ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

নতুন প্রজন্ম জানে কি বাঁশখালীর দুই বধ্যভূমির ইতিহাস

প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:২৭

বিজয় ঘোষণার মাত্র চারদিন আগে হানাদার মুক্ত হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী। তাই ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর এ উপজেলায় চূড়ান্ত বিজয়ী হয় মুক্তি বাহিনী।

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাঁশখালীর কালীপুর পালেগ্রাম ও কোকদন্ডী প্রবেশ করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যান সমশু মিয়ার নেতৃত্বে পাকিস্থানী সৈন্যরা ঐ সময় ৩০ জনকে আটক করে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে গুলি করে ও গর্ত খনন করে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করে।

নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার রজনীকান্ত দেবনাথ, গিজেন্দ্র দেবনাথ, অরুন দেবনাথ, সাধনপুরের সরোজ দত্ত, কালীপুরের পিন্টু দত্ত, নিহারেন্দু দত্ত, বিমল ঘোষ, ফকির চাদ পাল, যোগেশ চন্দ্র পাল, পালেগ্রামের প্রতাপ দত্ত, তারেক দত্ত, কোকদন্ডীর শুয়াধর এবং নাম না জানাসহ কোকদন্ডী, পালেগ্রামের ২৬ জন। এরপর সৈন্যরা স্থানীয় রাজাকারদের সহয়তায় ১৯ মে সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম মধ্যপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে ধরে এনে বাণীগ্রামস্থ বড় পুকুর পাড়ে গুলি করে ও গর্ত খনন করে কবর দেন। তৎমধ্যে একই পরিবারের পিতা পুত্রসহ ৩ জন রয়েছে।

নিহতরা হলেন সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামের বিনোদ বিহারী চৌধুরী, পুত্র সুশান্ত মোহন চৌধুরী ও সুধাংশু বিমল চৌধুরী, রাশুতোষ দাশ গুপ্ত, ক্ষিতিশ চন্দ্র দে, অমৃত রঞ্জন দে, বিভুতি রঞ্জন দে, বৈকুন্ঠ নাথ চৌধুরী, ব্রজেন্দ্র লাল দে, হরি রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, হরি চরন দে, রাধিকা ঘোষ, সচ্চিদা রঞ্জন চৌধুরী, অমূল্য রঞ্জন চৌধুরী, শচীন্দ্র দে, শিবু শংকর দাশ, অটল বিহারী পাল, রমা রানী পাল, হরিপদ তালুকদার, সাধনপুরের বাসু দেব, সাতকানিয়ার দিয়ারকুল সুখেন্দ্র কারীগর, চন্দনাইশের হারালার মুকুন্দ সিকদার।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে এম সালাহ্উদ্দীন কামাল বলেন, বধ্যভূমি ২টি সংরক্ষণে আমি জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছিলাম তারই প্রেক্ষিতে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে, এবং শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা সাবেক ডেপুটি ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আহমদ ছফা বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাক-হানাদারদের রুখে দিয়ে বিজয়ের স্বাদ পায় বাঁশখালীবাসী। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাঁশখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে অভিযান চালিয়ে শত্রুমুক্ত করি আমরা। পরাধীনতার ভয়ানক শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বাঁশখালীর সর্বস্তরের স্বাধীনতাকামী জনগণেরও সর্বাত্মক ভূমিকা ছিল।

এদিকে বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার নির্বাচিত না হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাঁশখালীতে দুটি বধ্যভূমি রয়েছে। সেগুলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের গণকবর দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি নির্মাণের যে কাজ চলছে তা আগামী জানুয়ারিতে সমাপ্ত হবে। এছাড়াও বাঁশখালীর সকল মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানী ভাতার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ১০টি মুক্তি নিবাস এর কাজ শেষ পর্যায়ে আরও ৩টির কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের জন্য সরকার একটা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেখানে প্রাথমিকভাবে ২৮ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সকল ধরনের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের পক্ষে থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বধ্যভূমিগুলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি নির্মাণ করা হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ