ঢাকা, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলকদ ১৪৪৫

প্লাস্টিক বেতে নতুন রূপ দেওয়ার কারিগর আব্দুল কুদ্দুছ

প্রকাশনার সময়: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:১১ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৩৮

নব্বই কিংবা একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাঁশের তৈরি সাজি, ওরা, কুলা, মোরা, পুরা ও গোলা ব্যবহার করতো মানুষ। কিন্তু অল্প দিনে এসব জিনিস নষ্ট হয়ে যেত। চুট লেগে ভেঙে যেত। পানি লেগে নরম হয়ে যেত। এ নিয়ে বাড়ির কর্তা রীতিমতো রাগ করতেন। এর মধ্যে ২০০৭ সালে মধ্যনগরে সুখবর নিয়ে এলেন হাজি আব্দুল কুদ্দছ। তিনি প্লাস্টিকের বেত নিয়ে তৈরি করতে লাগলেন কৃষকের গ্রামীণ আসবাব। কৃষকরা এসব পেয়ে বেজায় খুশি হলেন। তারা বললেন, আব্দুল কুদ্দুসের সুকল্যাণ হোক।

আব্দুল কুদ্দুসের জন্ম নরসিংদী রায়পুরার মধ্যনগরে। পিতা মাওলানা আব্দুর রশীদ। তরুণ বয়সে কৃষি পণ্যের ব্যবসা করতেন, কুমিল্লার রামছুন্দর বাজারে। মরিচ, পেঁয়াজের বড় ব্যবসা ছিল তার। এরপর ২০০৭ সালে নাড়ির টানে চলে আসেন জন্মালয় মধ্যনগরে। শুরু করেন প্লাস্টিক বেত দিয়ে সাজি, ওরা, কুলা, মোরা, পুরা, ঝাঁপি, পোলো ও ঘরের সিলিং (কার) ইত্যাদি। আব্দুল কুদ্দুছ এসব বানাতেন মধ্যনগর বাজারে। লোকেরা গভীর মনোযোগে আব্দুল কুদ্দুছের কাজ দেখতেন। বলতেন, লোকটার হাতে জাদু আছে গো। এত সুন্দর করে মানুষ জিনিস বানায় কেমনে।

আব্দুল কুদ্দুছ প্লাস্টিক বেত সংগ্রহ করতেন ঢাকা থেকে। বেত এনে মধ্যনগর বাজারের দোকানে বসে বানাতেন দারুণ সব আসবাব। গোলাকার ধানের গোলা যখন বানাতেন, তখন মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতেন। ঘরের কারও বানাতেন বেশ সুন্দর করে। কয়েক গ্রামে নাম পড়ে গিয়েছিল।

ব্যবসা শুরুর কিছু দিন পর অন্য কারিগর দিয়ে কাজ করাতেন আব্দুল কুদ্দুছ। তিনি জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে কারিগরদের নির্দেশনা দিয়ে প্লাস্টিককে আসবাবে রূপ দিতেন। তিনি কারিগরদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী।

প্লাস্টিকের একটি বেতের তৈরি বড় কার বিক্রি হতো ৫০ হাজার। সাইজ অনুযায়ী কমবেশি হতো। গোলার দামও সাইজ অনুযায়ী।

বাঁশের বেতির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বেতির ডোল আর ধারার ব্যবহার বাড়ার বিষয়ে ব্যবহারকারীদের অনেকে বলেন, বাঁশের বেতির ধারা শোবার ঘরের বেড়া আর রান্নাঘরের ছাউনিতে ব্যবহার করলে বৃষ্টির পানিতে ভিজে কয়েক মাসেই নষ্ট হয়ে যেত বা এগুলো উইপোকায় খেয়ে ফেলত। কিন্তু প্লাস্টিকের বেতির ধারা কয়েক বছরেও নষ্ট হয় না। প্লাস্টিকের বেতির ডোলও অনেক টেকসই। এ কারণে গ্রামে প্লাস্টিকের বেতির ধারা আর ডোলের ব্যবহার বাড়ছে।

এখন আর আব্দুল কুদ্দুছ বেঁচে নেই। তিনি গত নভেম্বরে মারা গেছেন। রেখে গেছেন প্লাস্টিক বেত দিয়ে তৈরির সরঞ্জাম। বর্তমানে তার সন্তান মাওলানা বরকত উল্লাহ রশিদী কর্মচারী দিয়ে এসব আসবাব তৈরি করছেন। মধ্যনগর বাজারে আছে প্লাসিক বেত দিয়ে তৈরি বাহারি পণ্যের আসবাব।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ