ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রোশনাই ছড়ানো স্টেডিয়ামগুলোর ভবিষ্যৎ কী?

প্রকাশনার সময়: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪৪ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:২৬
ছবি : আর্চ ডেইলি

প্রায় এক মাসের উত্তেজনা-ভিড়-উন্মাদনার পর শান্ত হচ্ছে কাতারের রাস্তা। কিন্তু এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে, কাতারে কোটি কোটি টাকা খরচা করে যে স্টেডিয়ামগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোর কী হবে! পাশাপাশি বাইরে থেকে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া মানুষদের ঠাঁই দিতে ব্যাঙের ছাতার মতো যে অসংখ্য হোটেল গজিয়ে উঠেছে, সেগুলোরই বা কী হবে! ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে খরচ হচ্ছে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। খরচ করেছে আয়োজক কাতার। যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। হিসাব বলছে— ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি ফুটবল বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে তার চার গুণেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে শুধু কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে।

এত খরচের কারণ, স্টেডিয়াম তৈরি। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও আলাদা মাঠের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লুসাইল স্টেডিয়ামও। যেখানে ভাগ্যপরীক্ষা হলো মেসি-এমবাপেদের। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হওয়ায় তো প্রয়োজন ফুরালো এই স্টেডিয়ামগুলোর। এখন? কাতার বিশ্বকাপের জন্য যে সাতটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে, তার মধ্যে একটি স্টেডিয়াম টুর্নামেন্টের পর পরই কাতার থেকে চিরতরে বিদায় নেবে।

স্টেডিয়াম ৯৭৪। কাতারে তৈরি সাতটি স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি। কাতারের রাস আবু আবৌদ এলাকায় তৈরি এই বন্দর কাঠামোর স্টেডিয়ামে ৪৪ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। জাহাজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যবাহী স্টিলের কন্টেনার থেকে তৈরি হয়েছে। অস্থায়ীভাবে তৈরি এই স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার। কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও +৯৭৪। তাই স্টেডিয়ামটির নাম দেওয়া হয় ৯৭৪। বিশ্বকাপের মাঝেই স্টেডিয়াম ৯৭৪ স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছে মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ। ২০২১ সালে ৩০ নভেম্বর স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বকাপ চলাকালীন মোট সাতটি ম্যাচ এই মাঠে হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর ব্যবহারের জন্য বন্ধও করে দেয়া হয় স্টেডিয়ামটি।

যে সব দেশে পরিকাঠামো খারাপ সেই সব দেশে এই স্টেডিয়ামের ভাঙা অংশগুলো পাঠানো হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, আফ্রিকার কোনো দেশে এই স্টেডিয়ামের টুকরো করা অংশগুলো পাঠানো হবে। সেখানে খেলাধুলার জন্য নতুনভাবে গড়া হবে এই স্টেডিয়াম। কিন্তু বাকি স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে? কাতারের প্রশাসন বলছে, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল এবং অনেকগুলো দোকান-ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলাধুলার করারও প্রচুর জায়গা ওই স্টেডিয়ামে থাকবে। পাশাপাশি একটি হাসপাতাল এবং একটি কমিউনিটি হলও স্টেডিয়ামের জায়গায় তৈরি করা হবে। ফুটবল বিশ্বকাপের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরিরও পরিকল্পনা চলছে ওই জায়গায়। আল বায়ত স্টেডিয়ামে খোলা হবে একটি বিলাসবহুল হোটেল, একটি শপিংমল এবং একটি ওষুধের দোকান। মূলত খেলাধুলার সময় যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীগুলোর প্রয়োজন, সেগুলোই ওই ওষুধের দোকানে পাওয়া যাবে। ২টি স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে স্থানীয় দুটি ফুটবল ক্লাব। আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে।

২০২৬ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করবে কাতারের জাতীয় ফুটবল দল। আর সেই প্রশিক্ষণের জন্য কাজে লাগানো হবে খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে। বাকি স্টেডিয়ামগুলোকে আবার নতুন করে তৈরি করা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এশিয়ান কাপের জন্য এই স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহার করা হতে পারে বলে কাতার প্রশাসন সূত্রে খবর।

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হোটেলগুলোকে বদলে ফেলা হতে পারে ছোট ছোট আবাসনে। কয়েকটি হোটেল আরও উঁচু করে বহুতলে পরিণত করা হতে পারে। কিন্তু সেই আবাসনগুলোতে থাকার মতো মানুষ কী কাতারে রয়েছে? উঠছে সে প্রশ্নও। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী— ছোট্ট এই দেশের মোট জনসংখ্যা ২৯.৩ লাখ। যার মধ্যে কাতারের স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ। বাকি বড় অংশ অন্যান্য দেশ থেকে রোজগারের আশায় ওই দেশে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। তাদেরও আগে থেকেই মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে। তা হলে নতুন করে ওই আবাসনগুলোতে কারা থাকবেন? এখনও সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

সূত্র: আনন্দবাজার

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ