ঢাকা, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২ জিলকদ ১৪৪৫

বাইশে বেড়েছে প্রেমের আমদানি

প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:০২

জাতি-ধর্ম, শত্রু-মিত্র কিছুই মানে না প্রেম। প্রেম মানে না কোনো সীমানা, ভূখণ্ড। তবে বইয়ের ভাঁজে, খাতার ফাঁকে চিঠি চালাচালি কিংবা দৃষ্টি বিনিময়ে এখন আর প্রেমের ফুল ফোটার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ছাদনাতলা, বটতলার প্রেম বা ল্যান্ডফোনের প্রেম এখন ইতিহাস। প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগের উন্নতির সাথে সাথে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, চ্যাটিংয়ে প্রেম-রসায়ন হয়ে উঠেছে আরও অনায়াসগম্য। প্রেম এখন ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে। এমন মর্মার্থে প্রায়ই বাংলাদেশে ছুটে আসছেন বিদেশি প্রেমিক-প্রেমিকা। কেউ কেউ এখানেই সংসার পাতেন। কেউ বাংলাদেশী স্বামী বা স্ত্রী নিয়ে ফিরে যান নিজের দেশে। আবার কারও কারও স্বপ্নভঙ্গও হয়েছে।

প্রেমের টানে পঞ্চগড়ে এসে ভারতীয় তরুণী আটক, স্বপ্নভঙ্গ প্রেমিক যুগলের: গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ভারতের মুড়িখাওয়া গ্রাম হতে বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা নদী মহানন্দা পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে খুসনামা (১৭) নামে এক তরুণী। আব্দুল লতিফ রাকিব (২১) নামে বাংলাদেশী এক তরুণের প্রেমে পড়ে সীমানা পাড়ি দেয় ওই তরুণী।

তবে দু’দেশের সীমান্ত আইনি জটিলতার কারণে মিলন হয় নি তাদের। ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তরুণীকে তার বাবা-মায়ের হাতে দিয়ে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এদিন সকালে এলাকায় হঠাৎ ভারতীয় তরুণীকে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তরুণী আটক করে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় নিয়ে যায়।

প্রেমিকের কাছ থেকে নিয়ে বিএসএফের হাতে: গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গংগারহাট মিস্ত্রীটারী গ্রামে প্রেমিকের কাছে পালিয়ে আসেন শিউলী খাতুন (১৭) নামের এক ভারতীয় কিশোরী। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিদ্যাবাগিশ সীমান্তেরর ৯৩৮ নম্বর মেইন পিলারের ৩এস সাব-পিলারের পার্শ্ববর্তী এলাকার বিজিবির কাশিপুর কোম্পানী সদর দপ্তর এবং ভারতের বিএসএফের কুর্শাহাট কোম্পানী সদর দপ্তরের কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর ওই কিশোরীকে হস্তান্তর করা হয়।

ইন্দোনেশিয়ার ফানিয়া লক্ষ্মীপুরে: ফেসবুকের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ান তরুণী ফানিয়া আইঅপ্রেনিয়ার সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রাসেল আহমেদের পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা। এক পর্যায়ে তা অদেখার দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। প্রেমের জেরে গত ৭ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আসেন ওই তরুণী।

ময়মনসিংহে নেপালি কন্যা: সিঙ্গাপুরে চাকরির সূত্রে পরিচয়, তারপর মন দেয়া নেয়া। প্রেমের আড়াই বছর পর সিদ্ধান্ত হয় দুজনের বিবাহ বন্ধনের। এ সিদ্ধান্তে প্রথমে বাঁধ সাধেন কনের পরিবার। ভিনদেশী ছেলের সাথে এ সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি তারা। তবে ভালোবাসার টানে টেকেনি সেই আপত্তি। গত ৭ মার্চ নেপালি কন্যা অনুদেবী চলে আসেন বাংলাদেশে। পলাশ পালের বড় বোন চিত্রনায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি ঢাকায় তাদের বিয়ের আয়োজন করেন। জমজমাট আয়োজনে সম্পন্ন হলো বিয়ে। ১২ মার্চ ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নের হতিহর গ্রামে বরের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠিত হয় তাদের।

প্রেমের টানে আমেরিকান যুবক গাজীপুরে: গত ২৯ মে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে বাংলাদেশে পৌঁছান রাইয়ান কফম্যান। সাইদা ইসলামের (২৬) সঙ্গে গাজীপুরে নানার বাড়িতেই ওঠেন মার্কিন যুবক। রাইয়ান সাইদাকে বিয়ে করার জন্য তার দেশেই খৃষ্টধর্ম ত্যাগ করে যথানিয়মে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা।

এর আগে ২০২১ সালে এপ্রিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ডেটিং অ্যাপসে) প্রথম পরিচয় রাইয়ান কফম্যানের সঙ্গে। তারা নিজেদের ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ও অ্যাড্রেস বিনিময় করেন। এরপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তাদের মধ্যে। ফেসবুক ও ফোন নম্বরে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে নিজেরা আরও ঘনিষ্ট হন। কথা হতো ভিডিও কলে। এভাবে কথা বলতে বলতে দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে ফেলেন। প্রায় এক বছর তারা ফেসবুকেই চুটিয়ে প্রেম করেন। এভাবে ব্যক্তি সম্পর্ক পারিবারিক সম্পর্কে রূপ নেয়।

সিলেটে এসে ঘর বাঁধলেন অস্ট্রেলিয়ান তরুণী: গত ১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ও বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রি করেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার খামার গাঁওয়ের যুবক ছাদিক মিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান তরুণী আরিয়া ভংগাসাকদার। ফেসবুকে পরিচয়, এরপর প্রেম থেকে বিয়ে তাদের।

এর আগে ২০১৮ সালে আরিয়া চলে আসেন ছাদিক মিয়ার বাড়িতে। এরপর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঘরোয়া পরিবেশে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেসময় সামাজিক কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। এসময় আরিয়া ভংগাসাকদা ধর্মান্তরিত হন এবং ‘সিমা বেগম’ নাম নেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে আর বাংলাদেশে ফিরতে পারেনি, বিয়ের অনুষ্ঠানও করতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে আবারও বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

প্রেমের টানে মরিশাসের তরুণী ফরিদপুরে: ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে প্রেমের টানে সুদূর মরিশাস থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন বিবি সোহেলা (২৬)। তিন বছর আগে মরিশাসে কাজের সুবাদে বাংলাদেশি মুস্তাকিন ফকিরের (২৭) সঙ্গে পরিচয় হয় বিবি সোহেলার। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের দুই বছরের মাথায় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দেড় বছর পর গত ৪ জুন স্বামীর বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে বেড়াতে আসেন সোহেলা। স্বামী মুস্তাকিন ফকির ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের কৃষক খবির ফকিরের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইস শহরের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম সোহেলার। সেখানকার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। তিনি এখন মরিসাসের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।

মালয়েশিয়ার তরুণী কুমিল্লায়: কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে ব্যবসা করেন। ব্যবসার সুবাদে ওই শহরের বাসিন্দা নূর আজিমার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের জের ধরে গত ১১ জুন প্রেমিক সাইফুলের গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন মালয়েশিয়ান ওই তরুণী। পরে ১২ জুলাই সন্ধ্যায় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হয় তাদের।

প্রেমের টানে মার্কিন তরুণী ছুটে এলেন গাজীপুরে: গত ১১ জুলাই আমেরিকা থেকে লিডিয়া লুজা নামে এক তরুণী গাজীপুরে ইমরান খান নামে এক যুবকের বাড়িতে চলে এসেছেন। লিডিয়া লুজা বলেন, ফেসবুকের কল্যাণে তাদের মধ্যে পরিচয় গড়ে উঠে। ফেসবুকে আলাপচারিতায় ইমরানকে তার ভালো লাগে। উভয় পরিবারের সম্মতিতেই তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে বৈবাহিক বন্ধনের সিদ্ধান্ত নেন।

ইমরান খান জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। মাসখানেক পর লিডিয়া লুজা তাকে প্রস্তাব দেয়। প্রথমে সে তার প্রস্তাব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরে মার্চ মাসের প্রথম দিকে আমেরিকা থেকে তুর্কি হয়ে লুজা বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল (রহ:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চলে আসে। আমেরিকার নাগরিক হওয়ায় তার ধারণা ছিল ভিসা ছাড়াই তিনি বাংলাদেশে আসতে পারবেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে আবার তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

ইমরান জানান, পরে উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে তারা নেপালে সাক্ষাৎ করেন এবং নেপালের একটি মসজিদে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লুজার সঙ্গে কেউ না থাকলেও ইমরানের সঙ্গে ওই সময় তার পরিবারের সদস্য ছিলেন। সেখানে কয়েকদিন অবকাশ কাটিয়ে যার যার দেশে ফিরে যান। পরে ইমরানের সহযোগিতায় ভিসা সম্পাদনের মাধ্যমে ১১ জুলাই লিডিয়া লুজা খান বাংলাদেশে আসেন।

প্রেমের টানে মালয়েশিয়ান তরুণী রাজশাহীতে: পড়ালেখার জন্য মালয়েশিয়ায় যান রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর জুলফিকার। পাশাপাশি খণ্ডকালীন একটি চাকরিও করতেন। ওই সময় জুলফিকারের সঙ্গে পরিচয় হয় স্যান্ডির। তাদের এই পরিচয় একটা সময় পর পরিণয়ে রূপ নেয়। এরপর দুইজনের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীরতা পায়। শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার টানে বাবা-মাকে ছেড়ে উড়ে আসেন রাজশাহীতে। সেই জেরেই এখানে এসে জুলফিকারের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন স্যান্ডি। গত ১৪ জুলাই মুসলীম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

স্যান্ডি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছে আলিশা অ্যানি। ওই তরুণী মালয়েশিয়ার একজন পাসপোর্ট কর্মকর্তা এবং তার স্বামী জুলফিকার এখন একজন ব্যবসায়ী।

গাজীপুরে মালয়েশিয়ান নারী: মালয়েশিয়ার কামপুং কেলেওয়াক এলাকার বাসিন্দা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরে নুরকারমিলা বিনতে হামিদ গত ১৮ জুলাই প্রেমের টানে ছুটে আসেন প্রেমিক গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে। জাহাঙ্গীর মালয়েশিয়া থাকার সুবাদে তার প্রেমে পড়ে।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। সেখানে গিয়ে চাকরি করেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মালয়েশিয়ান মুসলিম পরিবারের মেয়ে নুরকারমিলার সঙ্গে একসঙ্গে চাকরি। তারপর ধীরে ধীরে তাদের দু’জনের ভালোলাগা। তিন বছর আগে জাহাঙ্গীর আলম এদেশে ফিরলেও করোনাসহ নানা কারণে আর মালয়েশিয়া ফেরা হয়নি। তবু ভালোবাসার টানে মনের মানুষটি এদেশে ছুটে আসলে তার মা, বোন ও স্বজনদের মতামতে গ্রামবাসীকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন উৎসব করে বিয়ে করেছেন।

ইতালির যুবক ঠাকুরগাঁওয়ে: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর মারকুস দাসের চাচাতো ভাই জোসেফ ও চাচতো বোন আনজেলা ইতালিতে বসবাস করেন। তাদের সাথে পরিচয় হয় আলি সান্দ্র চিয়ারোমিন্তের। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে বাংলাদেশী মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আলি সান্দ্র চিয়ারোমিন্তে তাদের জানান বাংলাদেশের ভালো কোনো মেয়ে থাকলে মেয়ের সন্ধান দিতে। পরে মারকুস দাসের চাচাতো ভাই জোসেফ ও চাচতো বোন আনজেলা রত্না রানী দাসের কথা জানান আলি সান্দ্র চিয়ারোমিন্তেকে। রত্না রানী দাস ও সান্দ্র চিয়ারো মিন্তের ইমোর মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। ইমোতে ভিডিও কলের দেখা ও কথা হলে দুজন দুজনকে পছন্দ করে। এভাবেই পাঁচ মাস ধরে ভিডিও কল ও মেসেজ চ্যাটিং এর মাধ্যমে তাদের দু’জনের সম্পর্কে গড়ে ওঠে।

গত ২৫ জুলাই রাতে বালিয়াডাঙ্গীর চাড়োল খোকোপাড়া গ্রামে মেয়ের বাড়িতে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের।

ঢাকায় আমেরিকার যুবক: প্রেমের টানে সুদূর আমেরিকার মায়ামি থেকে ঢাকায় এসেছেন খ্রিস্টান যুবক রোডোল্ফো আন্তোনিও পেজ। পরে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করেছেন মুসলিম মেয়েকে। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার গোল্ডেন চিমনি কমিউনিটি সেন্টারে মহা ধুমধামে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। মুসলিম হয়ে রোডোল্ফো আন্তোনিও পেজ নাম রেখেছেন আহমাদ ফায়সাল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি শহরের বাসিন্দা। এদিকে কনে ফৌজিয়া হাসান অনন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঢাকার রামপুরায়। ইন্টারনেট মাধ্যমে ঢাবি শিক্ষার্থী ফৌজিয়া হাসান অনন্যার সঙ্গে রোডোল্ফো আন্তোনিও পেজের সম্পর্ক তৈরি হয়।

প্রেমের টানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সৌদি নারী: ইসাক মিয়ার (২৮) নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক যুবকের প্রেমের টানে গত ২৯ জুলাই রাতে বাংলাদেশে ছুটে আসেন হালিমা (৩৬) নামের এক সৌদি নারী। ইসাক ২০১৭ সালে সৌদির জিজান শহরের বোফিয়া নামের একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতেন। সেখানে কাজ করার সময় হালিমার সঙ্গে তার পরিচয় ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। হালিমার ২ ভাই পুলিশে কর্মরত। তিনি তার পরিবারের সম্মতিতে বাংলাদেশে আসেন।

প্রেমিকাকে দেখতে বরিশাল এসে ‘মারধরের শিকার’ তামিলনাড়ুর ড্যান্সার: ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশের এসে মারধরের শিকার হয়েছেন এক যুবক। থাকতে হয়েছে বরিশালে এয়ারপোর্ট পুলিশের কাছেও। প্রেমকান্তের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ড্যান্স দেখেই মুগ্ধ হয়ে প্রেমে মজে যায় বরগুনার তালতলি উপজেলার এক কিশোরী। তার ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট করতে থাকে সেই কিশোরী। একপর্যায়ে ফেসবুকে পরিচয়। ভাবের আদান-প্রদান। এরপর ৩ বছর জমিয়ে প্রেম।

নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা প্রেমকান্ত বাংলাদেশ আসলে গত ২৪ জুলাই বরিশালের একটি রেস্টুরেন্টে দুজনের দেখা হয়। দেখা হওয়ার একদিন পর প্রেমকান্ত জানতে পারেন, তার অজান্তেই আরেক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তার প্রেমিকার। তারপরও প্রেমকান্তের বিশ্বাস দেখা হলে হয়তো আবারও তার জীবনে ফিরে আসবে তার প্রেমিকা।

তবে শেষমেষ প্রেমিকার সঙ্গে দেখা না করেই ভারতে ফিরতে হয় ওই যুবককে।

অস্ট্রিয়ার যুবক দিনাজপুরে: গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন অ্যাড্রিয়ান বারিসো নিরা নামের ওই অস্ট্রিয়ান যুবক। এরপর ছুটে যান উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। গত ৯ আগস্ট রাতে দিনাজপুর শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে প্রেমিকা নুসরাত জাহান রুম্পাকে বিয়ে করেন তিনি। রুম্পা দিনাজপুর শহরের উপশহর ৫ নম্বর ব্লকের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। আমেরিকায় রুম্পা ও অ্যাড্রিয়ানের আত্মীয়র বাসার পাশাপাশি। ২০১৯ সালে সেখানে তাদের পরিচয় হয়। এরপর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কথা হয়। ২০২০ সালে তারা একে অপরকে বিয়ে করতে সম্মত হন। কিন্তু করোনাভাইরাসের তা আর সম্ভব হয়নি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমায় গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশে এসে পৌঁছান অ্যাড্রিয়ান।

সুনামগঞ্জে ভারতীয় তরুণী: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার আব্দুস সাত্তার পাঁচ বছর আগে একটি মামলায় আসামি হলে পালিয়ে যান ভারতের আসামে। সেখানেই তার পরিচয় হয় মঞ্জুরা বেগমের সঙ্গে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। বছরখানেক পরে সাত্তার চলে আসেন বাংলাদেশে। এরপর তিনি বাহরাইন চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে মোবাইলের মধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাহরাইন থেকে ওই তরুণীকে ঠিকানা দিয়ে বাংলাদেশ চলে আসার জন্য বলেন আব্দুস সাত্তার। ওইদিন সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশে চলে আসেন ওই ভারতীয় তরুণী। সাত্তারের ছোট ভাই ইমরান দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে তরুণীকে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরে মঞ্জুরা বেগমের সম্মতিক্রমে মোবাইলের মাধ্যমে বাহরাইনে অবস্থানরত সাত্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

মিসরীয় তরুণী ডালিয়া সেনবাগের পুত্রবধূ: ভালোবেসে বাংলাদেশি যুবক গোলাম সারোয়ার বাবুকে (২৬) বিয়ে করেন মিসরীয় তরুণী ডালিয়া (২৬)। গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই তরুণী স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসেন নোয়াখালীর সেনবাগে তার শ্বশুরবাড়িতে। ২০১২ সালে জীবিকার সন্ধানে তিনি মিসরে যান। সেখানে তিনি একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। মিসরে তিনি ডালিয়াদের বাসার পাশেই থাকতেন। ডালিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। এ কারণে ডালিয়াদের বাসায় যাতায়াত ছিল তার। এক সময় বাবু মিসরীয় তরুণী ডালিয়াকে তার ভালো লাগার বিষয়টি জানান। এতে ডালিয়া সায় দিলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালের দিকে ডালিয়ার পরিবারের কাছে বাবু বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই পরিবারের কেউই বিয়েতে রাজি হননি। পরে ডালিয়া অনেক কান্নাকাটি করে তার মা-বাবাকে রাজি করান। ২০২০ সালে ওই দেশের আইন কানুন মেনে পারিবারিকভাবেই মিসরে বাবু আর ডালিয়ার বিয়ে হয়।

ইতালির তরুণী কক্সবাজারে: অনার্স সম্পন্ন করে ইতালিতে চলে যান কক্সবাজারের রামুর রুনেক্স বড়ুয়া (২৮)। সেখানে রুবের টার (২৩) সঙ্গে একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় প্রেমের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। গত ৯ নভেম্বর সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ওই তরুণী বাংলাদেশে আসেন।

শরীয়তপুরে তাইওয়ানের তরুণী: শরীয়তপুরের রমজান ছৈয়াল (৩৪) মাধ্যমিক পাশ করে মালদ্বীপ যান। সেখানে তিনি ও তাইওয়ানের লিইউ হুই (৩১) একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর জেরেই গত ২১ নভেম্বর বাবা-মা ও ভাইকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ওই তরুণী। ওই দিনই ঢাকার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন লিইউ হুই। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে নিনা ছৈয়াল। গত ২৩ নভেম্বর গায়েহলুদের পর ২৪ নভেম্বর দুপুরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সাইপ্রাসে প্রেম, লক্ষ্মীপুরে এসে বিয়ের পিঁড়িতে নেপালি তরুণী: সাইপ্রাসের একটি কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্মীপুরের রাসেলের সঙ্গে পরিচয় হয় নেপালি তরুণী জ্যোতির। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্ককে নাম দিতে দুজনেই সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম। রাসেল মুসলিম, জ্যোতি হিন্দু হওয়ায় দুজনের বিয়ে নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। তবে জ্যোতি ভালোবাসার জন্য ত্যাগ করেছেন নিজের ধর্ম। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নিজের নামও পাল্টে নিয়েছেন। এখন তার নাম খাদিজা বেগম। গত ২৩ নভেম্বর পরিবার ছেড়ে নেপাল থেকে বাংলাদেশে আসেন জ্যোতি। ঢাকায় পা রেখেই ধর্ম পরিবর্তন করেন তিনি। তারপর আদালতের মাধ্যমে দালিলিক কার্যক্রম শেষে বিয়ে করেন তারা। নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ের কাবিননামাও রেজিস্ট্রি করেন তারা। তারপর গত ২০ ডিসেম্বর স্ত্রী খাদিজাকে নিয়ে নিজ গ্রামে ফেরেন রাসেল। গত ২৬ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে তাদের গায়ে হলুদ হয়। ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তাদের।

তুর্কি তরুণী ময়মনসিংহে: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার হুমায়ুন কবির ২০১০ সালে তুরস্কের আনকারা শহরের হাজেত্তেপে ইউনিভার্সিটিতে মেডিসিন বিভাগে পড়াশোনা করতে যান। এরপর ২০১৮ সালে আনাতোলিয়া শহরের লাইফ হসপিটালে চাকরির সুবাদে হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক আয়েশা ওজতেকিনের সঙ্গে পরিচয়। সেই পরিচয় থেকে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে আয়েশার বাবা রাজি ছিলেন না এই সম্পর্কে। পরে তুরস্ক থেকে স্বদেশ ছেড়ে ময়মনসিংহে হুমায়ুনের বাড়িতে চলে আসেন আয়েশা। গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরে বিয়ে করেন তারা।

বাংলাদেশিদের প্রেমে পড়ে বিদেশিদের দেশত্যাগের বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহমিদা আক্তার বলেন, প্রথমত প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে ভিনদেশে যোগাযোগ করাটা সহজ হচ্ছে। আর উন্নত দেশের বাসিন্দারা কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হয়ে থাকে। ফলে তারা ভিন্নমাত্রা আনার জন্য এটা করে থাকতে পারেন। আমাদের দেশে যেমন ভিনদেশে বিয়ে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ঠিক বৃহৎ পরিসরে না হলেও তার পরিচিত মহলেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ