ঢাকা, সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শ্রমিক সংকটে হাওরে ধান কাটায় ধীরগতি

প্রকাশনার সময়: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৫৪

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরে হাওরে সোনালি ধানের শীষ দুলছে। ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবার ফলনও ভালো। প্রচণ্ড রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা হলেও এমন আবহাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। ধান কেটে এক দিনেই গোলায় তুলতে পারছেন। তবে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওরের শ্রমিক সংকট। শ্রমিকের সংকট ও কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের অপ্রতুলতায় পাকা ধান কাটায় ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের আতঙ্কে দ্রুত ধান তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) উপজেলার নলুয়া, মইয়া ও পিংলার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল হাওরজুড়ে সোনালি ধানের শীষ দুলছে। কিছু কিছু জমিতে কৃষকেরা ধান কাটছেন, আবার কিছু জমিতে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। অনেক জমির পাকা ধান শ্রমিক সংকটে কাটা হচ্ছে না। কৃষকের পাশাপাশি কিষাণীরা বাড়ির আঙিনায় খলা (ধান শুকানোর জায়গা) তৈরি করে ধান শুকাচ্ছেন।

দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সারদা চরণ দাস বলেন, পাকা ধান হাওরে রেখে রাতে ঘুম হয় না। কখন ঝড়-শিলাবৃষ্টি আসে, বলা তো যায় না। শ্রমিক সংকট থাকায় ধীরে ধীরে ধান কাটতে হচ্ছে।

চিলাউড়া গ্রামের কৃষক গফুর মিয়া জানান, সাত হাল (৩৬০ শতাংশে এক হাল) জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রতিবছর সিরাজগঞ্জ থেকে ৫০ জন শ্রমিক আসেন ধান কাটতে। এবার না আসায় পাকা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, শুকনা জমি ছাড়া সামান্য পানি থাকলে জমিতে হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটতে পারে না।

ভূরাখালী গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, শ্রমিকসংকট দূর করতে হারভেস্টার যন্ত্র আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। কিন্তু সামান্য পানি থাকলে হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটতে পারে না। তাই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

নলুয়ার হাওরে কথা হয় সিলেট মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী সুমন দাশের সঙ্গে। সুমন বলেন, ‘কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে বাবার জমিতে আনন্দ নিয়েই ধান কাটছি। কারণ, এ ধানই আমাদের সারা বছরের জীবন-জীবিকা, লেখাপড়ার খরচ জোগানের অবলম্বন।’

তিনি বলেন, তার মতো কয়েক শ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী হাওরে ধান কাটার কাজ করছেন।

চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, হাওরে কৃষি শ্রমিকের সংকট ও কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের অপ্রতুলতা রয়েছে। নলুয়ার হাওর এলাকার ৯০ জন কৃষক কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের জন্য এবার আবেদন করেছেন। একটি যন্ত্র বরাদ্দ পাননি।

এবিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, এবার ছোট-বড় ২০টি হাওরে ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ধান কাটার জন্য এরমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ হাজার কৃষিশ্রমিক ও ৭৫টি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি শ্রমিক সংকট দূর হবে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলামের বলেন, প্রকৃতি কখন রূপ বদলায়, তা বলা যায় না। তাই ৮০ শতাংশ ধান পাকার পর কেটে ফেলতে অনুরোধ করছি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ