ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পল্লী চিকিৎসক মোজাহার আলী বাঁচতে চায় 

প্রকাশনার সময়: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫১

লিভারের একটি জটিল রোগের নাম ‘লিভার সিরোসিস’। এমন একটি দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন মোজাহার আলী নামে এক পল্লী চিকিৎসক।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক এই ইউপি সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মোজাহার আলী দু’বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুধু মাত্র লিভার প্রতিস্থাপন করলেই (ট্রান্সপ্লান্টেশন) তাকে বাঁচানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, তাকে বাঁচাতে হলে আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

যেমন- দাতা জীবিত অথবা মৃত হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোজাহার আলীকে লিভার দান করতে হবে। আবার, যার শরীর থেকে লিভার নেওয়া হবে, তার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মোজাহার আলীর রক্তের গ্রুপ মিল থাকতে হবে।

এরই মধ্যে অবশ্য অন্ধকারেও কিছুটা আলো খুঁজে পেয়েছেন মোজাহার আলী। পরিবারের সদস্যদের একজন লিভার দান করতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাদের উভয়কেই ভারতে যেতে হবে। কিন্তু বেঁচে থাকার স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই জটিল অপারেশন করতে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে বলে ধারণা দিয়েছেন চিকিৎসক।

মোজাহার আলী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেনের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে থেকে তাকে জানানো হয়েছে, তার লিভার প্রায় সম্পূর্ণ অকেজো হওয়ার পথে। সাধারণ চিকিৎসায় এটা আরোগ্য হওয়া সম্ভব নয়। জরুরী ভিত্তিতে তাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে।

মোজাহার আলীর স্বজনরা জানান, গাইবান্ধা ছাড়াও তাকে ঢাকা, রংপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়েছে। আত্নীয়-স্বজনরা টাকা তুলে কোনোরকম চিকিৎসা চালি নিচ্ছে। এই পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারী সাহায্য প্রয়োজন। লোকটা নিজেই এতদিন অন্যের অসুস্থতায় বাড়ি বাড়ি ছুটে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে এসেছেন। মেম্বার থাকাকালীন সময়ে অনেককে সাহায্য, সহযোগিতা করেছেন। সেই মানুষটিই এখন অর্থের অভাবে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। এত টাকা জোগাড় করার ক্ষমতাও আমাদের নেই।

ভুক্তভোগী মোজাহার আলীর ছেলে রাজু মিয়া বলেন, বাবা অসুস্থ প্রায় তিন বছর হচ্ছে। পরিবারে আমরা ১৪ ভাইবোন। আমাদেরকে মানুষ করতেই আবাদের জমি-জমা যা ছিল, সব শেষ। আমরা ভাইয়েরা দিন আনি দিন খাই। সারারাত বসে বসে তার সেবা করি। চিকিৎসার জন্য ১৮ লাখ টাকা লাগবে। চোখের সামনে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে, আমরা কেউ কিছুই করতে পারছিনা।

মোজাহার আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, দু’বছর আগে হঠাৎ করে এই রোগ ধরা পড়ে। অর্থের অভাবে ছেলেরাও সেভাবে সহযোগীতা করতে পারছেনা। নিজের সহায়, সম্বল বলতে ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। পরিবার থেকে একজন লিভার দান করতে চেয়েছে। কিন্তু লিভার প্রতিস্থাপন করতে অনেক টাকা লাগবে। এত টাকা আমি কই পাবো? কোনো বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আমাকে সাহায্য করতেন, তাহলে হয়তো আমিও বাঁচতে পারতাম। সবার মতো আমিও বাঁচতে চাই।

মালিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া দু:খ প্রকাশ করে বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য এবং পল্লী চিকিৎসক মোজাহার আলী প্রায় দু’বছর ধরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। টাকা না থাকার কারণে তিনি চিকিৎসা করতে পারছেন না। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবাই মিলে তাকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুনেছি অপারেশন করতে প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ হবে। এতো টাকা কিভাবে সংগ্রহ করবে তার পরিবার ভেবে পাচ্ছিনা। আপনাদের মাধ্যমে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং বিত্তশালী ব্যক্তিদের তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন শাহ বলেন, তার পক্ষ থেকে এখনো কেউ আবেদন করেনি। এই দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আবেদন করলে তার জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ