ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১ জিলকদ ১৪৪৫

ছুটির দিনে মেট্রোরেলে ‘সেলফি’ উৎসব

প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৪৭

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বপ্নের মেট্রোরেল বাস্তবে রূপ নেয় গত ২৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে দিয়েই মেট্রোযুগে বাংলাদেশের প্রবেশ। সেই স্বপ্নকে একবার ছুঁতে উদ্গ্রীব দেশের মানুষ। নানা ব্যস্ততার মধ্যেই একটুখানি সময় বের করে আগারগাঁও অথবা উত্তরা দিয়াবাড়িতে ছুটছেন তারা। এরপর টিকিট কেটে স্বপ্নের মেট্রোরেলের স্পর্শ নিয়ে বাড়ি ফেরা! গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের এমন চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি ও আগারগাঁও গিয়ে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেট্রোরেল ভ্রমণে সাধারণ মানুষের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ায় অনেককেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সংসারের ব্যস্ততায় গত বৃহস্পতিবার মেট্রোরেলে উঠার চেষ্টা করতে পারেননি সৈকত মালাকার। তাই শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বাবুবাজার এলাকা থেকে সপরিবারে ছুটে আসেন আগারগাঁও স্টেশনে। স্টেশনে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ গেটে পৌঁছান টানা তিন ঘণ্টা পর। সকাল সাড়ে ৮টার পর গেট খুলে দিলে ঢুকতে পারেন তিনি। বলেন, খুব কষ্ট করে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাওয়ায় সব কষ্ট ভুলে স্বপ্নের মেট্রোরেলে যাত্রা করি। নিজের দেশের ইলেকট্রিক ট্রেনে উঠে এতটাই গর্ব অনুভব করছি যে, মনে হচ্ছে আকাশ যেন হাতের কাছে চলে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, খুব ইচ্ছা ছিল পরিবার নিয়ে একদিন না একদিন মেট্রোরেলে উঠব। কিন্তু করোনার কারণে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটা ভাটা পড়ে। যার সমাপ্তি ঘটে চলতি বছরে। এখন পরিবার নিয়ে মেট্রোরেলে যাত্রা করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

মিরপুর থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসেছেন জামিল হোসেন। সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও নাতনি। প্রথম দিন আসতে পারেননি বলে শুক্রবার ছুটির দিনে এসেছেন সবাইকে নিয়ে।

গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়ার মেট্রোরেলে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রার গতকাল শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় দিন।

এদিন সকালে আগারগাঁও থেকে উত্তর ছেড়ে যায় মেট্রোরেলের প্রথম ট্রিপ। এর আগে ৭টা ৫০ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তে এসে দাঁড়ায় আরেকটি মেট্রোরেলে। পরে সেটি ৮টায় দিয়াবাড়ি স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে প্রথম ট্রিপে কতজন যাত্রী ছিল তা জানা যায়নি। এরপর দ্বিতীয়টি ছেড়ে গেছে ৮টা ১০ মিনিটে। আগারগাঁও স্টেশনে আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশ গত বৃহস্পতিবার এবং আগে আগাম টিকিট নিতে পারেননি। তাই তারা গতকাল শুক্রবার কাউন্টারে সরাসরি টিকিট কিনছেন। বেশিরভাগ যাত্রী এসেছেন মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেট এলাকা থেকে। স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট কাটতে সহযোগিতা করছেন স্কাউটের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে যাত্রার আগ মুহূর্ত থেকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশিরভাগ যাত্রী সেলফি ও ছবি তুলছেন।

পল্লবী এলাকা থেকে এসেছেন ফারিয়া খাতুন। সঙ্গে তার আরও পাঁচ বন্ধু। তারা সবাই উত্তরার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। সকালে দিয়াবাড়ি থেকে প্রথম ট্রিপে আগারগাঁও এসে নেমেছেন। এরপর ঘণ্টাখানেক সেখানে অবস্থান করেন। ফারিয়া বলছিলেন, প্রথম ট্রিপে এসেছি ভালো লাগল। আগারগাঁও স্টেশনে অবস্থান করছি দেখছি।

সঙ্গে থাকা তার বন্ধু সুজন বলেন, আমরা একসঙ্গে ভোরবেলা পাঁচজন রওনা হয়েছে উত্তরা থেকে। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও এসেছি। আগে মেট্রোরেলের কথা শুনতাম। এখন সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার স্বাদ নিলাম। ঢাকাবাসীর জন্য কল্যাণকর হবে। তবে এই সিস্টেম চালু হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার আমাদের সবার দায়িত্ব। দ্বিতীয় দিনে আগারগাঁও স্টেশন থেকে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ইউটিউবারদের ঘটনাস্থল থেকে লাইভ করতে দেখা গেছে। আগারগাঁও স্টেশনে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাইন। দীর্ঘলাইনে দাঁড়ালেও সেই ভোগান্তির ছাপ কারও মুখে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

ফার্মগেটে থেকে এসেছেন ফাহিমা আক্তার। গত বৃহস্পতিবার চাকরির ব্যস্ততায় আসতে পারেননি। এ জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় এসে সাড়ে ৮টায় ঢুকে যান মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে। তবে তাকে টিকিট পেতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। দাঁড়ানোর ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি টিকিট পেয়ে যান। এরপর সেলফি নিতে ভুলেন নেই এই নারী। তিনি বলছিলেন, এক অন্যরকম অনুভূতি। আগে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার কথা শুনেছি। এখন নিজের দেশের মেট্রোরেলে চড়ব।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ