ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ৫ জিলকদ ১৪৪৫

সর্ষে ফুলের হলুদ হাসিতে রাঙানো নান্দাইল

প্রকাশনার সময়: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:৫১

ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিস্তীর্ণ মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতি যেন হলদে শাড়ি পরে আছে। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মন উতলা হয়ে উঠে হলুদের মাঝে হারিয়ে যেতে।

ছড়ানো সরিষার বুকে ছবি তুলতে দলবেঁধে ছুটে আসছেন স্কুলের শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, শিশু এমনকি বয়স্করাও। নিজেদের পছন্দমতো ছবি তুলছেন মোবাইলে। কেউ কেউ তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন।

পৌষের সকালের মিষ্টি রোদে ঝলমল করা সরিষা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গাঢ় হলুদে সোনালি রোদ মিলেমিশে এ এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য। চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। মাঠের পর মাঠ যেন সর্ষে ফুলের হলুদ হাসিতে রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো উপজেলাকে।

উপজেলার যেকোনো এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সরিষার হলুদ ফুলের সীমাহীন বাগান। চির সবুজের বুকে এ যেন কাঁচা হলুদের আলপনা। দূর থেকে ভেসে আসছে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌ মাছির দল। তাদের গুঞ্জনে মুখরিত চারদিক।

মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। প্রতিটি সরিষার ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৬৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৭, বিনা সরিষা ৯ এবং টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২৫ মেট্রিকটন। ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে।

চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষা খেতে রোগবালাই কম হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিভিন্ন সরিষা খেত ঘুরে দেখা যায়, হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। দিগন্তজুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা। সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌ মাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষার মাঠ।

উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের বাপ্পী,পল্লী চিকিৎসক মো.গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তার কয়েক বন্ধুদের নিয়ে বীরকামট খালী গ্রামের মাহতাবের সরিষার খেতে ছবি তুলতে এসেছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান তার দুই ছেলেকে নিয়ে সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলছেন। আতিকুর রহমান বলেন, সরিষা ফুলের অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি, ছবি তুলেছি। অনেক ভালো লেগেছে।

উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের কৃষক মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমন ধান কাটার পর কৃষি অফিসের পরামর্শে ৩০ শতক (৩ কাঠা) জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।

একই গ্রামের কৃষক মুনজুল বলেন, আমি ৪ কাঠা (৪০ শতক) জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করছি। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। ফুলে ফুলে খেত ভরে গেছে। ভালো ফলনের আশা করছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, এবছর উপজেলায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। কৃষি অফিসের সার্বিক নির্দেশনায় কৃষক যেন সরিষার ভালো ফলন পায়, সেজন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নান্দাইলে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে সরিষার বিজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ভালো ফলনের লক্ষ্যে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ