ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

খালি হাতেই কুমির ধরেন রোজি!

প্রকাশনার সময়: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০৭

‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’— বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় প্রবাদের জলজ্যান্ত নিদর্শন রোজি ম্যুর। তিনি একাধারে ভূবিজ্ঞানী, মডেল এবং বন্যপ্রাণ বিশ্লেষক। ফ্লোরিডার বাসিন্দা রোজি একটি পাবলিক সেক্টরে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসাবে কাজ করেন। গবেষণার অঙ্গ হিসাবে বন্যপ্রাণ, বিশেষত সরীসৃপ এবং জলজ প্রাণীদের নিয়ে তাকে কাজ করতে হয়।

এক সাক্ষাৎকারে রোজি জানান, তিনি বিশাল অজগর থেকে শুরু করে হিংস্র কুমিরও ধরতে পারেন। কুমির ধরার জন্য কোনো বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজনও হয় না। খালি হাতেই কুমির ধরেন তিনি। শার্ক ডাইভিংও করে থাকেন। কাজের সূত্রে তাকে গভীর সমুদ্রের অন্দরমহল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। সমুদ্রের হাঙর ভর্তি এলাকায় তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন এক নিমেষে। কখনো কখনো বন্য সরীসৃপের খোঁজে গভীর জঙ্গলে চলে যান রোজি। পানি-কাদা মেখে ধরে ফেলেন আস্ত কুমির। খালি হাতেই অনায়াসে কুমির ধরে তার মুখ বেঁধে ফেলেন তিনি। তবে জলে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এই তরুণীর এক অন্য রূপ রয়েছে। সাপ আর কুমির ধরার পাশাপাশি রোজি মডেলিংও করেন চুটিয়ে। নকশা করা পোশাক পরে, সেজেগুজে র‍্যাম্পে হাঁটেন। রোজি জানান, শার্ক ডাইভিং বা কুমির ধরার সময় ছবি তুলতে তুলতে মডেলিংয়ে তার আগ্রহ তৈরি হয়। সেই সূত্রেই নানা চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তরুণ এই বিজ্ঞানী।

বর্তমানে আমেরিকার একাধিক পোশাক এবং পানীয় তৈরির সংস্থার সঙ্গে মডেল হিসাবে চুক্তি রয়েছে রোজির। তার কাজে পেশাদারিত্বের ছাপ স্পষ্ট। রোজি আসলে মিসৌরির বাসিন্দা। ২০ বছর বয়সে তিনি ফ্লোরিডায় চলে আসেন। ছোটবেলা থেকেই বন্যপ্রাণের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। হাঙর দেখতে খুব ভালোবাসতেন রোজি। ফ্লোরিডায় এসে ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর পড়েন ভূবিজ্ঞান। এই সূত্রেই পানিসম্পদ, জলজ প্রাণীদের নিয়ে নানা কাজ করতে হয়েছে রোজিকে। ধীরে ধীরে সরীসৃপরাই তার প্রিয় হয়ে ওঠে। রোজি বলেন, ‘জীবনের অনিশ্চয়তা তার সবচেয়ে প্রিয়। এমন জীবনই তিনি চেয়েছিলেন, যেখানে সকালবেলা উঠে সারা দিন কী হবে, তা আগে থেকে ভেবে নেয়া যাবে না।’

নিজের জন্য তেমন অনিশ্চয়তায় মোড়া জীবন বেছে নিয়েছেন রোজি। এক দিকে মডেলিং, অন্য দিকে বিজ্ঞান—দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার কাজ একসঙ্গে কীভাবে সামলান? রোজি জানান, দুটি কাজই তার ভালো লাগে। তবে বিজ্ঞানেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। তবে জঙ্গলে রোজি যে ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণভাবে মেয়েরা বঞ্চিত থাকেন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে পুরুষের আধিক্য তার বড্ড চোখে লাগে। তিনি চান, মেয়েরাও এ পেশায় আসুক। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় জীবন উপভোগ করুক মেয়েরাও। টেলিভিশনে সাপ বা সরীসৃপ ধরার মতো দুঃসাহসিক কাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেদের দেখা যায়। সেখানে তার মতো মেয়েদের আরও বেশি করে দেখতে চান রোজি।

সমাজমাধ্যমে বেশ সক্রিয় রোজি। মডেলিংয়ের অজস্র ছবি তিনি সেখানে পোস্ট করেন। অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়। তবে মডেলিংয়ের ঝলমলে ছবির ছায়ায় যাতে তার জঙ্গল আর পানির অভিজ্ঞতা ঢাকা পড়ে না যায়, সে দিকে নজর রাখেন রোজি নিজেই। সাপ, সরীসৃপদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে নারী হিসেবে এই পেশাকে প্রচারের আলোয় আনার চেষ্টা করেন রোজি। আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ