ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রামুর গর্জনিয়া বাজার ইজারা নিয়ে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’

প্রকাশনার সময়: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৩:২৩

সীমান্ত দিয়ে অগণিত গরু-মহিষ অনুপ্রবেশের কারণে বছরজুড়ে আলোচনার শীর্ষে থাকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজার। মিয়ানমার সীমান্তের নিকটতম এ বাজারটি এখন কৌশলগতভাবে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। প্রতিবছর সরকার প্রায় ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা বাজারটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এবং ইজারাপ্রাপ্ত সিন্ডিকেট সরকারের ১ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব নিয়ে নয়ছয় করে নিজেদের পকেট ভারী করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বাজার গতবছরের চেয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা কমে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ সত্তর হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে আলোচিত খরুলিয়ার রহিম উদ্দিনকে। ইয়াবা সংশ্লিষ্টতায় বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়ে আলোচিত হয়েছেন এই রহিম উদ্দিন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদার বুলবুল আক্তারকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জিম্মি করে দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার বুলবুল আক্তার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু গর্জনিয়া বাজার নয়, রামু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও নিরুপম মজুমদারের যোগসাজশে আরও ১৩টি বাজারের ৭টি ইজারা পেয়েছেন রহিম উদ্দিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে এবং ইজারাদারকে লাভবান করার অসৎ অভিপ্রায়ে পুকুর চুরির মত ঘটনা, পুরো জেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ইজারার পরদিন দুর্নীতির এ বিষয়ে ডিসির সাথে কথা হলে তাৎক্ষণিক তদন্তে ডিসি সত্যতা পেলে বদলি করা হয় রামু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও নিরুপম মজুমদারকে। তবে ইজারা প্রক্রিয়ার প্রধান ইউএনওকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনও বাতিল করা হয়নি বাজার ইজারা।

জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া অভিযোগে সর্বোচ্চ দরদাতা বুলবুল আকতার বলেন, ‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি হাট বাজার ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৬ মার্চ রামু উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় থেকে ১৪৩১ বাংলা খ্রিষ্টাব্দের দরপত্র কেনেন বুলবুল আক্তার। বিজ্ঞপ্তির শর্তানুসারে দরপত্র পূরণ করে উল্লেখিত দরের ৩০ ভাগ অর্থাৎ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পে-অর্ডার করেন। ১১ মার্চ দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন যথাসময়ে জমা দেওয়ার শত চেষ্টা করেও টেন্ডার সিন্ডিকেটের কবলে জমা দিতে পারেননি। এরপর দ্বিতীয় ধাপে কয়েকজন লোক নিয়ে জমা দিতে গেলেও টেন্ডার সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের ভয় দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে এবং দরপত্র বাক্স না খোলা পর্যন্ত তাদেরকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জিম্মি করে রাখেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত বছর গর্জনিয়া হাট বাজারের ইজারা মূল্য ছিল ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে বুলবুল আক্তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দর দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে টেন্ডার সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকে জিম্মি করে রেখে টেন্ডার জমা দিতে বাধা প্রদান করেন। এবং পরবর্তীতে কারসাজির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে টেন্ডার হাতিয়ে নেন আলোচিত রহিম উদ্দিন। যদিও দরপত্র বিক্রি হয়েছিল ১৪টির অধিক। অথচ দরপত্র জমা প্রদান করা হয় শুধুমাত্র চারটি। দরপত্র জমাদানকারীরা সিন্ডিকেট করে শুধু মাত্র ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেন।

বুলবুল আক্তার বলেন,`আমি ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টেন্ডার সিন্ডিকেট ও উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের কারণে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় টেন্ডার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে এই ইজারা বাতিল করে সরকারের রাজস্ব খাত বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে বুলবুল আক্তারকে টেন্ডার দেওয়ার দাবি জানান।’

এদিকে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও নিরুপম মজুমদার দুই কোটি টাকার বেশি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রহিম সিন্ডিকেটের হাতে ৭টি বাজার তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে অন্তত ৫ কোটি টাকা সরকার রাজস্ব হারিয়েছে। ইউএনও’র এমন কাণ্ডে ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে।

সচেতন মহল বলছেন, আমরা মানুষের মুখে মুখে শুনতে পাচ্ছি রহিমকে বাজার ইজারা দিতে উপজেলা প্রশাসন কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। হাটের ইজারা নিয়ে ইউএনও ও রহিমের মধ্যকার দ্বন্দ এখন ওপেন সিক্রেট। সরকারের লস করে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটেছেন রহিম আর নিরুপম।

তবে রহিম সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নিরুপম মজুমদার বলেন, ‘নিয়ম মেনেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। ডাকের মাধ্যমে যে ব্যক্তি বাজার পেয়েছে তাকে ভাগ্য সহায়তা করেছে। এতে আমার কোন হাত নেই।’

বুলবুল আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটি ডিসি স্যারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত করছে। তারা পরে সেটি নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এতে আমার কিছুই করার নেই।’

এ বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মুহাম্মাদ শাহীন ইমরান বলেন, `বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে বাজারটির ইজারার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ