ঢাকা, রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ৯ জিলহজ ১৪৪৫

তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে...

প্রকাশনার সময়: ২২ মে ২০২৪, ২১:১৯

একটিবার চিন্তা করুন তো, আজ যদি আপনার জীবনের শেষ দিন তথা মৃত্যু হয়ে যায় তবে কি আপনি ঈমান আমলের দিক থেকে এমন অবস্থায় আছেন যে অবস্থা আপনার কবরের ঘুটঘুটে অন্ধকার জগতকে আলোকিত করবে? আপনি কি এমন অবস্থায় আছেন যে অবস্থা আপনাকে কবরের ভয়ঙ্কর আজাব থেকে রক্ষা করবে? আপনি কি এমন অবস্থায় আছেন যে অবস্থা আপনাকে জাহান্নামি হওয়া থেকে বাঁচাবে? যদি উত্তর ‘না’ হয় তবে কীভাবে এত নিশ্চিন্তে এত ভয়ডরহীনভাবে এত অবাধ্যতায় দিনগুলো কাটাতে পারছেন? এগুলোর উত্তর ‘না’ হওয়াটা আপনার জন্য কতটা বিপদ তা কি আপনি ভাবছেন?

শুধু দুনিয়ার নয়, নিজের স্থায়ী জীবন আখিরাতের ক্যারিয়ার নিয়েও ভাবতে হবে। বরং স্থায়ী বিবেচনায় এই ক্যারিয়ার বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। এই ক্যারিয়ার সফল করার জন্য কোনো অবস্থাতেই নামাজটাকে ছাড়বেন না। যে কোনো মূল্যে ফজর থেকে শুরু করে একেবারে এশা পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো পড়বেনই পড়বেন। আপনি বুঝতেই পারছেন না, নামাজ না পড়ার কারণে, গুনাহ থেকে বেঁচে না থাকার কারণে, হারাম বর্জন না করার কারণে আপনার জীবন থেকে বরকত উঠে যাচ্ছে, অন্তরে শান্তি পাচ্ছেন না। অন্তরটা অশান্তিতে হাহাকার করছে। জীবনটাও বিতৃষ্ণা লাগছে।

হে আমার প্রিয় ভাই ও বোন, আপনার জীবনে যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন আগে সেই আল্লাহকে সময় দিতে হবে যে আল্লাহ আপনাকে পশুপাখি না বানিয়ে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, যে আল্লাহ প্রতিদিন মারা যাওয়ার মানুষের ভিড়ে আপনাকে জীবিত রেখেছেন, যে আল্লাহ হাজারো অসুস্থ মানুষের আর্তনাদের মিছিলে আপনাকে সুস্থ রেখেছেন, সর্বোপরি আপনাকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অগণিত নিয়ামতের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছেন। ফেসবুক, ইউটিউব, বন্ধুবান্ধব, অমুক-তমুক নেতা আপনার সময় পাবে অথচ আপনার জন্য এত কিছু করা আপনার রব আপনার সময় পাবেন না তা কি ইনসাফ, বলুন? তা কি কোনোভাবে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ?

আল্লাহ মানুষকে এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন আল্লাহর ইবাদত না করে, আল্লাহর অনুগত হয়ে না চলে কীভাবে আমরা তাঁর তৈরি জান্নাত পাওয়ার আশা করি? আপনি কি কাউকে কষ্ট ছাড়া পারিশ্রমিক দেবেন? নিশ্চয়ই না, তবে আপনি ইবাদত-বন্দেগির কষ্ট না করে কীভাবে জান্নাতে যাওয়ার আশা করেন?

নিজের জীবন নিয়ে একটু ভাবুন। এই জীবন হেলায়ফেলায় কাটানোর নয়। মৃত্যু এসে গেলে আর কিছু করার থাকবে না। কাজেই জীবন নামক সুযোগটাকে নষ্ট করবেন না। জীবনে এমন কিছু নেক আমল করে যাওয়ার চেষ্টা করুন যা আপনার মৃত্যুর পর আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। নেক আমলের ক্ষেত্রে দূরদর্শিতা থাকা চাই।

কত মানুষ আছে যারা সারা জীবন অর্থের পেছনে দৌড়ে বাড়ি গাড়ি আরও কত কিছু করে; কিন্তু আফসোস, আখিরাতের জন্য তারা তেমন কিছুই করে না। জীবনের পড়ন্তবেলায় যখন তারা ভাবনার টেবিলে বসে তখন ভাবে, আসলেই তো অর্থকড়ি ছাড়া এ জীবনে আমার আর কী অর্জন। আখিরাতকে গুরুত্ব না দেয়া এমন মানুষরা একসময় খালি হাতেই কবরের জগতে পাড়ি দেয়। দুনিয়াকেন্দ্রিক তাদের সব অর্জন দুনিয়ায়ই থেকে যায়, কিছুই আর যৌবনে উপেক্ষিত থাকা পরকালের জীবনে নিয়ে যাওয়া হয় না। আপনার জীবন যেন এমন হতভাগ্যের না হয় সেজন্য এখন থেকে নিজের যৌবনটাকে কাজে লাগান। যৌবনের সময়টা বড় দামি, যার মূল্য হয় না।

আপনার কবরের চলে যাওয়া যেন খালি হাতে না হয়, নিঃস্ব অবস্থায় না হয় সেজন্য নিজের ঈমান-আমলের দিকে এখনই মনোযোগী হতে হবে, নিজেকে সংশোধন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা অধিকতর গুরুত্ব বোঝাতে ১১টি বড় বড় সৃষ্টির শপথ করে বলেছেন, ‘যে নিজেকে সংশোধন করে সেই সফল। পক্ষান্তরে, যে নিজেকে পাপে মগ্ন রাখে সেই ব্যর্থ।’ (সুরা আশ শামস: ০৯-১০)

অতএব, আমরা অমুক তমুকের পিছে না লেগে একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করে নিজেদের সংশোধন হওয়ার ব্যাপারে তৎপর হই। আর আল্লাহর মানদণ্ডে সফল হওয়ার চেষ্টা করি। জীবনটা যেন সেই প্রবাদের মতো হয়। ‘এমন জীবন তুমি করো হে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।’

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ