ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

লটারি জেতাই কাল হলো যে নারীর

প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৩৯

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাজতে ডোরিস ডোনেগান ডি ডি মুর। যাবজ্জীবন হয়েছে এই নারীর। খুনের অপরাধে। এক লটারিজয়ীকে খুন করেছিলেন তিনি। তার আগে সেই নিরীহ মানুষটির বিশ্বাস অর্জন করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। এখন জেলে বসে আমেরিকার ফ্লোরিডায় লটারি সংক্রান্ত বিল পাস করানোর জন্য সওয়াল করছেন। কী রয়েছে সেই বিলে? বিলে বলা হয়েছে, লটারি জেতার পর জয়ীর নাম অন্তত ৯০ দিন প্রকাশ্যে আনা যাবে না। প্রকাশ্যে আনলে অনেক সময়ই সেই জয়ী প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বহু সময় খুন হয়েছেন। জেলে বসে মুর দাবি তুলেছেন— সময়সীমা ৯০ দিন থেকে বাড়িয়ে আরও বেশি করা দরকার।

ফ্লোরিডার ট্যাম্পার বাসিন্দা ছিলেন ডোরিস ডোনেগান ডি ডি মুর। এখন যে বিলের জন্য সওয়াল করছেন, সেই বিল আনার অন্যতম কারণও তিনিই। ২০০৯ সালে টাকার জন্য এক লটারি জয়ীকে খুন করেছিলেন তিনি। ২০১২ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। যদিও নিজের দোষ কখনও কবুল করেননি মুর। বার বার বলেছেন তিনি নিরপরাধ। এখন জেলে বসে লটারিজয়ীদের পরিচয় গোপন রাখার পক্ষে সওয়াল করছেন। ২০০৬ সালে ৩০ মিলিয়ন ডলার লটারি পেয়েছিলেন আব্রাহাম লি শেক্সপিয়ার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। এত টাকা পাবেন, কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবেননি আব্রাহাম। সেই লটারি আব্রাহাম কিনেছিলেন কাকতালীয়ভাবে। ফ্লোরিডা থেকে মায়ামি যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে এক বন্ধু মাইকেল ফোর্ড। মাঝপথে ট্রাক দাঁড় করিয়ে লটারির টিকিট কিনতে গিয়েছিলেন ফোর্ড। বন্ধু আব্রাহামকে জিজ্ঞেস করেন, তার জন্য কফি নিয়ে আসবেন কি না। তখনই ফোর্ডের হাতে দুই ডলার গুঁজে দিয়েছিলেন আব্রাহাম।

বলেছিলেন, তার জন্যও একটি লটারির টিকিট কিনে আনতে। সে দিন আব্রাহামের পকেটে ছিল মাত্র পাঁচ ডলার। পরে যখন আব্রাহাম লটারি জিতেছিলেন, তখন তার ভাগ চেয়েছিলেন ফোর্ড। দাবি করেছিলেন ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে ৯ কোটি টাকা। রাজি হননি আব্রাহাম। সোজা আদালতে যান ফোর্ড। সেখানে অভিযোগ করেন, তার ব্যাগ থেকে লটারির টিকিট চুরি করেছিলেন আব্রাহাম। আদালত অভিযোগ মানেনি। লটারি সংস্থা থেকে পুরস্কার মূল্য হিসাবে একসঙ্গে নগদে ১৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন আব্রাহাম। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। টাকা পেয়েই ফ্লোরিডার লেকল্যান্ড ছেড়ে অন্য জায়গায় বাড়ি কিনে চলে যান আব্রাহাম। লেকল্যান্ডে মূলত শ্রমিক শ্রেণির বাস ছিল। বড়লোক হয়ে সেখানে আর থাকতে চাননি আব্রাহাম। ১০ লাখ ডলার দিয়ে বাড়ি কিনেছিলেন একদা ট্রাকচালক। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে ৯ কোটি টাকা। একটি নিসান আলটিমা গাড়ি আর নিজের জন্য একটা রোলেক্স ঘড়ি কিনেছিলেন আব্রাহাম। এটুকুই। আর খুব বেশি কিছু কেনেননি তিনি। তাতেই পড়েছিলেন বিপাকে।

আব্রাহামের বন্ধুরা জানান, কোটি কোটি টাকা পেয়েও খুশি হতে পারছিলেন না তিনি। অবসাদ গ্রাস করছিল। কারণ বন্ধু, আত্মীয়। নিত্যদিন এসে টাকা ধার চাইতেন তারা। দিতে অস্বীকার করলে আব্রাহামকে গালাগাল করতেন। সম্পর্ক ভেঙে যেত। এই সময়ই আব্রাহামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মুর। জানান, আব্রাহামের জীবন নিয়ে বই লিখতে চান। এর পর পরিচয় বাড়লে মুর প্রস্তাব দেন, আব্রাহামের টাকা-পয়সা তিনিই সামলাবেন। বিনিয়োগ করবেন। কিছুই পড়াশোনা জানতেন না আব্রাহাম। তাই মুর যা বোঝাতেন, সেটাই বুঝতেন। তাকে বিশ্বাস করতেন। সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন মুর। আব্রাহামকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যবসায় ভাগিদার করেন। তার থেকে ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেন তিনি। বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ৯ কোটি টাকা। সেই টাকায় নিজের জন্য একটা শেভরোলে গাড়ি, একটি ট্রাক, একটি হামার কেনেন। এ সব কিনে চলে যান বেড়াতে। পরে মুর জানিয়েছিলেন, তাকে আসলে ওই টাকা উপহার দিয়েছিলেন মুর।

২০০৯ সালে তার পরিবার জানায়, আব্রাহামের খোঁজ মিলছে না। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে একটি বাড়ির পেছনে বাগান থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়। সেখানে কংক্রিটের স্ল্যাবের নিচে পোঁতা ছিল দেহ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হন মুর। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, টাকার জন্যই আব্রাহামকে খুন করেছিলেন তিনি। তার পর নিজের এক প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডের বাড়ির পেছনে পুঁতে দিয়েছিলেন।

যদিও আব্রাহামের দেহ মেলার আগে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছিলেন মুর। জানিয়েছিলেন, তিনি শহর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। লোকজন টাকা ধার চাইত। তাই বিরক্ত হয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। আব্রাহাম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার বাড়িতেই থাকতেন মুর। তার মোবাইল ব্যবহার করতেন। সেখান থেকে আব্রাহাম সেজে তার বন্ধুদের মেসেজ করতেন। সবাইকে বোঝাতেন যে, তিনি ভালো রয়েছেন। আব্রাহামের মাকে জন্মদিনে কার্ডও পাঠিয়েছিলেন। প্রেরক হিসাবে নাম ছিল আব্রাহামের। তার স্ত্রীকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন, যাতে তিনি গোয়েন্দাদের জানান, আব্রাহাম জীবিত। শেষ পর্যন্ত সব জারিজুরি শেষ হয় মুরের। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ১৯৯২ সালে জেমস মুর নামে একজনকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে একটি ছেলের জন্ম দেন। আগেও প্রতারণায় জড়িয়েছেন তিনি। বিমা নিয়ে লোকজনকে ঠকিয়েছিলেন। ২০০২ সালে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। তার পরই ছক কষে লটারিজয়ী আব্রাহামকে নিশানা করেন। আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ