ডিয়েগো ম্যারাডোনা মৃত্যু নামক অমোঘ সত্যের প্রাচীর পেরিয়ে দুনিয়ার সব হিসাবের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন বছর দুয়েক আগে। কাতারে আসন্ন বিশ্বকাপটা তাই নিয়ে আসবে একটা ভিন্নতাই। বিশ্বকাপটা চলবে, কিন্তু তাতে থাকবে না ম্যারাডোনার উপস্থিতি, কথা বলবেন না লিওনেল মেসি আর তার দল নিয়ে! ম্যারাডোনা নেই; তার সঙ্গে সর্বকালের সেরার আলোচনায় যার নাম উঠে আসে, সেই কিংবদন্তি পেলেরও বিশ্বকাপে আসা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। রোগের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই যুদ্ধ চলছে তার। শেষ দুই বছরে বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। এখনও খুব একটা স্বস্তি নেই। মেনে চলতে হচ্ছে ডাক্তারদের কড়া নির্দেশনা।
চিকিৎসকদের অনুমতি মেলেনি এখনও। সে কারণে তার কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে সমর্থন দিতে আসার সম্ভাবনাটা কমে গেছে। ১৯৭৩ সালে সান্তোসের হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে প্রথমবার কাতার এসেছিলেন পেলে। সেই সময় তাকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা এখনও ফুটবল সম্রাটের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। কাতারকে বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেয়ার পরে পেলে বলেছিলেন, ‘কাতারে আমি একাধিক বার গিয়েছি। প্রত্যেকবারই মানুষের উন্মাদনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার বিশ্বাস, বিশ্বকাপের আয়োজন দুর্দান্তভাবেই করবে ওরা।’
অসুস্থতার কারণে প্রিয় কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে আসার স্বপ্ন হয়তো অপূর্ণই থেকে যাবে ফুটবল সম্রাটের। নেইমারদের প্রস্তুতি দেখার ফাঁকেই ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার এক প্রভাবশালী কর্তা হতাশ হয়ে বললেন, ‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে যেতে পারেননি পেলে। কিন্তু মাসখানেক আগেই জানিয়েছিলেন, কাতারে তিনি মাঠে থাকতে চান। ফুটবলাররাও খুব উৎসাহিত হয়েছিল ফুটবল সম্রাটের ইচ্ছের কথা শুনে। কিন্তু তার চিকিৎসকরা কিছুতেই অনুমতি দিচ্ছেন না।’
যোগ করলেন, ‘পেলের বয়স এখন ৮২। নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আমরাও জানি, এই অবস্থায় ওর পক্ষে দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল সামলানো কঠিন। তা সত্ত্বেও ফুটবল সম্রাট নিজে যখন ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তখন আমরাও প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু ওর চিকিৎসকরা রাজি নন। বলেছেন, পেলের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে সর্বক্ষণ শুধু পর্যবেক্ষণে রাখলেই হবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসা করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। কাতারে তা সম্ভব হওয়া কঠিন। তাই ব্রাজিল যদি ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জিততে পারে, টিভিতেই হয়তো দেখতে হবে ফুটবল সম্রাটকে।’
শারীরিক কারণে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে পেলের আসার সম্ভাবনা কমে আসছে কমেই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা তো দু’বছর আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ফলে দুই কিংবদন্তিকে ছাড়া বিশ্বকাপের জৌলুস যে কমে যাবে অনেকটাই, তা বলাই বাহুল্য!
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ