ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন

প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চিরভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।

এ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রণীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ দিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’, বাঙালি জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং এ.এইচ.এম কামারুজাজামানকে স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। মেহেরপুর হয়ে ওঠে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, সরকারের প্রতিনিধিগণ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এ সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত দিনটিকে বরাবরের ন্যায় স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবার সঙ্গে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ যথাযথ মর্যাদা এবং গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ ও পালন করবে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত এই দিনটিকে বরাবরের ন্যায় স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সকলের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ যথাযথ মর্যাদা এবং গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ ও পালন করবে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আগামী ১৭ এপ্রিল ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এদিকে মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৯টায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে গার্ড অব অনার। সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা মঞ্চ মুজিবনগর দিবসের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম. কামাল হোসেন এমপি, এডভোকেট আফজাল হোসেন, অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি। জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। সঞ্চালনা করবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম. মোজাম্মেল হক। এছাড়া বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা এমপি, এডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক এম, এ খালেক এবং মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

‘মুজিবনগর দিবস’ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন —প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’, বাঙালি জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’, বাঙালি জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা-শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী এবং শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ অকুতোভয় বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ যথাক্রমে ১৬৭টি এবং ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য রেসকোর্স ময়দানে ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’-সংগীত দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ সময় আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগান দেন। তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। তাঁর নির্দেশনাবলি সারা পূর্ব বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। তখন থেকেই সব প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম তাঁর নির্দেশিত পথেই পরিচালিত হতে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা লিখে যান, যা ইপিআর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম এবং টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠনপূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক ইতোপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শতাধিক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। মেহেরপুর হয়ে উঠে অস্থায়ী সরকারের রাজধানী এবং সেদিন থেকে এ স্থানটি ‘মুজিবনগর’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, বাংলাদেশের সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। পাকিস্তানি জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারকীয় তাণ্ডবলীলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর ৩ নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকেও তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে। সেই থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল না। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা জাতির পিতাসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করেছি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছি।’ গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকার উন্নয়নের সব সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। এবারে আমাদের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরা বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছি এবং এর বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, মুজিবনগর দিবসে আমার আহ্বান-সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। জাতির পিতা যে অসামপ্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। ইনশাল্লাহ, আগামীর বাংলাদেশ হবে-স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট সরকার ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন। -বাসস

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ