ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

রাজশাহী থেকে মাছ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

প্রকাশনার সময়: ২৩ জুলাই ২০২২, ১৭:৩২

মাছ চাষ লাভজনক পেশা। ফলে রাজশাহী জেলায় প্রতিনিয়ত প্রশাসনের বিভিন্ন বাঁধা উপেক্ষা করে কৃষি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেড়েছে মাছ চাষ। ফলে বিল্পব ঘটেছে মাছ চাষে। রাজশাহী জেলার তাজা মাছ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা থেকে প্রতিদিন কমবেশি দেড় শতাধিক ট্রাকে করে প্রায় দুই কোটি টাকা মাছ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই হিসেবে শুধুমাত্র রাজশাহী জেলা থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৭ শত ৩০ কোটি টাকার মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেচাকেনা চলছে। ফলে এই খাতে বেড়েছে কর্মসংস্থান। মাছ চাষে সমৃদ্ধ হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ।

রাজশাহী বিভাগীয় মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাজা মাছ সরবরাহের প্রথম উদ্যোগ রাজশাহী থেকেই নেয়া হয়। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা ও তানোর উপজেলা এবং নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি মাছ ঢাকায় যায়। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ শতাধিক ট্রাক মাছ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ৭০০ থেকে ৯০০ কেজি মাছ থাকে। বর্তমানে জেলার ১২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মৎস খাতে।

জেলার মৎস অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় বর্তমানে পুকুর দিঘি, বারোপিট, নদী, খাল, বিল, প্লাবনভূমি ও ধানক্ষেতসহ সর্বমোট ৪৫ হাজার ৮১৩.৫০ হেক্টর জমির পানিতে প্রতিবছর ৮৩ হাজার ৪৯২.৫৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তবে গত ৫ বছরে জেলায় নতুন করে আরো কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা মৎস্য অফিসের অন্তর্ভুক্ত নয়। জেলায় নতুন উদ্যোক্তারা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে।

তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় সবমিলিয়ে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবীদের মাঝে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার বেকার যুবকের।

চাষী ও ব্যবসায়ীরা আরো জানান, তাজা মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহের জন্য প্রথমে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে পানি দিয়ে তাজা মাছগুলো ছাড়া হয়। সারা রাস্তায় পলিথিনে অক্সিজেন বাড়াতে একজন পা দিয়ে পানি নাড়াতে থাকে। আর ট্রাকের পানি পরিস্কার রাখতে পথে একবার পানি পাল্টাতে হয়। এজন্য সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরের কয়েক জায়গায় রাস্তার পাশে পানির মেশিনের ব্যবস্থা করা আছে। মৃত মাছের চেয়ে তাজা মাছের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় এখন শুধু মৎস্য ব্যবসায়ীরাই নয়, অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পদ্ধতিতে তাজা মাছ সরবরাহ করছে।

পবা উপজেলার মৎস্য বাবসায়ী সাদিকুল ইসলাম জানান, তিনি বিগত ১৩ বছরে এখন প্রায় ১৮০ বিঘার জমির পুকুরে মাছ চাষ করছেন। তিনি জানান, মাছ চাষ লাভজনক পেশা। তবে তাজা মাছ আরো বেশি লাভজনক। মৃত মাছ যেখানে ১০০ টাকা কেজি সেখানে তাজা মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। তাই এখন প্রায় সকল মাছ তাজা অবস্থায় ঢাকায় পাঠান তিনি।

এদিকে, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহী জেলায় এক সপ্তাহ ব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মৎস অধিদপ্তর। ২৩ শে জুলাই হইতে ২৯ শে জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচির চলবে। শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে জাতীয় মৎস্য দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল তার বক্তব্য শুরুতে বলেন, নিরাপদ মাছে বলবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সপ্তাহ ব্যাপী নানান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজশাহী জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাতীয় মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনের শহীদ এএইচ এম কামারুজ্জামন কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে র‌্যালি, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আলোচনা সভা এবং জেলা প্রশাসক এর বাংলো সরকারি জলাশয়সহ বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের পোন অবমুক্তকরণ প্রভূতি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ