ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইসক্রিম খাওয়ায় ৩ শিশুকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশনার সময়: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩০

আইসক্রিম খাওয়ার অপরাধে ফাহিম হোসেন (১০), আবদুল্লাহ (৯) ও ইমাম হোসেন (৭) নামের তিন শিশুকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। সোমবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই তিন শিশুকে উদ্ধার করে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোকান মালিক আনোয়ারকে (৪৫) আটক করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফলের মদনপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শাহিন হোসেনের ছেলে ফাহিম (১০), শহিদুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ (৯) ও হালিম মুন্সির ছেলে ইমাম হোসেন সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় মৃধার বাজারে গিয়ে আনোয়ার স্টোরের ফ্রিজ থেকে না বলে ৩০ টাকা দামের তিনটি আইসক্রিম খায়। দোকান মালিক আনোয়ার ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ওই তিন শিশুকে তার দোকানে খুঁটির সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে তালা লাগিয়ে রাখেন এবং আইসক্রিম খাওয়ার অপরাধে তাদের লোহার রড ও হাঁতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। এ অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা যাবত তিন শিশুকে শিকল দিয়ে বেঁধে তালা মেরে রাখা হয়। পরে ওই শিশুদের বাবা–মা ও স্বজনরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।

ওই তিন শিশুর মধ্যে ফাহিম ও আবদুল্লাহ স্থানীয় তানজিমুল উলুম হাফেজি মাদরাসার ছাত্র। আর ইমাম হোসেন মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র। সে সম্পর্কে আবদুল্লাহর ভাগ্নে হয়।

শিশু আবদুল্লাহর মা রুনু বেগম অভিযোগ করে বলেন, ঘটনা শোনার পর তিনি মৃধার বাজারে গিয়ে তার ছেলে ও নাতিসহ ফাহিমকে ছেড়ে দেয়ার জন্য দোকাকি আনোয়ারকে অনুরোধ করলেও তিনি শুনেননি। বরং তাকে গালমন্দ করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করলে আনোয়ার শিকলের তালা খুলে দেন।

নির্যাতনের শিকার শিশু ফাহিম জানায়, তারা তিন জন মাদরাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে মৃধার বাজারে যায়। সেখানে আনোয়ার স্টোরে গিয়ে দোকানিকে না পেয়ে তার ফ্রিজ থেকে ৩০ টাকা মূল্যের তিনটি আইসক্রিম নেয়। আর দোকোনের সামনে বসেই তারা আইক্রিম খায়। এমন সময় আনোয়ার হোসেন এসে তাদের চড়থাপ্পর মারেন। এরপর শিকল দিয়ে তাদের বেঁধে দোকানের খুঁটির সঙ্গে তালা মেরে রাখেন। অনেক আকুতি মিনতি ও কান্নাকাটি করলেও তিনি ছাড়েননি। বরং লোহার রড ও হাঁতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়েছেন। আমরা ব্যথায় কান্নাকাটি করেছি। তারপরেও তিনি আমাদের ছাড়েননি। এভাবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমাদের বেঁধে রাখা হয়। পরে আমাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনরা এসে আমাদের ছাড়িয়ে নেয়।

এ বিষয়ে মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মস্তফা বলেন, আমি অসুস্থ। খবর পেয়ে ৫নং ওয়ার্ডের চৌকিদার সাইদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠাই বাচ্চাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু দোকানি তার কথা শোনেননি। চৌকিদার আমাকে জানানোর পর আমি মোবাইল ফোনে আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলি ওই বাচ্চাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আমার কথাও শোনেননি। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ গিয়ে ওই শিশুদের উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। জড়িত দোকানি আনোয়ারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ