বয়সি এই গোলরক্ষক। প্রথমবার তিনি বৈশ্বিক আসরে সুযোগ পান ২০১০ সালে। এর আগের বছর রবার্ট এঙ্কার মৃত্যু ও পরে রেনি আডলারের মারাত্মক চোটে দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আসরে দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে যান নয়ার। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে তো জার্মানির শিরোপা জয়ের নায়কদের একজন নয়ার।

থিবো কোর্তোয়া, বেলজিয়াম : রবার্তো মার্টিনেজের বেলজিয়াম দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কোর্তোয়া, দেশের ‘সোনালি প্রজন্মের’ অংশ। ৩০ বছর বয়সি এই গোলরক্ষকের ক্যারিয়ারই তার হয়ে কথা বলে। এর আগে তিনি খেলেছেন দুটি বিশ্বকাপে। ২০১৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দলের প্রতিটি মিনিট পোস্টের নিচে ছিলেন তিনি। ১০ ম্যাচের ৬টিতেই রেখেছিলেন ক্লিন শিট।

চার বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের তৃতীয় হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কোর্তোয়া। কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে পোস্টে তিনি ছিলেন দেয়াল হয়ে। কাতারে বেলজিয়াম দলেও তিনি থাকবেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। দেশটির সোনালি প্রজন্মের একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের আরেকটি সুযোগ এটি।

ইয়ান সমের, সুইজারল্যান্ড : গত এক দশকে সুইজারল্যান্ড ফুটবলের পুনরুত্থানে সামনের সারির সেনানীর একজন সমের। বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দলটির দারুণ পারফরম্যান্সে তার আছে বড় অবদান। ২০১৪ ও ২০১৮, দুটি বিশ্বকাপেই সুইসরা উঠেছিল শেষ ষোলোয়। দুই আসরেই খেলেন সমের। ২০১৬ ইউরোতেও সুইজারল্যান্ড খেলে শেষ ষোলোয়। সেবার দলের চার ম্যাচেই গোলপোস্টের নিচে ছিলেন সমের।

এক বছর পিছিয়ে গত বছর অনুষ্ঠিত ২০২০ ইউরোয় চমক দেখিয়ে সুইজারল্যান্ড উঠে যায় কোয়ার্টার-ফাইনালে। শেষ ষোলোয় টাইব্রেকারে কিলিয়ান এমবাপের নেয়া ফ্রান্সের শেষ শট ঠেকিয়ে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান সমের। বিশ্বকাপেও সমেরের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে প্রতিপক্ষের ফরওয়ার্ডদের।

পাদপ্রদীপের আলোয় থাকবেন আরও কয়েকজন। ফ্রান্সের হুগো লরিস, স্পেনের উনাই সিমোন, ডেনমার্কের কাসপের স্মাইকেল, কোস্টারিকার কেইলর নাভাস। কাতারে বিশ্ব সেরার লড়াইয়ে এই নামগুলোও হয়ে উঠতে পারে রোমাঞ্চের নায়ক।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ