ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

আওলাজুরের গণকবর আজও অবহেলিত

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৩১ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৩৭

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মশাখালী ইউনিয়নের শীলা ব্রিজ ও শীলা বাজারের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের মনুহরপুর গ্রামের আবু বক্কর, গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী গ্রামের আব্দুল আওয়াল জানু, দড়িচাইর বাড়িয়া গ্রামের মজনু মিয়া, মুখী গ্রামের আবুল হোসেন ও চাঁন মিয়া।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ঢালু ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন বালজিৎ সিং। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল গফরগাঁওয়ে প্রসাদপুর গ্রামের ওমর আলী তালুকদারের বাড়িতে অবস্থান নেয়।

মুক্তিযোদ্ধারা তখন ক্যাপ্টেনের নির্দেশনা মোতাবেক হাওয়াখালী রেলব্রিজ উড়িয়ে দেয়। এ সময় মান্নান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর শীলা বাজার সংলগ্ন শীলা ব্রিজের দখল নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে ৬০/৭০ জনের পাক হানাদার বাহিনী শীলা নদীর পূর্বপাশ দিয়ে এসে জনা দশেকের ক্ষুদ্র মুক্তিযোদ্ধা দলের উপর হামলা চালিয়ে ঘেরাও করে ফেলে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা সীমিত সামর্থ দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত একটানা ৪ ঘন্টা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ওই সময় ১৪ বছরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা এবি সিদ্দিক অন্য যোদ্ধাদের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে পাক সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।

আচমকা হানাদার বাহিনীর চাইনিজ এলএমজির টানা ব্রাশফায়ার তার শরীরটিকে ঝাঝরা করে দেয়। সেইদিন আরও ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মশাখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান নামে আরও একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

বিকেল ৪টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী স্থান ত্যাগ করলে ওই দিন রাতেই শীলা ব্রিজের অল্প দূরে আওলাজুর গ্রামে একটি কবর খুড়ে সেই কবরেই ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়। এরপর আহত মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বলদী গ্রামে আশ্রয় নেন।

গফরগাঁও উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণ কবরের খবর এখন আর কেউ রাখেন না। ১৯৭১ সালের ৫অক্টোবর পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের শিলা বাজারের কাছে ৫ বীর মুুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একই স্থানে গণকবরে সমাহিত করে সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও আওলাজুর গ্রামে ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। গণকবরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলক থাকলেও সারা বছরেই পড়ে থাকে অযন্ত আর অবহেলায়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গণকবরের খবর জানেই না। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি এখানে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মানের। মুক্তিযোদ্ধাদের সে দাবী আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ