ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

তিস্তার দুর্গম চরে গম ও ভুট্টার চাষ

প্রকাশনার সময়: ২৮ মার্চ ২০২৪, ২১:৩৯

তিস্তার দুর্গম চরে এবার ব্যাপকভাবে গম ও ভুট্টা চাষ হয়েছে। শত বছরের ইতিহাসে এবারে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরগুলোতে পলিমাটির একহাঁটু কাদার আস্তর পড়েছে। যা গম ও ভুট্টাসহ নানা ফসল চাষের উপযোগিতা সৃষ্টি করেছে। এই কাদামাটির আস্তরনের কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজের উজান মুখের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তা নদীর নাব্যতা শুষ্কমৌসুমে শতভাগ হারিয়ে ফেলেছে।

তিস্তা নদীর ব্যারেজর উজান হতে প্রায় ৮৫ কিলোমিটারে কোথাও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নেই। ফাল্গুন মাসে তিস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য খাল। সেই খালগুলো দিয়ে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার করছে। এমন কি তিস্তা নদীর বুক চিঁড়ে হাঁটু পানিতে ছুটে চলতে দেখা গেছে ঘোড়ার গাড়ি।

রংপুর বিভাগের আট জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে তামাক চাষে নিরুসাহিত করতে গম ও ভুট্টা চাষাবাদ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল কৃষি বিভাগ। বাস্তবে তার প্রতিফলন মাঠপর্যায়ে দেখা যায়নি। ব্যাপক তামাক চাষ হয়েছে। এমন কি তিস্তার চরেও এবার পলিপড়ায় তামাক চাষ হয়েছে। তারপরেও তিস্তার চরের কৃষককে গম ও ভুট্টা চাষ করতে দেখা গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগে তিস্তা চরের জন্য পৃথক কৃষির কোনো হিসেব নেই। কারণ তিস্তা নদী রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে।

প্রতিটি জেলায় তিস্তা নদীর বিশাল বিশাল চর রয়েছে। সকল চরে গম ও ভুট্টা সহ প্রায় সকল ধরনের ফসল চাষ হয়েছে। এবছর লালমনিরহাট জেলায় গম চাষ হয়েছে মাত্র ৯৩৫ হেক্টর ফসলের জমিতে। তার প্রায় ৫০ ভাগ হয়েছে তিস্তার চরে। এসব জমি হতে প্রায় তিন হাজার ৯১০ মে.টন গম উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এরমধ্যে গম ফসলের মাঠ হতে উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলবে আরো ১০দিন পর্যন্ত। জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৯১০ মে.টন জমিতে। ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৯ হাজার একশত মে.টন। চাষাবাদের উপকরণ বীজ, জৈবসার, কিটনাশক, সোলার প্যানেল, সৌরবিদ্যুত ছিল সহজলভ্য। তাই কৃষক চরে কৃষিকাজ করতে উৎসাহিত হয়েছে। এবারে চরের ফসলের মূল্যও পেয়েছে কৃষক।

ভারতের জলবিদ্যুত কেন্দ্রের বাঁধভেঙে তিস্তায় পলি পড়ে ফসল ফলালেও তিস্তা পাড়ের কৃষক খুশি হতে পারেনি। তারা এটাকে অভিশাপ হিসেবে দেখছে। কারণ তিস্তায় পলি পড়ায় তিস্তা এখন সম্পূর্ণ মৃত একটি নদী। হারিয়ে ফেলেছে জীববৈচিত্রতা। নদী কোনো মাছ নেই। নেই কোনো জলজপ্রাণি। পলিপড়ে তিস্তা ব্যারেজের প্রবেশ মুখ থেকে উজানে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার নদী ভাটির চেয়ে তিন-চার ফিট উচু হয়ে গেছে। এতে তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষকে বর্ষা মৌসুমে ভুগতে হবে। ভারতীয় পানির ঢলে তিস্তা নদীর দুই কূল উপচে পানি লোকালয়ে পৌঁছে সৃষ্টি হবে বন্যা।

২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবরের ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের প্রায় একশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ে জরিপ করে এই ক্ষয়ক্ষতি নিধারণ করেছে। তিস্তার চরের নীলফামারীতে ভারত হতে ভেসে এসেছিল গোলাবারুদ ও বিএসএফ সদস্যের মৃতদেহ। এদিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় তিস্তা নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর হতে জানা গেছে, তিস্তা নদী কোথাও কোথাও গতিপথ পরিবর্তন করেছে। যার প্রধান কারণ অবৈধ বালু উত্তোলন। এবারের বন্যায় ভারতীয় ঢলে ঘোলাটে কাদাযুক্ত পানি এসেছিল। সেই পলিযুক্ত পানি আস্তরণ প্রায় দুই-তিন ফিট করে ছিল। তিস্তা ব্যারেজের উজান মুখে পলি জমে নদীর উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর কোথাও এখন নাব্যতা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার জানান, তিস্তা এক সময় ছিল খরস্রোতা নদী। এখন তিস্তার সেই রূপ নেই। তিস্তা শুষ্কমৌসুমে মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। হারিয়ে গেছে তিস্তা নদীর জীববৈচিত্রতা। অথচ এই তিস্তাকে উত্তরাঞ্চলের প্রাণ বলা হয়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ