ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

কম্বাইন্ড হারভেস্টারে কৃষকের সাশ্রয় ৭০ কোটি

প্রকাশনার সময়: ১০ অক্টোবর ২০২২, ১৭:০৬

চুয়াডাঙ্গায় কৃষি কাজে ভর্তুকি মূল্যে দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। চলতি রোপা আউশ মৌসুমে হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান কেটে কৃষকের শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ প্রায় ৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩৮ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে রোপা আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ৬৪১ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮ হাজার ৬৪৮ ও জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ হয়।

এ মৌসুমে ৩০ হাজার ৯৫৯ হেক্টর জমির ধান কৃষকরা কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে কেটেছে, যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৪টি উপজেলায় ভর্তুকি মূল্যে এ পর্যন্ত জাপানী ইয়ানমার ২৩টি ও কুবোতা ২৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ যন্ত্রগুলো সদর উপজেলায় ১৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৭টি বিতরণ করা হয়। যার সুবিধা পাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জমি আবাদ যোগ্য করে তুলতে, মাড়াই ও সংরক্ষণ কাজের প্রতিটি ধাপেই ব্যবহার হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৯০ শতাংশ জমি চাষ, ৮০ শতাংশ সেচ কাজ, ৭০ শতাংশ ফসল উৎপাদন ও মাড়াই, ২ শতাংশ ফসল কাটা ও রোপণের ১ শতাংশ ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। প্রকার ভেদে যন্ত্রের চাহিদা আরও বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহি কেষ্টপুর গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম ইসলাম বলেন, গত দু’বছর আগে বৃষ্টির কারণে আড়াই বিঘা জমির ধান কাটতে না পারায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এই যন্ত্রগুলো আসায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। অর্ধেক খরচে অর্থাৎ ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা, কাটা অংশ বাঁধা ও মাড়াই করে বস্তায় ভরে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি। আগে লোকজন দিয়ে ধান কাটতে বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন অন্তত খরচের হাত থেকে আমরা বেঁচেছি। তাছাড়া বৃষ্টি হলেও ধান কাটা নিয়ে আমাদের আর ভাবনা নেই। জমিতে যত বৃষ্টির পানিই থাকনা কেন, এ যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ধান কাটা যাচ্ছে।

একই উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, কম সময়ে অল্প খরচে আমরা ধান কাটতে পেরেছি। বৃষ্টির পানির মধ্যে ধান কাটার জন্য কোন লোকজন পাওয়া যায় না। বৃষ্টির কারণে খরচ বেশি লাগে। এই যন্ত্র আসাতে এক ফুট পানির মধ্যেও ধান কেটে জমি থেকে একবারে আমরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। আমার ৪ বিঘা জমির ধান লোকজন দিয়ে কাটলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এই যন্ত্রের কারণে ৪ বিঘা জমির ধান ১০ হাজার টাকা খরচে কাটতে পেরেছি।

একই গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, এ যন্ত্র দিয়ে ১০ বিঘা জমির ধান কাটিয়েছি। এই হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের জন্য লাভজনক। লোকজন দিয়ে ধান কাটতে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হতো। কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কেটে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ধান ঘরে তুলতে পেরেছি।

তিনি আরো জানান, একদিন পরে রোদে শুকিয়ে ধান হাটে বিক্রি করেছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান রাজু বলেন, চেয়ারম্যান হলেও আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। পরিবারের শত বিঘা জমি চাষ করছি। নিজের এলাকায় কৃষকদের সহযোগিতার জন্য কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকি মূল্যে যে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিন নিয়েছি, তা আমার এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের কথা চিন্তা করে এবং আমার চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য। এর মধ্যেমে আমি যেমন উপকৃত হচ্ছি, তেমনি আমার এলাকার প্রান্তিক কৃষদের অল্প সময়ে ধান ঘরে তোলার জন্য সুবিধা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৬০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটার কাজে সহযোগিতা করছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সঠিক সময়ে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারে না। কিন্তু সেটা আর হচ্ছেনা। সঠিক সময়েই কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান জমি থেকে নিয়ে যেতে পারছে। সব মিলিয়ে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেটা যুগোপযোগী।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কম্বাইন্ড হারভেস্টার মালিক সমিতির সভাপতি নূর আলম লিটন জানান, কম্বাইন্ড হারভেস্টারের কারণে কৃষকরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, আমরাও তেমনি কৃষকের ধান কেটে দিয়ে লাভবান হচ্ছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, কম্বাইন্ড হারভেস্টারের বড় সুবিধা মাত্র ১ ঘন্টায় ৩ বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াই করে বস্তা বন্দী করে ঘরে তুলে দিতে পারা। বৈরি আবহাওয়ায় এই যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা সম্ভব। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ৮০ শতাংশ ধান কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করে কাটা হয়েছে। রোপা আউশ মৌসুমে হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান কেটে কৃষকের প্রায় ৭০ কোটি টাকার শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। কৃষকরা যেমন অল্প খরচে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে তেমনি হারভেস্টের মালিকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই মেশিন কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই কিনতে পারবে। ইউপি চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষক সংঘের কৃষকসহ যে কেউ কিনতে পারবে। মেশিন যেই কিনুক তার সুফল পাবে সাধারণ কৃষক।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেষ্ট ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে একজন কৃষক ১৪ লাখ টাকায় নিতে পারবেন। এবার কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে মাঠে মাঠে কৃষকের আউশ ধান কাটা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ