ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

টাঙ্গাইলের বধ্যভূমি গণহত্যার জ্বলন্ত সাক্ষী 

প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩০

টাঙ্গাইলকে বলা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। এ জেলার কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা-সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের সিদ্দিকী পাক হানাদার বাহিনীর কাছে ‘বাঘা সিদ্দিকী’ নামটি মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবেই ছিলো। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল থেকে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জেলা সদরের পানির ট্যাংকের নিচে বীর বাঙালিকে হত্যা করা হয়। কিন্তু কোনো সঠিক পরিসংখ্যা এখনো কারো কাছে নেই।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল থেকে বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পাকবাহিনী জেলার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়। সার্কিট হাউসটি পাক হানাদার বাহিনী জেলার মূল ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। সার্কিট হাউসের পাশে জেলা সদর পানির ট্যাংকের পাশের জঙ্গলকে লাশ ফেলার স্থান হিসেবে তারা ব্যবহার করা হতো। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক নারী-পুরুষদের ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করে পানির ট্যাংকির পাশে ফেলে রাখা হতো। এ বধ্যভূমিতে শহীদ অনেকেরই নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এ বধ্যভূমিতে শহীদ অনেকেরই নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, কাগমারীর এমএম আলী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিত্যানন্দ পাল, কুমুদিনী মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ধীরেন গোবিন্দ মজুমদার, তার ছেলে প্রীত্তিশ গোবিন্দ মজুমদার, সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হেরেন্দ্র নাথ রায়, শহরের প্যাড়াডাইস পাড়ার প্রবোধ চন্দ্র রায় ওরফে ব্যাঙা ডাক্তার, শিবপুরের সুনীল সাহা, কাগমারীর বলিহারী দাস, প্রমোদ পাল, শান্তি রঞ্জন সাহা, শিবপুরের বল্টু সাহা, ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রামপুরের হাবিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন প্রমুখ।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম বলেন, পাকবাহিনীর ক্যাম্পে অনেককে নির্যাতন করতে করতে মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে ফেলা হয়েছে। মেরে অসংখ্যা মুক্তিযোদ্ধার লাশ জেলা সদর পানির ট্যাংকের পাশের বধ্যভূমিতে রাখা হয়েছে। আবার অনেককে পানির ট্যাংকের উপর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও তারা গুলি করে হত্যার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু হত্যার কয়েক মিনিট আগে বিদেশি সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমি মুক্তি পেয়েছি।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি বলেন, বধ্যভূমিতে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, তৎকালীন সময়ে সংখ্যালঘু, ছাত্র ও যুবক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা কাজ করতে ছিলো তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য ছাত্রনেতা শহীদ সালাউদ্দিনকে ২২ নভেম্বর হত্যা করে পাকবাহিনী। এছাড়াও অনেককে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নির্যাতন করে হত্যা শেষে লৌহজং নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।

বধ্যভূমি নবরূপে নির্মিত স্মৃতিসৌধ গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ বধ্যভূমির উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

টাঙ্গাইল প্রথম আলোর বন্ধুসভা উপদেষ্টা জিনিয়া বখশ বলেন, সর্ব প্রথম প্রথম আলোর বন্ধুসভার উদ্যোগে পানির ট্যাংক বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই বধ্যভূমি প্রথম দিকে জঙ্গল, ময়লা অবর্জনার স্তপ ছিলো। পরবর্তীতে আমরা এগুলো পরিষ্কার করি। এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ