ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ৫ জিলকদ ১৪৪৫

কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই ২২০০ ডেলিভারি, প্রসূতিদের আস্থার প্রতীক আফরিন

প্রকাশনার সময়: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০০

চুয়াডাঙ্গায় গর্ভবর্তী ও প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারি করিয়ে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক মোছা. আফরিন আরা। গত ১০ বছরে কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই ২ হাজার ২০০ প্রসূতিকে নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন তিনি। এতে প্রশংসায় ভাসছেন আরা।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল তিনি এখানে যোগদান করেন আফরিন আরা । ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে জুলাই মাসে স্বপরিবার কেন্দ্রের দোতলার কোয়ার্টারে এসে উঠেন। সেই থেকে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টার সেবা দিচ্ছেন আফরিন। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন।

আফরিন আরা বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাসের কথা। মরিয়ম নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হয় বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। সেখানে ছিল না স্বাভাবিক প্রসবের প্রয়োজনীয় উপকরণ। শুধু প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়। তবে নবজাতকটি জন্মের পর পরই শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এ সময় কোন কিছু না ভেবে নবজাতকের মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দেয়া হয়। পরে ১২ ঘণ্টা পর মা ও নবজাতককে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, পরিশ্রম করে যখন গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তখন ভুলে যায় সকল কষ্ট। ডেলিভারি করতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার কাছে অনেকে ডেলিভারি করেছে, যেটা আমার ভালো লাগা ও প্রাপ্তির একটি বিষয়। এ কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসার আলমগীর হোসেন, আয়া রওশন আরা ও অফিস সহায়ক আবুল কালাম আজাদ। এই ১০ বছরে এভাবে ২ হাজার ২০০ নরমাল ডেলিভারি করে এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন আস্থার ঠিকানা।

আফরিন আরও বলেন, গত বছরে ২০৪ টি এবং চলতি বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৪৬ টি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি। বিশেষ করে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজারিয়ান অপারেশন করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারির আস্থা নিয়ে আমার কাছে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ রয়েছেন।

সরেজমিনে বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন প্রসূতি নারীরা। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাসহ পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী আফরিন।

এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েক রোগী বলেন, শুধু প্রসূতিদের চিকিৎসা নয়, যে কোনো শারীরিক সমস্যায় পরামর্শ দিয়ে আসছেন তিনি। চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় প্রসূতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারীরিক যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসেন।

হিজলগাড়ী গ্রামের প্রসূতি রহিমা বলেন, আফরিন আপা আমার নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি, খরচও হয়নি তেমন। মা- শিশু ভালো আছি।

এদিকে চিকিৎসা নিতে আসা তরুণী সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমাদের মেয়েদের অনেক রকম শারীরিক সমস্যা হয়। যেগুলো অন্য চিকিৎসকের কাছে শেয়ার করতে পারি না, যা আন্টির সঙ্গে শেয়ার করে ভালো চিকিৎসাসেবা নিতে পারি। এই ক্লিনিকটা হওয়ায় আমাদের কয়েক এলাকার মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।

বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আলমগীর কবীর বলেন, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসব করিয়ে জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন অজপাড়াগাঁ বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। আর এই কাজটি স্বাভাবিকভাবে করছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আফরিন আরা। ঝুঁকি থাকলেও আস্থার জায়গা ভেবে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আসেন এবং হাসিমুখে সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ