ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আকুতি-মিনতি করেও দেয়া হলো না শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা!

প্রকাশনার সময়: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৮ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৫

মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার প্রকাশ মন্ডলের (২৯) ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণে শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে উপস্থিত হন মুন্সীগঞ্জের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) কেন্দ্রে।

তবে আসার পথে হয়ে যায় বিলম্ব! সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রে থাকার কথা থাকলেও, ৯টা ৩৫ মিনিটে উপস্থিত হওয়ায় প্রবেশাধিকার পাওয়া হয়নি আর। এসময় বারবার চেষ্টা করে, বিভিন্ন আকুতি-মিনতি করলেও খোলা হয়নি গেট।

শুধু এক প্রকাশ মন্ডলই নয়, এদিন প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে বিলম্বে উপস্থিত হওয়ায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারেননি অনেক পরীক্ষার্থী। শহরের দেওভোগ থেকে ৯টা ৪০ মিনিটে উপস্থিত হওয়া সাজ্জাদ হোসেন (২৭), চরকেওয়ার ইউনিয়ন থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটে আসা মো. রফিকুল ইসলাম, লৌহজং উপজেলা থেকে আসা সুমনসহ (৩০) বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী গেটে বিভিন্ন আকুতি করতে দেখা যায়। এসময় পরীক্ষা দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেউ কেউ।

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন অভিভাবককেও আকুতি করতে দেখা যায়। শিক্ষক পরীক্ষার্থী প্রকাশ মন্ডল বলেন, রাস্তায় গাড়ির কারণে মাত্র পাঁচ মিনিট দেরিতে পৌঁছাই, আমাকে সুযোগটি দিতে পারতো। গেটে অনেকবার আকুতি জানালেও কারো সাড়া পেলাম না। অনেক পরীক্ষার্থী কিছুটা দেরিতে আসায় তাদের পরীক্ষা দেওয়া হলো না।

১০ মিনিট বিলম্বে ৯টা ৪০ মিনিটে উপস্থিত হওয়া রনি ঘোষ (৩০) বলেন, এটি আমার চাকরি পাওয়ার শেষ বছর। তাই শেষ চেষ্টা করার জন্য এসেছিলাম। পথে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আমার পাঁচ-সাঁত মিনিট দেরি হয়ে যায়। এজন্য আর পরীক্ষা হলে ঢুকতে দিলো না। পরীক্ষা দিতে পারলে হয়তো উত্তীর্ণ হলে চাকরি করে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারতাম।

আরো কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, নানা কারণে তাদের কিছুটা দেরি হয়ে যায়। তবে এমন হবে জানলে আরও আগেই উপস্থিত হওয়ার কথা জানান তারা।

শুধু তাই নয়, পিটিআই পরীক্ষা কেন্দ্রে সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক নূরুন্নাহার বেগমের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। তিনিও ৯টা ৪৫ মিনিটে আসায় গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি শাখা) মুনতাসির মাহফুজ জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ ও সকাল সাড়ে ৯টায় প্রবেশাধিকার বন্ধের। নির্দেশনা অনুযায়ী, ৯টা ৩০ মিনিটে গেট বন্ধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের শিক্ষক পদ একটি দায়িত্বশীল জায়গা, যারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, তাদের সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিৎ। সময় মতো কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়টিও একটি পরীক্ষা ছিলো। তাই বিশৃঙ্খলা এড়াতেই নির্ধারিত সময়ের পর কাউকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন মোবাইলে জানান, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারেনি, শুধু তাদেরই গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬ হাজার ৫৭ জন। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জেলার ৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ