দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ মহামায়া। পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি ভরা এ কৃত্রিম লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকেরা। দেশের দূর-দুরান্ত থেকে দলবেধে এসে ভিড় করছেন ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লেকটিতে। এর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লেক। পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনা-এর এ লেকের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও দ্বিগুণ।
জানা গেছে, উপজেলার দুর্গপুর ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড মহামায়া সেচ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের উপর স্লুইচ গেট স্থাপন করে। তৎকালীন সড়ক ও জনপথের মহাসড়কের অধিগ্রহণের অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ অংশে স্লুইচ গেট অপরেটিংয়ের জন্য সেখানে সড়ক নির্মাণ করে পাউবো। দ্বিতীয় সেচ ক্ষুদ্রাকার প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত এ প্রকল্প ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি শুধু পর্যটন স্পট নয়, এই লেকে সংরক্ষণ করা পানি চাষাবাদের আওয়তায় এসেছে মিরসরাই উপজেলার কয়েকহাজার একর জমি। অন্যদিকে পর্যটন শিল্প বিকাশে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। মহামায়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
মহামায়ায় যা দেখা যাবে চারিদিকে সবুজের সমরোহ। বাঁধের ধারে অপেক্ষমান সারি সারি ডিঙি নৌকো আর ইঞ্জিনচালিত বোট। মন চাইলে বোটে করে লতাপাতায় ঘেরা দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গপথের মতো প্রকৃতির শোভা দেখার সুযোগ যা কোনো পর্যটকই হাতছাড়া করতে চাইবেন না। আছে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকার সুযোগ। আছে রোদ্দুর ওঠা অতুলনীয় সুন্দর একটি সকাল প্রকৃতির সাথে, পাখপাখালির কিচিরমিচির, পাতাদের ঝুমঝুমির মধ্যে কাটানোর সুযোগ। আছে এই বিস্তীর্ণ লেকের পাশে বসে রাতে গান-আড্ডা শেষে বারবিকিউ খাওয়ার ডবল অপরচুনিটি। আছে সুউচ্চ পাহাড়ের কোলে বসে প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা দেখার যুযোগ। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধের ধারে অপেক্ষমান সারি সারি ডিঙি নৌকো আর ইঞ্জিনচালিত বোট।
যেভাবে যাবেন দেশের যেকোন স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ঠাকুরদীঘি বাজার এলাকায় নামতে হবে। নেমেই দেখবেন স্পটের নাম লেখা সাইনবোর্ড। সেখান থেকে সিএনজি আটোরিকশা যোগে স্পটের একদম গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন অথবা আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন স্পটের গেটে। গেটে যাওয়ার আগে আপনি পেয়ে যাবেন রেলপথ। আপনার ভাগ্য ভালো হলে রেল আসার সুন্দর মুহূর্ত দেখতে পাবেন। এরপর রেলপথ পেরিয়ে গেটে এলে একটি টিকিট কাউন্টার দেখতে পাবেন। সেখান থেকে টিকিট নিতে হবে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। জনপ্রতি গুনতে হবে ৩০ টাকা টিকিটের মূল্য। এরপর গেটে থাকা অন্য একজন লোকের কাছে টিকিটটি জমা দিয়েই আপনি প্রবেশ করতে পারবেন আপনার বহুল কাক্সিক্ষত এই অপরূপ সুন্দর পর্যটন স্পটে প্রবেশ করার পর খানিকটা হাঁটতে হবে আপনাকে। সে সময় রাস্ত দু’পাশে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে ঝাউগাছের সারি, অভিবাদন জানাবে হরেক রকমের ফুলের দল। হাঁটা শেষ এখন আপনি পৌঁছে গেলেন লেকের সামনে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিন। আপনার বামে পাহাড়, ডানে পাহাড় সামনে তাকালে সুবিশাল বিশাল লেক।
চাইলে মহামায়াতে ক্যাম্পিংও করতে পারবেন তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে দু-তিন দিন আগে ক্যাম্পিং করার বিষয়টি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কনফার্ম করতে হবে। সব মিলিয়ে আপনি যদি মহামায়া লেকে ঘরতে আসেন তাহলে জিতে যাবেন। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস এখানে পচন্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। এছাড়াও মহামায়া লেক প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষা সফর, পুনর্মিলনী, ঈদ ট্যুর ইত্যাদি এখানে সারা বছরই চলে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের বিচরণ দেখা যায় এই পর্যটন স্পটে। আপনিও আসতে পারেন, দেখে যেতে পারেন মহামায়া লেক আর আপনি যদি একবার ঘুরে যান তাহলে সত্যিই মহামায়া লেকের মায়ায় পড়ে যাবেন।
জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে মহামায়া প্রকল্প ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ। ইজারা পেয়েছেন এ.আর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ