ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পাবিপ্রবিতে নিয়ম ভেঙে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২২

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবের যন্ত্রপাতি কেনার টেন্ডারে শর্ত পূরণ না করলেও একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার মূল্যায়নে অনিয়ম দেখিয়ে বুধবার (১৮ এপ্রিল) মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন। তারা কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল টেকনোলজি’র টেন্ডার বাতিল করার জন্য প্রকল্প পরিচালকের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের অফিস সূত্র বলছে, প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন বিভাগের জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি একটি টেন্ডার (লট-৩) আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে শর্ত দেওয়া হয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং একসাথে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বৈজ্ঞানিক অথবা ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই সাথে টেন্ডার জমা দেওয়ার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার সিডিউলে পণ্যের ব্র্যান্ড নাম, মডেল এবং কোনো দেশের পণ্য সেটা উল্লেখ করে দিতে হবে। যদি কোনো পণ্য ডুপ্লিকেট হয় কিংবা পণ্যের গুণগত মান ভালো না হয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না।

এই টেন্ডারে গ্লোবাল টেকনোলজি এবং মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেন।

এ নিয়ে ১ এপ্রিল যন্ত্রপাতি কেনার কারিগরি সাব কমিটি মিটিং করে ইভালিউশন কমিটিকে পিপিআর-২০০৮ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেন। পরে ইভালিউশন কমিটি ‘গ্লোবাল টেকনোলজি’কে কাজটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ ইভালিউশন কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন। তারা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, টেন্ডার জমা দেওয়ার সময় টেন্ডার সিডিউলে ব্র্যান্ডের নাম, মডেল, দেশের নাম গ্লোবাল টেকনোলজি উল্লেখ করেনি। পণ্যের জন্য টেন্ডার নোটিশে দেওয়া টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনগুলো পূরণ করতে পারেনি গ্লোবাল টেকনোলজি। দরপত্রে কোনো ডুপ্লিকেট পণ্য না দেওয়ার কথা থাকলেও গ্লোবাল টেকনোলজির প্রস্তাবিত অনেকগুলো যন্ত্রই ডুপ্লিকেট এবং সেগুলোর কোনো গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি নেই বলে তারা জানতে পেরেছে।

মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ আরও অভিযোগ করে, দরপত্রে দেওয়া শর্তে একসাথে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বৈজ্ঞানিক অথবা ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি সরবরাহের অভিজ্ঞতা গ্লোবাল টেকনোলজির না থাকলেও জালিয়াতির করে সে অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে।

মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজের করা অভিযোগের সত্যতা মেলে কারিগরি সাব কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১ এপ্রিল কারিগরি সাব কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীর নথি এই প্রতিবেদকের কাছে আসে। সেখানে তারা টেন্ডারে চাহিদাকৃত টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এর সাথে গ্লোবাল টেকনোলজির চেয়ে মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজের বেশি সামঞ্জস্যতা খুঁজে পান।

দরপত্র দাখিলের একটি নথি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায় প্রশাসনের দেওয়া ২১ কোটি ৪৬ লাখ বাজেটের মধ্যে মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ তাদের জমা দেওয়া দরপত্রে ২৩ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকায় যন্ত্রপাতি কিনে দিতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, গ্লোবাল টেকনোলজি ২১ কোটি ২৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭শ টাকায় যন্ত্রপাতি কিনে দিতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন।

প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের একটি সুত্র বলছে, মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজ পণ্য ভালো দেওয়ার কথা উল্লেখ করলেও তারা বেশি খরচ দেখিয়েছে। যার কারণে গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

তবে মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমানের অভিযোগ ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘টেন্ডার নোটিশে, কোনো প্রতিষ্ঠান ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেয়ে সর্বনিন্ম ১৫% কম অথবা সর্বোচ্চ ১৫% বেশি মূল্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারবেন। আমরা যে মূল্য তালিকা দিয়েছি তা দরপত্রে উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে বেশি কিন্তু সর্বোচ্চ ১৫% এর চেয়ে কম। আমরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দেখিয়েছি কিন্তু সীমার বাইরে যাইনি, পাশাপাশি আমরা যতগুলো পণ্য দেখিয়েছি সেগুলো টেন্ডার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়েছে কিন্তু পক্ষপাত করে আমাদেরকে টেন্ডার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তাদের সাথে প্রকল্প পরিচালকের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো। টেন্ডারে শর্ত ছিলো এখানে আমেরিকা, জার্মানি, ইতালি এবং সময় পর্যায়ের দেশের পণ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু ওদের বেশির ভাগ পণ্যই চীনের। টেন্ডারে দেওয়া অনেকগুলো শর্ত তারা পূরণ করতে পারেনি অথচ ঐ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে।’

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল (অব.) আজিজুর রহমানের সাথে জানতে চাইলে তিনি মেসার্স এন.এস এন্টারপ্রাইজের অভিযোগগুলো মিথ্যা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যা করেছি সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী করেছি। এন.এস এন্টারপ্রাইজ যেহেতু কাজ পায়নি তাই তারা অভিযোগ করছে, তাদের অভিযোগগুলো মিথ্যা। তারা কাজ পায়নি বলেই এখন নানান জনের কাছে অভিযোগ করছেন।’ এ সময় গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজের টেন্ডার সিডিউল দেখতে চাইলে তিনি সেটা দেখাতে রাজি হননি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ